এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ভারত বিজয়ী পিকের নৌকা কি এসে ডুবতে চলেছে বাংলায়? মমতার নতুন পদক্ষেপে তীব্র হচ্ছে জল্পনা!

ভারত বিজয়ী পিকের নৌকা কি এসে ডুবতে চলেছে বাংলায়? মমতার নতুন পদক্ষেপে তীব্র হচ্ছে জল্পনা!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ –শুরুটা 2014 সালের ভারতবর্ষের সাধারণ নির্বাচন থেকে। গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে সর্বভারতীয় রাজনীতির মানচিত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রজেক্ট করা হয়। একদিকে যেমন সংঘ পরিবার থেকে শুরু করে বিজেপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলে সচেষ্ট ছিলেন, অন্যদিকে তেমনই চুপ করে বসে থাকেননি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা বর্তমানে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পারম্পরিক পদ্ধতিতে 14 সালের নির্বাচন যে পার করা যাবে না, তা ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন নমো। সেই কারণেই গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে প্রচারের নতুন নতুন মাধ্যম খুঁজতে শুরু করেন মোদী সাহেব। কিন্তু শুধু খুঁজলেই তো হল না, এমন একজনকে দরকার ছিল, যার মেধার গুণে প্রচার পাবে নতুন মাত্রা এবং ভারতবাসীর মনের মধ্যে তৈরি হবে বিজেপির প্রতি অকাট্য সহানুভূতি। এই সময়ই কার্যত আবির্ভাব ঘটেছিল বিহারের প্রখ্যাত নির্বাচনী রননীতিকার প্রশান্ত কিশোরের।

যদিও ততদিন পর্যন্ত তিনি প্রখ্যাত মোটেই ছিলেন না। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে নতুন মাত্রা এনে ভিডিও অ্যাপ থেকে শুরু করে থ্রিডি প্রজেক্টোর লাগানো থেকে শুরু করে মোদী টুপি, চায়ে পে চর্চা একাধিক নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল তদানীন্তন বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো। এমনকি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের কপালেও জমা হতে শুরু করেছিল দুশ্চিন্তার ঘাম। আর যেদিন নির্বাচনের ফল প্রকাশ হল, সেদিন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে কার্যত অসম্ভব ভাবে দীর্ঘদিন পরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এই কর্মযজ্ঞে অনেকের ভূমিকা থাকলেও, কার্যত মূল ভূমিকা ছিল (প্রচারের দিক থেকে) প্রশান্ত কিশোরের। 14 সালের পরে অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে প্রশান্ত কিশোরের। বর্তমানে সেই প্রশান্ত কিশোর বাংলার মাটিতে বিজেপির যুযুধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক রণনীতিকার হিসেবে কাজ করছেন। মাঝখানে বিহার নির্বাচনে মহাজোটকে জিতিয়ে আনা, পোড়-খাওয়া রাজনীতিবিদ চন্দ্রবাবু নাইডুকে হারিয়ে ওয়াইএসআরকে জিতিয়ে আনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে অনেকটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মত রোল প্লে করতে দেখা গেছে প্রশান্ত কিশোরকে।

অর্থাৎ রথগুলো প্রশান্ত কিশোরের চালানো, আর যুদ্ধগুলো করেছেন সেই সেই এলাকার রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী। যে সমস্ত নির্বাচনেই কিনা প্রশান্ত কিশোর হাত দিয়েছে, ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, খেল খতম পয়সা হজম।অর্থাৎ একশোয় একশো। তবে এক্ষেত্রে একটু ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক রণনীতিকার হিসেবে প্রশান্ত কিশোর বেশ কিন্তু কড়া ধাতের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। কারন সেটা 2014 সালের নির্বাচনে হোক অথবা বিহারের নির্বাচন অথবা তেলেঙ্গানার নির্বাচন – যেখানেই প্রশান্ত কিশোর নিজের রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, সেখানেই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীদেরকে বলে দিয়েছেন, কোনভাবেই দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করা চলবে না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এমনকি প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রশান্ত কিশোরের মতামতই অগ্রাধিকার করে গেছে বলে জানা যায়। উদাহরণ স্বরূপ 2014 সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় আনকোরা নরেন্দ্র মোদির সামনে প্রশান্ত কিশোর শর্ত রেখে দেয়, বারানসী লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে হবে তাকে। এক্ষেত্রে মোদির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, একদিকে নতুন জায়গায় নিজের বিজয় পতাকা ওড়ানো, অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির সংস্থাপক সদস্যদের মধ্যে একজন মুরলী মনোহর যোশীকে সেই বারানসি আসন থেকে স্থানান্তরিত করা।

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, মোদী শুধুমাত্র গুজরাটের ভাদোদরা আসন থেকে দাড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের চাপেই তিনি সেবার দুটো লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরিনামও হাতেনাতে পাওয়া যায়। কার্যত দুটি আসনেই বিরোধীদের জামানত জব্দ হয়ে পড়ে। এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে পরিষ্কার, পিকে যেমন একদিকে নির্বাচনের বৈতরণী পার করার ক্ষেত্রে একজন ভরসাযোগ্য নাবিক, অন্যদিকে তেমন নিজের জেদের ব্যাপারে অথবা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট বদ্ধপরিকর।

এতদিন পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন তিনি পার করে এসেছেন, প্রায় সেই সব নির্বাচনেই তার সিদ্ধান্তই সর্বোপরি হয়েছে। কিন্তু ঈশানকোণে মেঘ জমতে শুরু করেছে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রায়শই বলে থাকেন, দিদি আধাঘন্টা পরে কী করবেন, 30 মিনিট আগে পর্যন্ত তিনি তা নিজেও জানেন না। কাজেই এরকম একজন স্বাধীনচেতা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক অভিমত অথবা রণনীতি বাস্তবায়িত করা কতটা সম্ভব, প্রথম দিক থেকেই সেই প্রশ্ন আসতে শুরু করেছিল প্রশান্ত কিশোরের কাছে।

যদিও বিগত দিনে তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনে নিজের রণনীতির ক্যারিশমার প্রকাশ করেছেন প্রশান্ত কিশোর। কার্যত দুটি দুর্ভেদ্য বিজেপির দুর্গে ঘাসফুল ফুটাতে সক্ষম হয়েছিল টিম পিকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সেই সময়টা ছিল আপৎকাল। সদ্য সদ্য লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পরে প্রশান্ত কিশোরের উপর দিয়ে নিজের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি চাপাতে চাননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে অবশ্য আখেরে দলের ভালই হয়েছে।

কিন্তু 19 সাল থেকে শুরু করে 21 সাল দু বছরের ব্যবধানে অনেকটাই উত্থান ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মনোবলে। এমনিতেও 2006 সালে মোটে 35 টি আসন পাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সিঙ্গুর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তার মনের শক্তির পরিচয় সেই সময়ই হয়ে গিয়েছিল। নিজের রাজনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনোই নির্ভরশীলতা পছন্দ করেন না। তাই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক অভিমত না মানলেও কি বাংলায় নির্বাচনে জোড়া ফুল ফোটানো সম্ভব হবে পিকের পক্ষে, তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

কারণ নির্বাচনে দুর্নীতি বিরোধীতা যেই প্রশান্ত কিশোরের মূল অস্ত্র, সেই অস্ত্রই যখন বাংলা রাজনৈতিক মাটিতে কার্যকর হবে না, তখন নিরস্ত্র ভাবে কিভাবে লড়াই করবেন পিকে! তাই নিয়েই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন, গতবারের বিজয়ী সব বিধায়করাই টিকিট পাচ্ছেন 21 সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশান্ত কিশোরের অস্ত্র যে অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার হয়ে প্রশান্ত কিশোর কতদিন লড়াই চালাতে পারেন, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!