এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > সভাপতি পদ হারানোয় কি ক্ষোভ ধরা পড়ছে? শীর্ষ নেতৃত্বের অনুরোধ ঘিরে জল্পনা

সভাপতি পদ হারানোয় কি ক্ষোভ ধরা পড়ছে? শীর্ষ নেতৃত্বের অনুরোধ ঘিরে জল্পনা

সহযোগিতার বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও কোথাও যেন ক্ষোভ থেকেই গেল আলিপুরদুয়ার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি মোহন শর্মার অন্দরে। যা রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার জেলায় সাংগঠনিক রদবদল ঘটেছে।

সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলায় ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এরপরই শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে সাংগঠনিক রদবদল। উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি রদবদল হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলাতেও। সেখানে মোহন শর্মার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন দলের পুরাতন কর্মী হিসেবে পরিচিত মৃদুল গোস্বামী।

যার জেরে দলীয় সূত্রে মনে করা হচ্ছে, পুরাতন কর্মীরা আরও অনেক বেশি উৎসাহিত হবে এবং যে সমস্ত কর্মীরা দলের প্রতি বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তারা নব উদ্যমের সঙ্গে দলের হয়ে কাজ করবেন। কিন্তু পুরাতন কর্মীরা যতই কাজ করুক না কেন, নবাগতদেরও প্রয়োজন দলের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য তার জন্য।

হয়ত এবার সেই দিকটা মাথায় রেখেই সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতিকে ফোন করেন দলের সর্বাধিনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল পরিচালনায় মৃদুলবাবুকে সব রকমের সহযোগিতা করতে মোহন শর্মাকে নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর এই নির্দেশের পরই নেত্রীর কথা রেখে গত শুক্রবার আলিপুরদুয়ার জেলা কার্যালয়ে নতুন সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে দেখা যায় প্রাক্তন জেলা সভাপতি মোহন শর্মাকে। এদিন মোহন বাবুর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের আরও এক প্রাক্তন জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও। সভায় নেত্রীর নির্দেশ মত মৃদুলবাবুর পাশে থাকার আশ্বাস দেন মোহন বাবু।

পাশাপাশি সবরকম দায়িত্ব পালন করতেও তিনি যে প্রস্তুত, তা উঠে আসে তার বক্তব্যে। কিন্তু নতুন বনাম পুরনোর লড়াইকে দূরে ঠেলে বাস্তবের মাটিতে কতটা সম্ভব মৃদুল-মোহনের “এ দোস্তি হাম নেহি ছোড়েঙ্গে” এখন তাই আলোচনার বিষয় ছোট থেকে বড় সমস্ত রকমের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে।

বস্তুত, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় শুধু নয়, পার্শ্ববর্তী কুচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় নতুন নয়, নব্য-পুরাতন এদের এই সংঘাত একাধিকবার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই ধরনের সংঘাত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞদের মতে, যা রীতিমতো বেগ দিয়েছে দলের সাংগঠনিক নিশ্চয়তাকে। তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মতে, রাজ্যের পালাবদলের আগে পুরাতন কর্মীরাই ভরসা ছিল দলের।

কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পরপরই স্থানীয় এলাকায় নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তিকে দেখিয়ে দলে জায়গা করে নেয় নবাগত ছোট-বড় নেতৃত্বরা। যারা বেশিরভাগই বামপন্থী সংগঠন থেকে এসেছিল। যার কারনে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে উত্তরের এই জেলাগুলির পুরাতন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা।

অনেকে দল বিমুখ হয়ে বিজেপির দিকে পা বাড়ায়। যার কারণে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে দলের শক্তি বৃদ্ধিতে। আর আলিপুরদুয়ার জেলাতেও এই একই ঘটনা বারবার ঘটায় সেখানকার সাংগঠনিক হাল বেহাল হতে শুরু করে। বস্তুত, গত 2014 সালে আলিপুরদুয়ার জেলা তৈরি হওয়ার পরপরই তার সাংগঠনিক রাশ চলে যায় নবাগতদের হাতে। যার কারনে দলের পুরাতন দিনের কর্মীরা অনেকটাই আশাহত হয়ে প্রায় বসেই পড়ে এবং এর ফলে যে দলের পক্ষে শুভকর হয়নি, তা বোঝা যায় 2019 সালের সদ্যসমাপ্ত সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে।

যদিও নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী জন বারলা জয়ী হওয়ার আভাস মিলেছিল। তা সত্ত্বেও সাংগঠনিক বলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মাটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারের সাংগঠনিক পদ পরিবর্তন সেই ব্যর্থতাকেই দর্শায়। কিন্তু এই পট পরিবর্তনের প্রভাব যেন কর্মীদের গোষ্ঠী কোন্দলের কারণ না হয়ে পড়ে, সেদিকে কড়া নজর রেখেছে দল।

প্রাক্তন সভাপতিকে করা দলনেত্রীর ফোন সেই ইঙ্গিতকেই স্পষ্ট করে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আর নেত্রীর ফোন পাওয়ার পরেই মোহন শর্মা শুক্রবারের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলে, “বৃহস্পতিবার রাতে দলনেত্রী আমায় ফোন করে মৃদুলবাবুকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে বলেছেন। জেলায় দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে আমি মৃদুলবাবুকে সব রকমের সহযোগিতা করব এবং তিনি আমায় যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করব।” কিন্তু এর পাশাপাশি নাম না করে মোহন বাবু অভিযোগ করেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে দলের কেউ কেউ দল বিরোধী আচরণ করেছে।

ওই নেতার বিরুদ্ধে মৃদুলবাবু যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সেই দাবিও করেন ওই প্রাক্তন জেলা সভাপতি। এদিনের এই কথায় মোহনবাবু যে দলের এক প্রবীণ নেতাকে লক্ষ্য করেছেন তা বুঝতে বাকি নেই কারুরই। আর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, “দলে থেকে দলের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না।”

তাই এবার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দলের পরাজয়ের জন্য যে পুরাতন কর্মীদের একাংশকে দায়ী করছেন মোহনবাবু, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যদি নব্য জেলা সভাপতি পুরাতন কর্মী হিসেবে পরিচিত মৃদুলবাবু চলতে চান, তাহলে সেই পথ কতটা মসৃণ হবে! আর এমনিতেও রাজ্য কমিটির তরফ থেকে করে দেওয়া আলিপুরদুয়ার জেলার কোর কমিটির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নবাগতদেরই বেশি।

তাই তাদেরকে পাশ কাটিয়ে কোনো কাজ যদি নতুন জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী করতে চান, তাহলে সরল হবে না তাও স্পষ্ট। তাই এখন দলের এই সাংগঠনিক রদবদল এবং নেত্রীর হস্তক্ষেপ আগামী দিনে তৃণমূলের ভবিষ্যতকে আলিপুরদুয়ারের মাটিতে উজ্জ্বল করবে, নাকি নতুন- পুরাতন দ্বন্দ্ব সংগঠনকে আরও প্যাচে ফেলবে সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!