এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > প্রাক্তন মন্ত্রীকে এখনও ধরতে না পারার ‘অপরাধে’ বরখাস্ত একের পর এক পুলিশ আধিকারিক!

প্রাক্তন মন্ত্রীকে এখনও ধরতে না পারার ‘অপরাধে’ বরখাস্ত একের পর এক পুলিশ আধিকারিক!


সারা দেশজুড়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন প্রাক্তন নেতারা। প্রমাণসমেত তাঁরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন আইনের হাতে। এখনো পর্যন্ত প্রচুর হেভিওয়েট নেতারা আইনের জালে জড়িয়েছেন। এ রাজ্যেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের নাম একের পর এক তদন্তের সূত্র ধরে উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে।

একইভাবে দুর্নীতির অভিযোগ আরেক রাজ্য ত্রিপুরাতেও। সেখানকার বাম আমলের প্রাক্তন মন্ত্রীরা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। বর্তমানে ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী বাদল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সূত্রে তাঁকে ধরার জন্য তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত তিনি অধরা। আর তাই নিয়ে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন বর্ষণ করেছেন প্রাক্তন বাম শাসকদল।

এখনো পর্যন্ত ত্রিপুরার সিপিএম নেতা বাদল চৌধুরী দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও পুলিশের হাতে এখনো অধরা। আর এই অপরাধে ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল থেকে এসপি পর্যন্ত সকলকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। বরখাস্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত 9। শুধু তাই নয় ডিআইজি থেকে ডিএসপি, সবাইকে একে একে বদলি করা হচ্ছে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে কংগ্রেস দল কটাক্ষ করে জানিয়েছে, মহম্মদ বিন তুঘলক বেঁচে থাকলে তিনিও বিজেপির এই তুঘলকি কাণ্ডে রীতিমতো লজ্জা পেতেন! ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে তল্লাশি চললেও রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বাদল চৌধুরী এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে আসেননি। পুলিশের পাশাপাশি বিজেপি কর্মীরাও এই তল্লাসি অভিযানে নিয়োজিত হয়েছেন।

অন্যদিকে, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানিয়েছেন, বাদল বাবুকে ধরতে না পারার জন্য বিজেপির কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি। উল্লেখ্য, ত্রিপুরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো রাজ্য বিজেপির ভারও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এর কাঁধে। এর মধ্যেই ত্রিপুরাতে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে teachers’ এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট টুর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায়।

বাদল বাবুকে ধরতে না পারার অভিযোগে বরখাস্ত করার কথা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব অস্বীকার করলেও পুলিশ কর্তাদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া কিন্তু এখনো অব্যাহত। শনিবারই বরখাস্ত হন ত্রিপুরার ডিএসপি ডিআইবি বনজ বিপ্লব দাসকে। বুধবার বাদল চৌধুরীর জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর থেকেই বাদল বাবুর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মনে করা হচ্ছে সেই অভিযোগেই বরখাস্ত হয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপার অজয় প্রতাপ সিং।

অজয় প্রতাপ সিং রুরকি আইআইটির কৃতি ছাত্র এবং আইপিএস অফিসার হিসেবেও তাঁর দক্ষতা যথেষ্ট সুপরিচিত। তাঁকে বরখাস্ত করা নিয়ে ইতিমধ্যে আইপিএস মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। খোদ ডিজিপির নেতৃত্বে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। অজিত প্রতাপ সিংয়ের জায়গায় এসেছেন মানিক দাস। আইপিএস এর বদলে প্রথা ভেঙে স্টেট ক‍্যাডারের অফিসারকে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং এই নিয়ে যথারীতি ত্রিপুরা জেলায় বিতর্ক এবং ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে, ত্রিপুরা স্টেট ক্যাডারের অফিসাররাও তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ তিন ডিআইজির পাশাপাশি ডিএসপি লেভেলেও শাস্তিমুলক বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরখাস্ত হয়েছেন ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্মী ও অফিসার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরার পুলিশের এক প্রাক্তন অফিসার জানান, এভাবে বদলি ও বরখাস্তের ঘটনা গোটা দেশেই নজিরবিহীন।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আই পি এস অফিসার রাজীব কুমারকে যখন ধরতে পারেননি কেউ, তখন কজন সিবিআই আধিকারিক বরখাস্ত হয়েছিলেন ? একসময় ভিজিলেন্স এর এসপির দায়িত্ব সামলেছেন যে অফিসার ,তাঁর দাবি, বাদলবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আছে, কিন্তু সেই অভিযোগের কোন ‘মেরিট’ নেই। অতএব পুরোটাই রাজনৈতিক।

অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা সুভাষ ভৌমিক এদিন বিপ্লব দেবের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রতন লাল নাথ এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এদিন সুভাষ ভৌমিক জানিয়েছেন, 2008-9 সাল থেকে বাদলবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য তোলপাড় করেছে বিজেপি সরকার। কিন্তু সেই সময়ে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন রতন বাবু বিষয়টিকে নিয়ে কোনো সময়ই বিধানসভায় তোলেননি। তাহলে তিনিও কি এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন? বাদল বাবুকে ধরতে পুলিশি ব্যর্থতার জন্য তিনিও বিপ্লব কুমার দেবকেই দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে সুবল বাবু আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর তুঘলকি কাণ্ড রাজ্যবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

এদিকে রবিবার ত্রিপুরার টেট টু পরীক্ষা। কিন্তু তার আগেই এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে। কমলপুরে দু লাখ ও খোয়াইয়ে আট লাখ টাকার প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রী রতনলালের নামে একটি টেলি কথোপকথনের অভিযোগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ ভাইরাল হয়েছে।

কমলপুরে স্থানীয় মানুষ দুজনকে প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনার উপযুক্ত তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। বিরোধীদের এই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন ত্রিপুরার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা।

সমস্ত ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিরোধী দলের দাবি, রাজ্য বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি চালাচ্ছে। ত্রিপুরার শাসনভার গ্রহণ করার পরেই বিরোধীদল সিপিএমকে কোণঠাসা করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি সরকার। আর তার জন্য তাঁরা আইনকে হাতের মুঠোয় এনে ব্যবহার করছে। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, দুর্নীতিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। তাই যে দলই দুর্নীতি করুক তার শাস্তি হওয়া উচিত। আইন মোতাবেক আপাতত সমগ্র ঘটনার দিকে নজর রাখছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!