রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন রাজ্যপালের সঙ্গেও তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে গেল শাসকদল কলকাতা নদীয়া-২৪ পরগনা রাজ্য September 3, 2019 অতীতে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রাজ্যের রাজ্যপাল থাকার সময় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মাঝেমধ্যেই রাজভবনের সঙ্গে সংঘর্ষ রাতে দেখা গিয়েছিল নবান্নকে। কিন্তু সেই কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বিদায় নেওয়ার পর নতুন রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনকার যোগদান করলে তার সঙ্গে প্রথম দিনেই রাজ্যের শাসক দলের প্রতিনিধিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক অন্য মাত্রা পেয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়ত বা এই নতুন রাজ্যপালের সঙ্গে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবে শাসকদল। কিন্তু যেমনটা মনে করা হয়েছিল, তেমনটা হচ্ছে না। রবিবার শ্যামনগরে বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংকে মারধরের ঘটনায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার নিজের সফরসূচি কাটছাঁট করে হরিয়ানা থেকে ফিরে সোমবার দুপুরেই বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি বিজেপি এমপিকে দেখতে যাওয়ায় এবং গোটা ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করায় রাজ্যের সঙ্গে হয়ত বা তার দূরত্ব বাড়তে শুরু করল। সূত্রের খবর, এদিন অর্জুন সিংহকে হাসপাতাল থেকে দেখে বেরিয়ে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বলেন, “ওই এলাকায় যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমি উদ্বিগ্ন। রবিবার রাতে আমায় গোটা পরিস্থিতির কথা জানানো হয়। হরিয়ানায় আমি বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি সফরসূচি পরিবর্তন করে চলে এসেছি। আহত এমপি সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি গুরুতর জখম।” আর এরপরই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকরা জগদীপ ধনকারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমার থেকে আপনারাই এটা ভালো জানেন। তবে রাজ্যের এই হিংসাত্মক ঘটনায় আমি মর্মাহত।” আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - অন্যদিকে শ্যামনগরের এই ঘটনায় বারাকপুরের পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মার বক্তব্য তিনি জানতে চাইবেন বলেও জানান রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। শুধু তাই নয়, সব পক্ষকেই শান্তির আবেদন জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “বাংলায় হিংসার প্রয়োজন নেই। হিংসাকে বর্জন করে বিকাশের লক্ষ্যে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” কিন্তু সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করলেও একজন বিজেপি এমপিকে দেখতে রাজ্যপালের এভাবে সরাসরি হাসপাতালে চলে যাওয়াকে অনেকেই সমালোচনায় বিদ্ধ করতে শুরু করেছেন। একাংশের প্রশ্ন, আগামীদিনে এই ধরনের ঘটনায় ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-এমপি-মন্ত্রী আহত হলে রাজ্যপাল কি সেখানেও যাবেন? সূত্রের খবর, এদিন এরকমই এক প্রশ্ন তুলে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে রাজ্যপাল কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন! একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে রাজ্যপাল যে কায়দায় কাজ শুরু করেছেন, তা ওই সাংবিধানিক পদের গরিমাকে নষ্ট করছে। রাজ্যপালের কাজ রাজ্যপাট সামলানো। তাঁর রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়া শুভ লক্ষণ নয়।” অনেকেই বলছেন, বাংলায় তৃণমূলকে দমাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে জগদীপ ধনকারের নিয়োগের মূল কারিগর হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। দেশের বিভিন্ন জাট অধ্যুষিত কেন্দ্রে বিজেপি ভালো ফল করায় এই জগদীপ ধনকারকে পুরস্কৃত করেছে কেন্দ্র বলে দাবি বিশ্লেষকদের। তবে একজন সাংসদকে রাজ্যপাল দেখতে যাওয়ায় তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী সেই রাজ্যপালকে যেভাবে বিঁধলেন, তাকে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে অভিজ্ঞমহল। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এহেন বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, “কোনও রাজ্যে বিধায়ক-সাংসদদের মেরে হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনা রাজ্যপাল আগে দেখেননি। ওনার নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে যা দেখার সুযোগ হচ্ছে, তা তিনি নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবেন।” কিন্তু কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মত যদি বর্তমান রাজ্যপালের সাথেও এই অর্জুন সিংহের কাণ্ড থেকে রাজ্যের শাসকদলের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে, তাহলে কিভাবে সাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক সমন্বয় তৈরি হবে! তা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আপনার মতামত জানান -