প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  দল ক্ষমতায় আসার পরই দ্রুত তড়িৎগতিতে তৃণমূলের সংগঠনের উত্থান ঘটতে থাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথমে যুবা এবং তারপর যুব তৃনমূলের সভাপতি করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোকে। তবে প্রথম দিকে দায়িত্ব পাওয়ার পর ধীরে ধীরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি হয়, ঠিক তেমনই দলের অনেকে দ্রুত এসে কেন তিনি এত শীর্ষ পদে বসে গেলেন, তা নিয়ে আড়ালে-আবডালে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে শুরু করেন।

পরবর্তীতে 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস খুব একটা ভালো ফল না করার পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করতে শুরু করেন একাংশ। আর এরপর থেকেই খেলা ঘুরতে শুরু করে। কার্যত সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে দলের পক্ষে কাজ করতে শুরু করে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাকে মানতে না পেরে অনেকেই তৃণমূলকে “প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি” বলে বিজেপিতে যোগদান করতে শুরু করেন।

স্বাভাবিক ভাবেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও 2021 এ যদি তৃণমূল ভালো ফলাফল করতে না পারে, তাহলে তিনি প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবেন বলে দাবি করতে শুরু করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতে তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরই নিজের রাজনৈতিক যোগ্যতা এবং ক্যারিশমা প্রমান করে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয়বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পেছনে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যথেষ্ট মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পনা রয়েছে, তা বলাই যায়।

আর এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বৃহৎ দায়িত্ব পেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তাকে। আর দায়িত্ব পাওয়ার পরেই নিজের পরিশীলিত ভাবমূর্তি এবং পরিণত রাজনীতিবিদদের পরিচয় দিয়ে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। এবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সূত্রের খবর, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে তিনি বলেন, “সাত বছর যুব তৃনমূলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তাধারাকে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছি। আমাকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক করেছে দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি এই ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞ।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেন নতুনরূপে ধরা দিয়েছেন। এতদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিরোধীদের পক্ষ থেকে যেমন তাকে কটাক্ষ করা হত, ঠিক তেমনই দলের অনেকেই এবং আড়ালে-আবডালে তাকে অহংকারী বলে আক্রমণ করতেন।

কিন্তু যত সময় গিয়েছে, ততই নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন অভিষেকবাবু। দলকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিস্তারলাভ করানোর জন্য তাকে যে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তা বলাই যায়। আর নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আরও নতুন করে পরিণত রাজনীতিবিদের পরিচয় দিয়ে দল এবং নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার চেষ্টা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শনিবার দলের সাংগঠনিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর দায়িত্ব পাওয়ার পরের দিনই দলের বর্ষীয়ান নেতাদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে সুব্রত বক্সী এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাড়িতে গিয়ে তাদের পায়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলেই তাকে আশীর্বাদ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শুভেচ্ছা দিয়েছেন। আর নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ বর্ষীয়ান নেতাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার ঘটনাতেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল, তিনি ধীরে ধীরে পরিণত রাজনীতিবিদের পরিচয় দিচ্ছেন।

আর এবার প্রথম সাংবাদিক বৈঠক থেকে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের পাশাপাশি দল এবং নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজের নতুন কাজ শুরু করে দেওয়ার বার্তা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তার এই বিস্তৃতি তার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাকে কতটা সাফল্যমন্ডিত করে, তার নেতৃত্বে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কতটা ছাপ রাখতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।