এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > দুর্নীতির প্রতিবাদ করাতেই কি ‘কড়া’ শাস্তির মুখে উচ্চপদস্থ অফিসার? ক্ষোভ সরকারি কর্মীদের

দুর্নীতির প্রতিবাদ করাতেই কি ‘কড়া’ শাস্তির মুখে উচ্চপদস্থ অফিসার? ক্ষোভ সরকারি কর্মীদের

গতকাল দলের কোর কমিটির বৈঠকে যখন তৃণমূল নেত্রী দলীয় নেতাদের নাম ধরে ধরে দুর্নীতির জন্য কড়া শাসন করছেন, ঠিক তখনই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ‘শাস্তি’ পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি বিপুল রায়। বিপুলবাবুকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারির পদ থেকে কালিম্পঙ জেলার গরুবাথানে বিডিও অফিসে যোগ দিতে বলে হয়েছে। এই ব্যাপারে বিপুল রায়ের সঙ্গে প্রিয় বন্ধু বাংলার তরফ থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বদলির কথা স্বীকার করে নিয়ে জানান, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বেআইনি বদলি মানছি না, আইনি পদক্ষেপ নেব। কিন্তু কেন এই বদলি ‘বেআইনি’? সরকারি কর্মচারী মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, প্রধানত তিনটি কারণ – যাতে করে ক্ষোভের আগুনে রীতিমত ফুটছেন তাঁরা। প্রথমত, বিপুলবাবু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মচারী, রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়া এইভাবে তাঁকে বদলি করা যায় না, কিন্তু তাঁর বদলির অর্ডারে কোথাও রাজ্যপালের অনুমোদন নেই, এমনকি এই ব্যাপারে যে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে, তাও কোথাও লেখা নেই। দ্বিতীয়ত, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মচারীদের বদলির ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হল কর্মচারীদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলে তবেই অন্য দপ্তরে বদলি করা হবে। কিন্তু বর্তমানে বিপুলবাবুর দপ্তরে কর্মচারীর সংখ্যা অপ্রতুল। তৃতীয়ত, একজন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারিকে বিডিও অফিসে বিডিওর অধীনে (যিনি পদমর্যাদায় বর্তমানে বিপুলবাবুর পদমর্যাদার থেকে নীচে) বদলি করা হচ্ছে।

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

কিন্তু কেন হঠাৎ করে বিপুলবাবুর উপরে এইভাবে ‘শাস্তিমূলক’ বদলির পদক্ষেপ নেওয়া হল? বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালের WBCS পরীক্ষা নিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। একজন প্রার্থী ইংরেজিতে সাদা খাতা জমা দিয়ে ০ পেয়েছিল, কিন্তু তা ১৬২ করে দেওয়া হয়। সেই একই প্রার্থী বাংলায় পেয়েছিল ১৮ অথচ তা করে দেওয়া হয় ১৬৮, একইরকমভাবে সেই প্রার্থীকে অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রেও এইভাবে নাম্বার বাড়িয়ে চাকরিটা পাইয়ে দেওয়া চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন করেন, ৩১৫ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৮১ জন জনস্বার্থে বিচারবিভাগীয় তদন্তের আবেদন জমা দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো তদন্তই করেননি। প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে মাথায় রেখে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, সেই কমিটি কিছুই করেনি বলে অভিযোগ। কেননা প্রাক্তন সেই চেয়ারম্যানের আমলেই নাকি এই একই প্রার্থী WBCS-এর প্রিলিম পাশ না করলেও, তাকে জোর করে মেন-পরীক্ষার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। গত মঙ্গলবার মেন পরীক্ষার ফলাফল বের হলে দেখা যায় সেই প্রার্থী ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেয়েছেন। ফলে সমস্ত কর্মচারী সংগঠন ঝাঁপিয়ে পড়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর হচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তেই গতকাল নবান্ন থেকে রাজ্য সরকার ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ হয়ে ‘বেআইনি ভাবে’ বিপুলবাবুকে ‘শাস্তিস্বরূপ’ বদলির নির্দেশ দিয়েছে সেই দুর্নীতির লড়াইয়ে নেতৃত্ত্ব দেওয়ার ‘অপরাধে’ বলে দাবি কর্মচারী সংগঠনগুলির।

এই প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিপুল রায়ের ঘটনা আদতে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্য সরকারের অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যাতে কেউ করতে না পারে তাই ভয়াবহ সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। এর আগে, তৃণমূলের কোর কমিটি ছেড়ে আমাদের সংগঠনে যোগ দেওয়ায় এবং সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় এক পঞ্চাশোর্ধ বিধবা মহিলা, লতিকা মন্ডলকে অন্যায়ভাবে সুদূর দুর্গাপুরে বদলি করে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগেই স্টিয়ারিং কমিটির সংকেত চক্রবর্তী এক তৃণমূল নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরটিআই করায় তাঁকে তাঁর দপ্তরেই শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়, আর মজার ব্যাপার দেখুন গতকাল সেই সংকেতবাবুকেই একইভাবে বদলি করে দেওয়া হল সুদূর উত্তরবঙ্গে। সুতরাং, এই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিপুলবাবুর মুখ বন্ধ রাখতেই তাঁকে সুদূর উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হবে, প্রতিহিংসাপরায়ন এই সরকারের কাছে এর থেকে বেশি কি আশা করা যাবে? এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি এবং ২২ টি কর্মচারী সংগঠনের মঞ্চ এক হয়ে আমরা বৈঠকে বসে এই ব্যাপারে মাননীয় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের দাবিতে পদক্ষেপ নিতে চলেছি।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!