প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  বহু চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির। আশা করেছিল, এবার তারা বাংলার ক্ষমতা দখল করবে। সেই মত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সকলেই বাংলা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। 77 টি আসন পেয়ে রাজ্যে বিরোধী দলের জায়গা পেয়েছে গেরুয়া শিবির। সেক্ষেত্রে দলের অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই ভরাডুবি করার পেছনে প্রধান দায়ী বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবিরের একাংশের মধ্যে।

শুধু তাই নয়, দলের ভেতরের খবর বাইরে পাচার হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। সেদিক থেকে গেরুয়া শিবিরের একাংশ অন্তর্কোন্দলের অভিযোগ করছেন। আর এই পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতাকে সাথে নিয়ে ভোটের ফলাফল পরবর্তী পর্যালোচনা করতে বৈঠকের ক্ষেত্রে কোনোরকম রিস্ক নিতে চাইছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। বর্তমানে লকডাউনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে। করোনা ভাইরাসের কারণে সেভাবে জনসমাগম করে কোনো মিটিং, মিছিল বা বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই এই পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুরু করে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে নেতা-নেত্রীদের। সেক্ষেত্রে বিজেপি ভোট পরবর্তী পর্যালোচনার ক্ষেত্রে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করতে পারে বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক নিয়ে তৈরি হল আপত্তি। যেখানে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্যই বিজেপি এই ভার্চুয়ালি বৈঠক করছে না বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভোটের ফলাফল কেন এত খারাপ হল, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে বহু পর্যালোচনা হয়েছে। তবে নানা নেতাদের নিয়ে সেভাবে সামনা সামনি বসে আলোচনা হয়নি। তাই এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে যখন লকডাউন চলছে, তখন ভার্চুয়ালি মাধ্যমকে ভরসা রেখে বিজেপি সেই বৈঠক করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকেও রিস্ক রয়েছে বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের একাংশ। কেননা কোনো নেতা ভার্চুয়ালি বৈঠক করলে তার পাশে থাকা কোনো ব্যক্তি গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলের কথা শুনে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাইরে সেই খবর চলে যেতে পারে।

যা বিজেপি পক্ষে খুব একটা হিতকর হবে না। তাই এক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করে ভার্চুয়ালি বৈঠকের ওপর জোর দিচ্ছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। মূলত ভোটের ফলাফলের পরবর্তী পর্যালোচনা নিয়ে বহু বিষয় সামনে আসতে পারে। তাই সেই সমস্ত বিষয় সমালোচক মহলের কাছে বড় হাতিয়ার হয়ে যেতে পারে। তাই কোনভাবেই তা যাতে প্রকাশ্যে না আসে, তার জন্য ভার্চুয়ালি বৈঠক করতে চাইছে না পদ্ম শিবির বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিন এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, “প্রথমে ঠিক হয়েছিল মে মাসের পর যখন পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে, তখন কলকাতায় এই মিটিং করা হবে। কিন্তু যেহেতু রাজ্যে লকডাউন পর্যায়ের এই সময়টা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেজন্য মিটিংয়ের সময়টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখেই ধরনের মিটিং ভার্চুয়ালি করা উচিত নয়। কারণ মিটিংয়ে উপস্থিত কোনো নেতার পাশে কেউ যদি নিজেকে আড়াল করে বসে থাকেন, তবে তিনি গোটা মিটিং শুনে নিতে পারবেন।‌ সেক্ষেত্রে মিটিংয়ের খবর বাইরে আসবেই। কিন্তু এই চেষ্টাটাও রাখা উচিত, যাতে গোপন কোনো বিষয় আলোচনা হলে সেটা যেন বাইরে না যায়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই বিজেপি তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। যার জেরে দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দলের অনেক নেতা বর্তমান নেতৃত্বকে দায়ী করতে শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে এসেছে তথাগত রায়ের মত বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য। যার জেরে অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। সেদিক থেকে বিজেপি নিজেদের শৃঙ্খলা পরায়ন দল বলে দাবি করলেও, কেন এই রকম মন্তব্য বাইরে চলে আসছে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

আর এই পরিস্থিতিতে ভোটের ফলাফল পরবর্তী পর্যালোচনা নিয়ে বিজেপি যখন ভার্চুয়ালি বৈঠক করবে, তখন সেই বৈঠকে নানা বিষয় উঠে আসতে পারে। এক্ষেত্রে নানা নেতার বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন একাংশ। যা বাইরে চলে আসলে বিজেপির পক্ষে তা খুব একটা ভালো হবে না। তাই নিজেদের হিতের কথা চিন্তা করে গেরুয়া শিবির এবার সেই বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করল।

যেখানে ভার্চুয়ালি বৈঠক না করে পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা এই বৈঠক করার উদ্যোগ নেবে বলে খবর। অর্থাৎ একদিকে দল ছেড়ে নেতা-নেত্রীদের চলে যাওয়ার সম্ভাবনা এবং অন্যদিকে দলের একাংশের বিদ্রোহ, আর তার মধ্যে কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করতে চাইছে না গেরুয়া শিবির।