রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৪ অন্যান্য অপরাজিতা গল্পে-আড্ডায় January 5, 2020 রনোর এখন হাসপাতাল মাথায় উঠেছে। ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠেছে শ্রী, ওকে যে করেই হোক স্বাভাবিক করবে। এতদিন যে ৮ টার আগে ঘুম থেকে উঠতো না। সে আজকাল ৫ টার সময় উঠছে। রেডি হয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল যাচ্ছে তাড়াতাড়ি, বেরিয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। কোনো এমার্জেন্সি এলে অন্য ডাক্তারকে রেফার করছে। রাহুল প্রথম প্রথম কিছু না বুঝলেও এখন বুঝেছে যে কিছু কেস আছে। দুদিন তাই লক্ষ্য করেছে দেখেছে শ্রী বেরোবার পরে পরেই বের হচ্ছে রনো। দুজনে বাইরে দেখা করছে? প্রশ্নটা প্রবলভাবে মনে এসেও নিমেষে মিলিয়ে গেলো রাহুলের। না এটা অন্য কেউ হলে তবুও সম্ভব ছিল কিন্তু এটা শ্রী। তবে কোথায় যাচ্ছে এত সকালে? হসপিটালে খোঁজ নিতে হবে?এখনই অদিতিকে বলা যাবে না। আরো কদিন দেখে ফের বলবে অদিতিকে। পরের দিন সকালে শ্রী বের হলো নিজের মতো। রণোও বের হতে যাচ্ছিলো। মিসেস মুখার্জী ডাকলেন। এই দাঁড়াও, না খেয়ে যাবে না। আমি বুড়োবয়সে রান্না করে মরবো আর উনি বাইরে খাবেন। তাড়াতাড়ি বেরোচ্ছ বলে আমি আজ রান্না করে নিয়েছি। রনো – না আন্টি, খুব দেরি হয়ে গেছে। মিসেস মুখার্জী – চুপচাপ খেয়ে তারপর যাও। রনো অনিচ্ছা স্বত্তেও কোনোক্রমে খেয়ে বেরিয়ে গেলো। রাস্তাতে দেখতে পেলো না শ্রীকে। লেকে গিয়ে দেখলো শ্রী সেইমাত্র পৌঁছেছে। ব্যাগটা রাখছে টেবিলে। আস্তে আস্তে এগোতে থাকলো রনো। সকালের এই আবহাওয়াটা যেন অনেক কিছু বলছে একসঙ্গে। শ্রী চুলটা খুলে দিলো, ঘন কালো একঢাল চুল কোমর থেকেও নিচে নেমে গেছে। চেয়ারে বসলো শ্রী। তারপর টেবিলে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝলো। না রনো আর রনোতে নেই। শ্রীর কাছে চলে এসেছে রনো। শ্রীকে দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। একটা ক্লান্ত, শান্ত মুখ। আজ নিজের সমস্ত রং শ্রীকে দিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে রনোর। মনে হচ্ছে নিজের সমস্ত রংকে উজাড় করে দিয়ে শ্রীকে রাঙিয়ে দিতে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো রনোর। চমকে উঠলো রনো শ্রী দুজনেই। রনো ফোন কেটে দিয়ে শ্রীর পশে বসলো। শ্রী উঠে পড়লো, রনো শ্রীকে বললো – আমি কি কিছু খারাপ ব্যবহার করেছি, কোনোভাবে অসম্মান করেছি ? শ্রী অবাক হয়ে আস্তে আস্তে বললো – আমি তো এমন কিছু বলিনি। রনো – সেই জন্যই তো জানতে চাইছি , আমি এলেই আপনি, দূর তুমি উঠে যাও, কদিন কি বিকালে আসোনি সেই কারণেই ? বসলো শ্রী, বললো – স্কুলে কাজ ছিল। রনো – তুমি স্কুলে জব করো গ্রেট, কোন স্কুলে জব করো?( যেন সে কিছুই জানে না ) স্কুলের নাম বললো শ্রী। দুজনেই কিছুক্ষন চুপ এবার কি বলবে জানে না রনো। কথা বলতে গিয়ে আটকায় না রনোর কিন্তু আজ কথা খুঁজে পাচ্ছে না। ভেবে বললো – আচ্ছা এখানে দেখার মতো কি কি আছে ? শ্রী বললো কয়েকটা নাম। রনো – ওকে, তাহলে একদিন যাওয়ায় যায়, যাবে? অদিতি, রাহুল, তুমি, আমি,আন্টি শ্রী – আপনারা যেতে পারেন। রনো – তুমি? শ্রী – মাথা নেড়ে জানালো না রনো – কেন? আমরা এতটা খারাপ নই, আমাদের সাথে থাকলে ভালো লাগবে। এবার শ্রী বললো আমার একটু কাজ আছে, যেতে হবে। উঠে দাঁড়িয়ে চুলটা জড়িয়ে নিলো শ্রী। ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো। আজকেও ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজেছে শ্রী, লক্ষ্য করেছে রনো। এবার রনো বললো এইভাবে নিজেকে সবকিছু থেকে আড়াল করে রাখলে কোনো দিন পাস্ট বের হতে পারবে না। স্বাভাভিক হবে না। শ্রী একটু বিস্ময় নিয়ে তাকালো রনোর দিকে ,তারপর একটা একটু বেঁকা হাসি হেসে বললো – আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। আপনি ভুল করছেন আমি পাগল নয়। শুধু একটু একা থাকতে চাই আমার মতো। রনো – শ্রী আমি এটা মিন করিনি। সরি, কিন্তু এইভাবে নিজেকে অতীতেই বেঁধে রাখা। শ্রী -আমার স্কুলে দেরি হয়ে যাবে। আমাকে যেতে হবে। রনো – শ্রী আমি সরি , আমি সিরিয়াসলি কোনো কিছু মিন করে বলিনি। শ্রী কোন কথা বললো না, চলে গেলো। দাঁড়িয়ে রইলো রনো। ———————————————————————- না আর লেকে যায়না শ্রী। খুব সকালেও বের হয়না বাড়ি থেকে। স্কুল শুরুর একটু আগে বের হয়। রনোরা যখন খায় তখন শ্রী বেরিয়ে যায়। রনো জানে কারণটা। এবার কি করবে রনো? নিজেকে বড় অসহায় লাগে ওর। শ্রী কে ঐভাবে বলতে চায়নি ও। পর পর কয়েকদিন কোনো মতে খেয়েই বেরিয়ে গেছে না রাস্তাতেই দেখতে পায়নি শ্রীকে। শ্রী এখন অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। রনো মেন্ রাস্তাটাই চেনে। অন্য অলিগলি সে চেনে না। সকালে বিকালে লেকে যায় রনো। শ্রী যেখানে বসতো সেখানেই বসে থাকে। শ্রী স্কুল থেকে যখন আসে তখনিই দেখা করবে রনো। এছাড়া উপায় নেই। পরের দিন দুপুরে বেরিয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে। স্কুলের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিজের মতো হাঁটছিলো বাইকে করে সামনে এসে দাঁড়ালো রনো। শ্রী রনোকে দেখে পাস্ দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। রনো বাইক রেখে ছুটলো ওর পিছু পিছু। শ্রী আমি সরি , প্লিজ আমি ঐভাবে কিছু বিলনি। শ্রী প্লিজ কথা বলো। আমি কদিন লেকে গেছি। না শ্রী দাঁড়ায় নি। শ্রী তাড়াতাড়ি হাটছে রনোকে পাস্ কাটিয়ে। রনো ওকে বলতে বলতেই ওর সাথে সাথে যাচ্ছে। এবার শ্রীর চোখে পড়লো লোকে দেখছে ওদেরকে। দাঁড়ালো শ্রী। রনো ফের বললো – শ্রী সরি, প্লিজ আমি ঐভাবে কিছু বিলনি। শ্রী – আপনি চলে যান। লোকজন দেখছে। রনো – যতক্ষণ না কথা বলবে, আমি যাবো না। শ্রী – আমি কিছু মনে করিনি। রনো -তাহলে লেকে যাও না কেন? আমি যাই বলে তো। শ্রী- আপনি ভুল বুঝছেন। প্লিজ আপনি যান। সবাই দেখছে। রনো – দেখুক, আগে আমার কথার জবাব দাও। কিছু মনে করোনি তো লেকে যাচ্ছ না কেন? চারিদিকে লোকে দেখছে। ওর লজ্জা করছে ভীষণ, পালতে চাইছে। আপনি যান আমি যাবো লেকে – বলে হাটতে লাগলো শ্রী। রনো বাইকটা নিয়ে ফের এসে দাঁড়ালো ওর কাছে বললো ঠিক আছে চলো। শ্রী বললো আমি যেতে পারবো আপনি দয়া করে যান। একটু একা থাকতে দিন আমাকে। রনো জোরে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভালো লাগছে না ওর। কি করে বোঝাবে ও শ্রীকে আর শ্রী শুধু ওর মাথায় মধ্যেই নয়, মনের ভেতরেও পৌঁছে গেছে। নাতাশাকে রনো ভুলে গেছে কিনা জানে না। কিন্তু ওর জন্য কোনো ফিলিংস নেই রনোর মনে। মনে হয় খুব ভুল করেছিল ও নাতাশার সাথে জড়িয়ে। নাতাশা যখন ওকে প্রপোজ করেছিল রনো তখন না বলেছিলো। নাতাশাই ওর পিছনে পরে থাকতো – বলতো আমি তোকে ভালোবাসি, তুইও বল তুই আমাকে ভালোবাসিস। রনো কতটা ভালোবেসেছিলো জানে না। কিন্তু আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়েছিল তারপর হ্যা বলেছিলো। তারপর প্রেম কিন্তু আরো আরো ছাড়ো ছাড়োই বেশি ছিল। নাতাশার থেকে বেশি রনোর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ভালোলাগতো। ও আর রাহুল, প্রতিম, অভ্র তখন ভালো বন্ধু ছিল। কথায় কথায় বেরোতো, ঘুরতো মজা করতো। নাতাশার সাথে সেই নিয়ে ঝগড়া হতো। হয়তো নাতাশা ঠিক ছিল।সিনেমা দেখতে গিয়ে নাতাশা কোণের সিট চাইতো আর রনো বন্ধুদের সাথে মাঝখানের সিট নিতো। সেই নিয়েও ঝগড়া চলতো। শেষে রেগে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে যেত রনো। নাতাশা কাঁদতো। অনেকবার রনো ঝগড়া করতে গিয়ে বলেছে তুই তোর মতো থাক আমাকে আমার মতো থাকতে দে। এখানেই আমাদের সম্পর্কটা এন্ড কর। শেষের দিকে যখন রনোর মা যখন ওদের বিয়ে ঠিক করলো রনো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি ছিল না। নাতাশা খুব করে চেয়েছিলো বিয়ে করে রনোকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সেটেল্ড হতে। ওর ধারণা ছিল বাইরে গিয়ে সেটেল্ড হলে হয়তো রনো শুধু ওকে নিয়েই ভাববে। কিন্তু তাও যেতে চায়নি রনো। তারপর একদিন রনোকে ডেকে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয় নাতাশা । তারপর রনো শুনেছে সে বিয়ে করে বাইরে চলে গেছে। কোথায় ঠিক জানে না, জানার ইচ্ছাও নেই। কিছুদিন খারাপ লেগেছিলো, কষ্ট হয়েছিল কিন্তু ফের সামলে নিয়েছে নিজেকে। না রনো নাতাশাকে কোনো দোষ দেয়না। রনো জানে ও ভালোবাসতে পারেনি নাতাশাকে। ইগনোর করেছে বরাবর। প্রেমিক প্রেমিকা বলতে যা বোঝায় ওরা কোনোদিননি তা ছিল না। বার কয়েক হাত ধরা ছাড়া আর কিছুই করেনি রনো। যদিও নাতাশা অনেক কিছুই চাইতো , কিন্তু রনোর কোনোদিন কোনো ইচ্ছা হয়নি। রাগ করে নাতাশা বলেছে – ওর মতো বয়ফ্রেন্ড থাকার থেকে না থাকা ভালো। ছেড়ে চলে যা – উত্তর দিয়েছে রনো। না তা নিয়ে আজকেও কোনো আফসোস নেই রনোর। শ্রীকে নিয়ে যা ফিল করছে রনো তা কোনোদিন নাতাশাকে নিয়ে মনে হয়নি। এত কাছে থেকেও কোনোকথা বলতে পারছে না রনো। কি করবে ও। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। বাইকটা রেখে রাস্তার ধারে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে এইসব ভাবছিলো। দেখলো একটা গলি থেকে শ্রী বের হচ্ছে। এই জায়গাটা একটু ফাঁকা। শ্রীকে দেখে রনো গাছের পিছনে লুকালো। শ্রী নিজের মতোই হাঁটছে কিন্তু তাড়াতাড়ি। বার বার পিছনে ফিরে দেখছে। রনো জানে রনোর থেকেই পালাতে চাইছে শ্রী। —————————————————————————————————- অদিতিকে রাহুল বললো ব্যাপারটা। অদিতি – কি? রাহুল – আচ্ছা শোন্ রনো শ্রীর প্রেমে পড়েনি তো ? অদিতি – আমিও লক্ষ্য করেছি ও সারাক্ষন কিছু একটা ভাবে। অন্য কথা বললে কথা কানে যায় না। কিন্তু শ্রীর ব্যাপারে বললে ঘুরিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে। রাহুল – ধরবো? অদিতি – মানবে কি? সাবধান হয়ে যাবে। ছাড় কিছু এখুনি বলতে হবে না। রাহুল – হুম, সময় বুঝে বলবো। আচ্ছা শ্রী কি? অদিতি – মনে হয় না। কেননা শ্রীর মধ্যে তেমন কিছু চেঞ্জ দেখিনি। স্টপ রনো আসছে। রনো – অর্ডার দিয়েছিস কিছু ? খুব খিদে পেয়েছে। রনোরা খাচ্ছিলো। তখনিই এলেন ডাক্তার সুনন্দা। বয়েস রনোদের মতোই হবে। ওদের কলিগ। একে আবার পছন্দ করে না অদিতি। রাহুলের সাথে কথা বলতে দেখলি ঝগড়া জুড়ে দেয় রাহুলের সাথে। সুনন্দা রনোকে খুব পছন্দ করে। রনো আসার পর জিজ্ঞাসা করেছিলেন কোথায় থাকছে? না জায়গা থাকলে তার বাড়িতে ঘর ফাঁকাই থাকে। রনো জানিয়েছিল রাহুলের সাথে থাকবে। শুনে বড্ড দুঃখ পেয়েছিল সুনন্দা – এটা অবশ্য রাহুলের ধারণা। সুনন্দা – রনো, এগুলো কি হচ্ছে? তুমি দেরি করে আসছো, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছ। আমাকে অনেক প্রেসারে নিতে হচ্ছে। প্লিজ এমন করবে না। অদিতি – তোমাকে চাপ নিতে হবে কেন? আরো ডাক্তার আছে তো। আমরাও আছি তো। সুনন্দা – নিতে হচ্ছে বলেই বলছি। আচ্ছা বসতে পারি। রাহুল বললো – সিওর ম্যাম প্লিজ বলে চেয়ারটা এগিয়ে দিলো। সুনন্দা রাহুলের পাশে বসতে বসতে বললো – কতবার বলেছি আমাকে ম্যাম বলবে না। সুনন্দা বলবে। রাহুল – ইয়েস সুনন্দা অদিতি কটমট করে তাকিয়ে রয়েছে রাহুলের দিকে সুনন্দা – রনোর দিকে তাকিয়ে রনো আমি কিন্তু এখনো এনসার পেলাম না। রনো – নো, একটু কাজ ছিল। কদিন ব্যাস্ত থাকবো পার্সোনাল কাজে। রনো বোঝে সুনন্দার ইঙ্গিতটা। ভালো লাগে না ওর। মোহিনী ম্যাম খোঁজ করছিলেন, রনো আর রাহুল তোমাদের দুজনকে ডেকেছে বলে চলে গেলো সুনন্দা। অদিতি রাহুলের সাথে ঝগড়া জুড়লো, কেন সিওর ম্যাম প্লিজ বলে বসতে বললো ঢঙিকে। অদিতিকে সাইডে রেখে রাহুল সুনন্দাকে ফ্লোটিং করছে, এইসব। যখনই রাহুলকে দেখে সুনন্দার সাথে কথা বলতে তখনই ঝগড়া করে। এটা নতুন নয়। ঝগড়া থামায় রনো। এবারে আর ইচ্ছা করছে না। এদিকে রিসেপশন থেকে কল করেছে অদিতিকে তাকে নাকি একজন খুঁজছে। অদিতি জিজ্ঞাসা করলো কে? রিসেপশন থেকে জানালো – তার নাম শ্রী। শ্রী – চেঁচিয়ে উঠলো অদিতি। ফোটা শ্রীকে দিতে বললো অদিতি – শ্রী কি হয়েছে, ওকে তুমি ওয়েট করো ওখানে আমি খুনি আসছি। শ্রী অদিতির খোঁজ করছে কেননা স্কুলের পর মাঝে মাঝে যে অনাথ আশ্রমটায় যায় শ্রী সেখানে একটা বাচ্চা পরে গেছে। মাথা ফেটে গেছে। শ্রী সেই বাচ্চাটা আর কয়েকজন এসেছে। শ্রী কাউকেই চেনে না, অদিতি রাহুল আর রনো ছাড়া। অদিতিকেই বেশি ভালো করে চেনে। অদিতির নাম বলেছে। অদিতিকে কল করেছে রিসেপশন থেকে। রনো – কি হয়েছে ? অদিতি – শ্রী এসেছে ? বলছি চল। কোনো মতে খোওয়া ছেড়ে ছুটলো সকলে। যেতে যেতে বললো অদিতি কি হয়েছে। ওরা গিয়ে দেখলো একটা বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে। বাচ্চাটার মাথা ফেটে গেছে রক্ত পড়ছে। শ্রী দেখেছে রণকে কিছু বলেনি। অদিতি দেখছে বাচ্চাটাকে। নার্সকে কিছু ইস্ট্রাক্শন দিলো আর বললো বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে যেতে। রনো রাহুল শ্রী সাথে যারা এসেছিলেন তাদের সাথেই কথা বলছিলো। ইতিমধ্যেই সুনন্দা হাজির হলো – রনোর কাছে এসে বললো এই তুমি এসে গেছো। আমি সেই থেকে ওয়েট করছি। বললাম তোমার সাথে দরকার আছে। ১৪ নো পেসেন্টর ব্যাপারে কথা আছে চলো বলেই রনোর হাতটা ধরলো সুনন্দা। রনো হাতটা ছাড়িয়ে বললো আসছি। ফের সুনন্দা হাত ধরে বললো আসছি না, এখুনি চলো ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন মোহিনী ম্যাম ডাকছেন। রনো ফের হাতটা ছাড়িয়ে বললো আরো ডাক্তার আছে তো। মোহিনী ম্যাম বলেছেন যা বলার তাকে বলো। অদিতি বললো তুই যা আমি দেখছি। রাহুল তোমাকেও দেখেছে মোহিনী ম্যাম। শ্রী দেখছে সুনন্দা কিভাবে গায়ে পড়েছে রনোর। আচ্ছা শ্রী কি ভুল বুঝলো রণকে ?সুনন্দাকে আচ্ছা করে গালাগালি দিতে ইচ্ছা করছে গায়ে পড়া একটা। যদি ভুল বকছে। অন্য সময় হলে কিছু মনে হতো না রনোর। আজ মনে হচ্ছে শ্রী কে সব কিছু বলতেই হবে। বলতে হবে সুনন্দা ওর কেউ হয়না। —————————————————————————————————– পরের দিন রনো দেখলো শ্রী বের হচ্ছে অনেকটা আগেই। আগে যেমন বের হতো তেমনি। রনো খুব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে না খেয়েই বেরিয়ে গেলো। লেকে গিয়ে দেখলো শ্রী বসে আছে আগের মতোই। কতকগুলো বাচ্চা ওকে গিয়ে ধরে অনেক অভিযোগ জানাচ্ছে। শ্রী তাদের সঙ্গে কথা বলছে, তাদের কথা শুনছে, হালকা করে হাসছে। রনো বাইরের দোকান থেকে কিছু চকলেট নিয়ে লেকের ভেতরে ঢুকলো। শ্রীর পাশে এলো রনো। শ্রী দেখেছে রনোকে কিন্তু আজ উঠলো না। বাচ্চা গুলোকে রনো চকলেট দিলো তারা শ্রীর দিকে তাকালো। শ্রী সম্মতি দিলো রনো তাদেরকে চকলেট দিলো। তারা চলে গেলো। রনো – থাঙ্কস। ফের এখানে আসার জন্য। বাইদাওয়ে বাচ্চা গুলো কে? শ্রী একটু অবাক হয়ে তাকালো রনোর দিকে। ফের বললো – আপনি চকলেট ওদের জন্য আনেন নি। রনো – না, মানে হ্যাঁ, না আমি হসপিটালে নিয়ে যেতাম। ওদের দেখে দিলাম। শ্রী – ওরা ওই অনাথ আশ্রমে থাকে। মাঝে মাঝে আসে। রনো – কালকে বাচ্চাটা যেখান থাকে , শ্রী – হুম। রনো – শ্রী কালকে আমাদের সিনিয়র ডাক্তার দেখেছিলেন আমার কলিগ , যে ডাকতে এসেছিলো সুনন্দা ওকে দিয়ে দেখেছিলো , মানে খুব এমার্জেন্সি ছিল। মানে ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। মানে কলিগ। শ্রী – অদিতিদি ছিল তো, অসুবিধা হয়নি। ঠিক আছে। রনো যা বোঝাতে চাইলো বোঝাতে পারলো কি? বুঝতে পারলো না রনো। এবার বললো – তবুও সরি, এখানে তুমি কতদিন আছো? শ্রী – অনেকদিন, ৬-৭ বছর হবে। রনো – তোমার বাড়ি কোথায় ? শ্রী- কোনো সাড়া দিও না। রনো বললো দেখো বললে মন হালকা হয়। ভালো লাগবে, সবার পাস্ট থাকে, কিন্তু সেটা ভুলে এগোতে হয়। আন্টিও তো আন্টির ছেলেকে হারিয়েছেন কিন্তু তিনি তো বেরিয়ে এসেছেন তাহলে তুমি কেন? শ্রী- শুধু বললো – ধরুন আমি বেরোতে চাই না, তাই। আমি ওতেই বাঁচতে চাই। রনো – কিন্তু এইভাবে বাঁচা যায়না , তোমার সমস্ত জীবনটা বাকি আছে। এইভাবে। শ্রী – আমি মানসিক রোগী নোই , দয়া করে আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি আমাতে ভালো আছি। প্লিজ রনো – কিন্তু শ্রী – প্লিজ। আর কথা হলো না। শ্রী উঠে গেলো। আজ রবিবার রাহুল আর রনো একটু বেলা করে উঠে ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখলো অদিতি আন্টির পাশাপাশি রয়েছে শ্রীও। মিসেস মুখার্জী রনোকে বললেন এই তোমার একটা কি চিঠি এসেছে দেখো – বলে একটা ব্যাংকের চিঠি দিলেন। সাথেই বললেন তুমি সেদিন বলেছিলে বটে, তোমার ভালো নাম। আজ ফের নামটা দেখলাম বেশ ভালো। আমি তো রনো নাম ডেকে দেখেই তোমার ভালো নাম ভুলে গেছি। রনো আড়চোখে শ্রীকে দেখতে দেখতেই বললো – আমার ভালোনাম ‘অরণ্য ‘ ওই অরণ্যকে ছোট করে রনো বলে সবাই। শ্রী কাঁচের একটা প্লেট নিয়ে কিছু করছিলো নামটা শুনেই হাত থেকে পড়ে গেলো। চমকে তাকালো সভাই। রনো লক্ষ্য করলো ‘অরণ্য ‘নামটা শুনেই ওর মুখটা কেমন একটা হয়ে গিয়েছিলো। আনমনা হয়ে গিয়েছিলো। সেই সময় প্লেটটা পরে যায়। সরি আন্টি, আমি দেখিনি বলে ভাঙা কাছের টুকরোগুলো তুলতে লাগলো শ্রী। সবাই মানা করলেও শুনলো না শ্রী। বার বার বলছিলেন মিসেস মুখার্জী ছেড়ে দাও। ওঠো। কিন্তু শ্রী পাগলের মতো টুকরোগুলো তুলছিলো যেন কত অন্যায় করে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি করে কাঁচের টুকরোগুলো তুলতে গিয়ে হাত কাটলো শ্রীর। রক্ত পড়ছে কিন্তু ওর কোনো বিকার নেই। অনেকটা কেটেছে। কিন্তু একবারও আঃ করেনি। অদিতি ছুটে গিয়ে হাতটা ধরলো। আন্টিও জোর করে তুললো ওকে। অদিতি ওকে ঘরে নিয়ে গেলো। মিসেস মুখার্জী খেতে দিলো রাহুল রনোকে। বাকিরা যা দেখেছে রনো আজ তার থেকে অনেক বেশি কিছু দেখেছে। অরণ্য নামটা শুনেই শ্রী আনমনা হয়ে গেছে। ওর ভেতরে উথাল পাথাল হয়েছে। ও পাগলের মতো কাঁচের প্লেটটা তুললেও মনের মধ্যে প্লেট ভাঙা নয়, চলছে অন্য ঝড়। কে অরণ্য? আন্টির ছেলের নাম ? মিসেস মুখার্জীকে জিজ্ঞাসা করলো রনো – আন্টি একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো ?কিছু মনে যদি না করেন। মিসেস মুখার্জী – বলো। রনো – আপনার ছেলের নাম কি ছিল ? মিসেস মুখার্জী – সৌম্যদীপ, আমরা সমু বলতাম আর ওর বন্ধুরা দীপ, সৌম এইসব। রনোর হিসেবে মিলছে না। তবে কে অরণ্য? রনো তো শ্রীকে চেনে না তবে কি আছে রহস্য। নাকি সৌমদীপকে শ্রী অরণ্য বলে ডাকতো। ডাকতেই পারে অনেকেই তার প্রেমিক প্রেমিকাকে ভালোবেসে অনেক নামে ডাকে। কিন্তু তবুও যেন খটকা যাচ্ছে না। এরপর থেকে রনো লক্ষ্য করেছে শ্রী ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে পার্কে কখনো যায় কখনো যায়না , রনো আসছে দেখলেই চলে যায় , রনো কথা বললেও হ্যাঁ, না বলে চলে যায়। কিন্তু যখন রনোরা খেতে আসে রণকে লুকিয়ে দেখে শ্রী, অনেকবার রনো দেখেছে শ্রী তাকে দেখছে সেই ছবি পেরেছে ডাইনিং টেবিলের আলমারির কাঁচে। ঘুরে দেখেছে দরজার আড়াল থেকে কিছু একটা সরে গেছে। পর্দা নড়ে উঠেছে। —————————————————————————— আগের পর্ব – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৩ পরের পর্ব – রাই-কেশব (লাভ স্টোরি ) কলমে – অপরাজিতা = পর্ব ৫ আপনার মতামত জানান -