এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > পুলিশের কার্যকলাপের সমালোচনা করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন খোদ তৃণমূল নেতা, জোর জল্পনা

পুলিশের কার্যকলাপের সমালোচনা করে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন খোদ তৃণমূল নেতা, জোর জল্পনা

রাজ্যের শাসক দলের নেতার পুলিশ বিরোধী মন্তব্য এবারে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বস্তুত, পুলিশ প্রশাসন রাজ্য সরকারের অন্যতম মূল স্তম্ভ নিয়ন্ত্রক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শাসক দলের কোনো নেতা যদি পুলিশকে নিয়ে সমালোচনায় অবতীর্ণ হন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পক্ষান্তরে নিজের দলকে অপমানিত করা হয় বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

সম্প্রতি এরকম একটি ঘটনা সামনে এসেছে। গোয়ালতোড়ের আমরাশুলি এলাকায় এক পথ দুর্ঘটনা এবং সেই দুর্ঘটনার জেরে স্থানীয় জনতার অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধকে নিয়ে করা তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য চন্দন সাহার সোশ্যাল মিডিয়ায় করা পোস্টকে কেন্দ্র করে জানা যায়, দিন কয়েক আগে গোয়ালতোড়ে আমরাশুলি এলাকায় একটি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পথ অবরোধে নেমে পড়েন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা।

পরবর্তীতে পুলিশের তরফে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ তোলার চেষ্টা করা হলে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় বলে খবর। পুলিশ-জনতা লড়াইকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে কিছু জনের বিরুদ্ধে। আবার অন্যদিকে পুলিশের তরফ থেকে ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত সাত জন ব্যক্তিকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে পোস্ট করতে দেখা যায় তৃণমূলের অন্যতম নেতা চন্দন সাহাকে। চন্দনবাবু স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য। নিজের পোস্টে তিনি রীতিমতো অভিযোগ করেন, গোয়ালতোড়ে পুলিশি অত্যাচার চলছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অবিলম্বে পুলিশের এই ধরনের জনবিরোধী কাজ বন্ধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা একান্ত প্রয়োজন। না হলে আগামী দিনে গনবিদ্রোহের আশঙ্কা গোয়ালতোড়ে।” নিজের করা পোস্টে চন্দনবাবু আরও বলেন, “এমন মানুষকেও ওই ঘটনার সাথে জড়িয়ে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে, যিনি ঘটনার দিন আমলাশুলিতে উপস্থিত ছিলেন না।” উদাহরণস্বরূপ গৌতম দত্ত নামের জনৈক ব্যক্তির নাম তুলে ধরেন চন্দনবাবু।

 

স্থানীয় জনতাদের তরফ থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গেছে, গৌতম দত্ত নামে ওই ব্যক্তিকে গাড়ি ভাঙচুর সহ পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এইখানেই বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হয়ে কি করে চন্দনবাবুর মত জেলা পরিষদের সদস্য পুলিশকে কটাক্ষ করে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন!

এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি কি রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন না! কিন্তু অপরদিকে লক্ষ্য করা যায়, নিজের পোস্ট করার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সেই পোস্টটি ডিলিট করে দেন তৃণমূল নেতা। যে ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা পরিষদের সদস্য চন্দন দাস বলেন, “আমি এখন বাংলার বাইরে রয়েছি। যা জেনেছি, তাই লিখেছিলাম। পরে অনেকে ফোন করায় তা তুলে নিয়েছি।”

এদিকে চন্দনবাবুর এই ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জেলার একজন পুলিশ আধিকারিক জানান, “উনি না জেনেবুঝে পোস্ট করেছেন। সেদিন কোনো পুলিশ অত্যাচার হয়নি। দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে কোথাও লেখা নেই। আবার নিজের ফেসবুক পোস্ট করার সময় দলের অস্বস্তি অনেকটাই বাড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি ও চেয়ারম্যান দীনেশ রায়কেও সেই পোস্ট ট্যাগ করেছিলেন চন্দনবাবু। ঘটনার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা মিটে গিয়েছে। উনি ওই পোস্ট মুছে দিয়েছেন।”

আবার জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান দিনেন রায়কে একই পোস্টে ট্যাগ করেছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য চন্দন সাহা। কিন্তু এই প্রসঙ্গে দীনে বাবু বলেন, “আমি ফেসবুক করি না। চন্দনের লেখার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” তবে এরকম মুখরোচক বিষয় নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছেড়ে দিচ্ছেন না বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

উল্লেখযোগ্যভাবে গোয়ালতোড় উত্তর মন্ডলের ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি উজ্জল হাটুই কটাক্ষের সুরে বলেন, “শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরাই পুলিশের কাজের সমালোচনা করছেন। কিছু লিখে বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে।” আবার আরেকজন বিরোধী দলের সদস্য গোয়ালতোড় ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুজিত খানের মন্তব্য, তৃণমূল এখন দিশেহারা। এই পোস্ট তারই প্রতিফলন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক চন্দন সাহা কোনদিনই কোনো বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়াননি। কিন্তু সেই চন্দনবাবুর এহেন মন্তব্য রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও নিজের ফেসবুক পোস্ট তিন ঘন্টার মধ্যে ডিলিট করে দিয়েছেন চন্দনবাবু। তবুও তার ফেসবুক পোস্টে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার রেশ কতদিন থাকে! সেদিকেই নজর থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!