প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – একুশের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীরভূম জেলায় তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কড়া নজর রেখেছেন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত দলীয় বৈঠক করে দলের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। এই অবস্থায় জেলার সাম্প্রতিক কর্মীসভাগুলিতে অনুব্রত মণ্ডলকে দলের কর্মীদের কাছেই উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। শুক্রবার রামপুরহাট কিষাণ মান্ডিতে তৃণমূলের বুথ ভিত্তিক একটি কর্মীসভায় আবারও উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এবং তখনই উপস্থিত কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অনুব্রত মণ্ডল রীতিমতো ‘অপদার্থ’ বলে তিনি কটাক্ষ করেন কৃষিমন্ত্রীকে। যথারীতি এই নিয়ে দলের অন্দরেই শোরগোল পড়ে যায়। 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অনুব্রত মণ্ডল এবার নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় পুরো ব্যাপারটি সামলানোর চেষ্টা করলেন। এদিন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় এর নাম ঘোষণা করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সুর পাল্টে কি অনুব্রত মণ্ডল ড্যামেজ কন্ট্রোল এর চেষ্টা করছেন? অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, আশীষ বন্দোপাধ্যায় এলাকার দীর্ঘদিনের তৃণমূল বিধায়ক। একই সাথে তিনি এমএলএ এবং মন্ত্রী। সুতরাং তাঁর নাম ঘোষণা করাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে অন্যান্য বিধায়করাও কি প্রার্থী হবার দাবিদার হবেন? সে প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য অনুব্রত মণ্ডল বল ঠেলে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে।

অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডল এদিন দাবি করেছেন, তিনি কোনমতেই আশিস বন্দোপাধ্যায়কে ‘অপদার্থ’ বলে কটাক্ষ করেননি। তিনি ‘অপদার্থ’ বলেছিলেন ব্লক সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে। এদিন তিনি দাবি করেন, গতকালের বৈঠকে তিনটি ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। তাঁর কাছে যে ফুটেজটি রয়েছে তাতেই পরিষ্কার জানা গেছে, তিনি কোনরকম বেফাঁস মন্তব্য করেননি কৃষিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে আজকের সভায় গতকালের বিতর্কের লেশমাত্র দেখা যায়নি। বরং পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডল এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট খোশমেজাজে সভায় ছিলেন।

তবে আজকের সভায় অনুব্রত মণ্ডলের গলায় উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় এর ভূয়সী প্রশংসা শোনা গেছে। শনিবার রামপুরহাটের বনহাট, বড়শাল ও দখলবাটির কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক ছিল। অন্যদিকে এলাকায় হারের তত্ত্বতালাশ করেন এদিন অনুব্রত মণ্ডল। এবং দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন, দলের কেউই যেন অভিমানে দূরে সরে না থাকে। প্রত্যেক এলাকায় বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের তৃণমূলে নিয়ে এসে মন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় এর হাত ধরে যেন দলে যোগদান করানোর ব্যবস্থা করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গতকাল অনুব্রত মণ্ডলের বাক্যবাণ ঘিরে খুব স্বাভাবিকভাবেই দলের অন্দরেও চলেছে সমালোচনা। সেই সমালোচনাকে চাপা দিতেই আজকের দলীয় বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলের পুরোপুরি ভোল বদল। অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূল শিবিরের যেকোনো রকম দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে বিরোধীরা। তাই কোনরকম দুর্বলতা যাতে প্রকাশ না পায় সেদিকে নজর রেখেই অনুব্রত মণ্ডলের আজকের পরিবর্তিত রূপ সামনে এলো।