রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের না যাওয়া নিয়ে এবার ‘সাফাই’ দিলেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় নদীয়া-২৪ পরগনা রাজ্য October 23, 2019 একের পর এক ইস্যু নিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। শাসকদলের বহু কাজের প্রতিবাদ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বেশ কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র ওপর নিগ্রহের ঘটনায় রাজ্যপাল চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শাসকদলের প্রতি। তার আগে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং এর উপর হয়ে যাওয়া হামলার ঘটনায় রাজ্যের প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজ্যের শাসক দল ও রাজ্যপালের মধ্যে দূর্গা পূজা কার্নিভালকে ঘিরে আবার বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল কিছুদিন আগেই। রাজ্যপালের অভিযোগ ছিল, তাঁকে রীতিমত অপমান করা হয়েছে প্রকাশ্যে। এই ঘটনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। এই বিরোধের রেশ মেলাতে না মেলাতেই রাজ্যপাল ও শাসকদলের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় রাজ্যপালের নিরাপত্তা নিয়ে। এতগুলো বিতর্কের প্রভাব পড়লো এবার রাজ্যপালের ডাকা সুন্দরবনের প্রশাসনিক বৈঠকে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।রাজ্য ও রাজ্যপাল এর সংঘাত নিয়ে এবার মুখ খুললেন তৃণমূলের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, রাজ্যের জনগণ রাজ্যপালকে নির্বাচিত করেনি, তাঁরা রাজ্য সরকারকে নির্বাচিত করেছে। মঙ্গলবার ঋতব্রত সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “সংবাদমাধ্যমে দেখেছি রাজ্যপাল প্রশাসনিক আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, তিনি বৈঠক করতে চান। কিন্তু প্রশাসনের কর্তারা রাজ্যপালকে জানিয়েছেন, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে রয়েছেন তাঁরা বৈঠকে থাকতে পারবেননা। রাজ্য চালাবার দায়িত্ব মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের। রাজ্যপালকে মানুষ নির্বাচিত করেনি।” রাজ্য ও রাজ্যপাল এর সংঘাতের কারণে এবার মনে করা হচ্ছে, রাজ্যপালের ডাকা প্রশাসনিক বৈঠক বিফলে গেল। এবং তারপরেই রাজ্যপাল ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে বললেন, ‘সবাই জানে 11 তারিখ (পড়ুন কার্নিভাল) কার পাবলিসিটি হয়েছিল চার ঘন্টা ধরে।’ আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সজনেখালি, ধামাখালিতে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু ওই বৈঠকে আমন্ত্রিত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা সভাধিপতিদের কেউই হাজিরা দেননি। উত্তর 24 পরগনা জেলা শাসক পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রশাসনিক বৈঠকে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনিও আসেননি। আর এতেই রাজ্যপালের ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যপাল তো রাজ্য সরকারের অধীনস্থ নয়, তাহলে বৈঠক করতে চাইলে রাজ্য সরকারের অনুমতি কেন লাগবে? রাজ্যপালের সাথে রাজ্য সরকারের সংঘাতের শুরু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেসময় রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য সরকার। এরপর জিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়েও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেছিলেন, “তদন্তের গতি প্রকৃতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে।” আর এরপর দুর্গাপুজোর কার্নিভাল নিয়ে যে বিরোধ হয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। এদিন সরকারি আমলাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমলারা রাজ্যপালের বৈঠকে যেমন গেলেন না, তেমনি আমলারা অবশ্যই যেন মনে রাখেন, মুখ্যমন্ত্রী চিরকাল থাকবেন না। কিন্তু সরকার থাকবে। রাজ্যপাল রাজ্যের কল্যাণের জন্যই বৈঠক ডেকেছিল সেই বৈঠকে না যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা মুকুল রায় সংবিধানের অবমাননার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকার যে ব্যবহার করছে, তাঁকে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তা সংবিধানকে অপমান করার সমান।” এ নিয়ে মুকুল আরো জানিয়েছেন, “এরাজ্যে আইনের শাসন নেই। গণতন্ত্র নেই। এটা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।” রাজ্যপালের বৈঠকে শাসক দলের অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দল দাবি করেছে, রাজ্যপালের সাথে রাজ্য সরকারের যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তার রেশ শাসকদলের অন্তর থেকে কিছুতেই কাটছে না। রাজ্যপালের সাথে সংঘাত তারা প্রতিনিয়ত বজায় রেখে চলেছে। রাজ্যপাল এর ডাকা প্রশাসনিক বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে তৃণমূল সরকারের আমলারা রাজ্যপালের মানহানি করল। এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজ্যপালের ডাকা প্রশাসনিক বৈঠকে না গিয়ে রাজ্যপালের প্রতি তাঁদের অনাস্থা এবং ক্ষোভ আরো স্পষ্ট করে দিল শাসকদল। তবে পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এধরনের প্রশাসনিক বৈঠক আবার ডাকেন কিনা এবং সেই বৈঠকে শাসক শিবির উপস্থিত থাকেন কিনা, সেদিকে নজর রাখবে তামাম রাজনৈতিক মহল। আপনার মতামত জানান -