এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > সরকারের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে বিরোধিতার পাশাপাশি প্রমাণের কাজও চলছে, ধন্দে সাধারণ

সরকারের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে বিরোধিতার পাশাপাশি প্রমাণের কাজও চলছে, ধন্দে সাধারণ

কেন্দ্রীয় সরকার যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি নিয়ে ঘোষণা করেন তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী রাজপথে মিছিল করে তীব্র বিক্ষোভ দেখান সেইসময়। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানানো হয়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মেনে কাগজ দেখানো হবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কল্যাণী পুরসভার কাজের মিল পাওয়া গেলনা।

সূত্রের খবর, কল্যাণী পুরসভা থেকে সম্প্রতি জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছিল আর সেখানেই আবেদনপত্র পূরণের সময় এমন একটি কলাম পূরণ করতে হচ্ছিল যেখানে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল ‘নাগরিকত্ব প্রমাণ’ দেওয়ার জন্য। এই ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসে আনন্দবাজারের ডিজিটাল বিভাগ আর তারপরেই রাজনৈতিক মহলে চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হয়। সম্প্রতি কল্যাণী পৌরসভা থেকে জন্মের শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয় রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। সূত্রের খবর, কল্যাণী পুরসভাকে জন্মের শংসাপত্র নিতে গেলে একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হয় এবং সেই আবেদনপত্রে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণের কথা বলা হয়েছে।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে রাজ্যবাসীর সামনে নিয়ে আসে আনন্দবাজার ডিজিটাল। ঘটনা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের শাসকদলের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। অনেকেই বলতে থাকে, নাগরিকত্ব প্রমাণ দেওয়ার ব্যাপারে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করছেন, সেখানে তাঁর রাজ্যে সন্তানের জন্মের শংসাপত্র নিতে গেলে নাগরিকত্বের প্রমাণ কেন দিতে হবে? ঘটনা সামনে আসার পরেই রীতিমত তৎপরতা শুরু হয় কল্যাণী পুরসভাতে। পুরকর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার থেকে কল্যাণী পুরসভা থেকে  জন্মের শংসাপত্র নিতে গেলে নতুন আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে যেখানে ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’ সংক্রান্ত কোন কলাম থাকবে না।

সম্প্রতি নাগরিকত্ব ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েতে জন্মের প্রমাণপত্র পাওয়ার জন্য ভিড় লেগেই থাকে। প্রমানপত্র পেতে গেলে নির্দিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েতের আবেদনপত্র পূরণ করতে হয়। কল্যাণী পুরসভাতেও এরকম আবেদনপত্র পূরণ করেই জন্মের প্রমাণপত্র নিতে হয়। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যায়, কল্যাণী পুরসভার উক্ত আবেদনপত্রের নয় নম্বর কলামে রয়েছে ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’। যেখানে পুত্র বা কন্যার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, বাবা এবং মায়ের নাম, ঠিকানা, তাঁদের বর্তমান-সহ জীবিত সন্তানের সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে, তার সাথে দিতে বলা হয়েছে হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা নিজের বাড়ি যেখানেই শিশুরা জন্মাক না কেন তার প্রমাণপত্র এবং সাথে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র।

এ প্রসঙ্গে সোমবার কল্যাণীর চেয়ারম্যান সুশীল কুমার তালুকদার জানিয়েছিলেন, ”কল্যাণী পুর এলাকার বাসিন্দা হলে, তাঁর প্রমাণপত্র চাই আমরা। এতে অন্য কোনও গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা না করাই ভাল।” কিন্তু সোমবার আনন্দবাজার ডিজিটাল খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই পুরোপুরি 180 ডিগ্রি ঘুরে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নতুন করে বলেন, ”আমরা নতুন করে আবেদনপত্র ছাপাচ্ছি। ওই আবেদনপত্রে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রের যে কলামটি ছিল, তা আর রাখা হবে না। পুরনাগরিকদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে বিরোধীদলের থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলা হয়, যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকত্ব ইস্যুকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত বিক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে, সেখানে তাঁর রাজ্যে কিভাবে এতদিন ধরে জন্মের প্রমাণপত্র আদায়ের জন্য নাগরিকত্ব প্রমাণ দেওয়ার মত ঘটনাটি ঘটে চলেছে! অন্যদিকে সূত্রের খবর, জন্মের প্রমাণপত্র নিতে গিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র চাওয়ার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, নাগরিকত্ব প্রমাণ এর কলামটি এনআরসি বা এনপিআরের সাথে কোনরকম যোগ রয়েছে কিনা।

ঘটনাটি আনন্দবাজার ডিজিটালে প্রকাশ হবার পরেই নড়েচড়ে বসে কল্যাণী পুরপ্রশাসন। কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীল কুমার তালুকদার এদিন জানিয়েছেন, ‘ওই আবেদনপত্রটি পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। এ বার নতুন করে ছাপানো হবে। তার জন্যে দু’তিন দিন সময় লাগবে।’ অন্যদিকে সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশে এরাজ্যে এনপিআর কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু কল্যাণী পুরসভায় নাগরিকত্ব প্রমাণ দেওয়ার ব্যাপারটি সামনে আসার সাথে সাথেই জানা যায়, টিটাগর ও কামারহাটি পুরসভাতেও এনপিআরের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছিল।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না মানার ফলে উত্তর 24 পরগনার কামারহাটি ও টিটাগর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই কড়া শাস্তির মুখে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কল্যাণী পুরসভার বিষয়টি সরকারের উচ্চস্তরে যাওয়ার পর পুর ও নগরন্নোয় দফতর নড়েচড়ে বসেছে। পুরো বিষয়টির ওপর তাঁরা এবার আলোকপাত করতে চলেছেন বলে খবর। অন্যদিকে, কল্যাণী পুরসভার এই ঘটনাটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে নতুন করে অস্ত্রে শান দিতে শুরু করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরসভা নির্বাচনের আগে কল্যাণী পুরসভার নাগরিকত্ব প্রমাণের বিষয়টি সামনে আসার ফলে এটিকেই এবার হাতিয়ার করে তুলবে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। তবে এই মুহূর্তে পুরো ব্যাপারটি শুধরে নেওয়ার কাজে নেমেছে কল্যানী পুরসভা। অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, যদি কল্যাণী পুরসভার নাগরিকত্ব প্রমাণের বিষয়টি আনন্দবাজার ডিজিটালে প্রকাশ না হতো, তাহলে কি পুরো ব্যাপারটি একইভাবে চলত শাসকদলের নাকের ডগায়? এভাবে দল নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করার ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেদিকে উৎসুক নজর রাখছেন রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!