এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শঙ্কুর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু, সিনেমাকে হার মানিয়ে মুকুলের হাত ধরে অধীর ঘনিষ্ঠ হেভিওয়েট যুবনেতা বিজেপিতে

শঙ্কুর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু, সিনেমাকে হার মানিয়ে মুকুলের হাত ধরে অধীর ঘনিষ্ঠ হেভিওয়েট যুবনেতা বিজেপিতে


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের পর অমিত শাহের সঙ্গে এক একান্ত বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙতে হলে সবার আগে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ দরকার দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনে। এই দুই সংগঠনের রাশ হাতে নেওয়া গেলে, ‘মাদার’ সংগঠন ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না। অমিত শাহ রাজি হলেও – এই দায়িত্ব দেওয়া হবে কাকে – সেই প্রশ্ন তোলেন। তখনই নাকি মুকুল রায় পুত্রসম শঙ্কুদেব পণ্ডার নাম প্রস্তাব করেন। একইসাথে জানান টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি হিসাবে কিভাবে দায়িত্বের সঙ্গে সামলেছেন সংগঠন।

কিভাবেই বা বাম জামানায় একের পর এক ভুয়ো মামলা দিয়েও রোখা যায় নি এই তরুণ তুর্কিকে – যার ফলস্বরূপ বাম নেতৃত্বকে ঘোল খাইয়ে প্রায় একক দক্ষতায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদ। আর এই সব কিছু জানার পরেই – শঙ্কুদেবের গৈরিকীকরণে সবুজ সঙ্কেত দিতে দেরি করেননি অমিত শাহ। এরপরেই রাজনৈতিক ‘গুরু’ মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে পদার্পন একদা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত স্নেহধন্য শঙ্কুদেব পণ্ডার। আর তিনি গেরুয়া শিবিরে যেতেই শাসকদলের আশঙ্কা ছিল তিনি ভাঙন ধরাবেন শাসকদলের ছাত্র সংগঠনে। ফলে, কঠিন ব্যারিকেডে ঘেরা হচ্ছিল ছাত্র সংগঠন।

কিন্তু রাজনীতির ময়দানের পাকা খেলোয়াড় শঙ্কুদেব পণ্ডা – ওই পথে না গিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হানলেন সরাসরি যুবতে, তবে তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখায় নয়, কংগ্রেসের যুবশাখায়। আর তারই ফলশ্রুতি হিসাবে বহু প্রচেষ্টা করেও অধীর চৌধুরীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ ও হেভিওয়েট যুবনেতা হিসাবে পরিচিত যে রাকেশ সিংকে তৃণমূল দলে নিতে পারে নি, তিনিই আজ দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে মুকুল রায় ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে পা রাখলেন গেরুয়া শিবিরে। রাজ্য-রাজনীতিতে এটা যেমন চমকপ্রদ দলবদল, তার থেকেও চমকপ্রদ যে কায়দায় এই যোগদানের প্রক্রিয়াটি সামলালেন শঙ্কুদেব পণ্ডা – তা হার মানিয়ে দেবে যে কোন থ্রিলার ছবির চিত্রনাট্যকেও।

রাকেশ সিংয়ের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএমের বিরোধিতা করে কংগ্রেস করে এসেছেন। কিন্তু, বর্তমান তৃণমূল সরকার নাকি বামফ্রন্ট সরকারের থেকেও ভয়ঙ্কর। তাঁর মত দক্ষিণ কলকাতার দাপুটে যুবনেতাকে যখন অনেক অফারেও কংগ্রেস থেকে বের করে আনা যায় নি, তখন শুরু হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা দিয়ে তাঁকে বিপাকে ফেলার পন্থা। এমনকি এই প্রক্রিয়ায়, তাঁর কানাডা-প্রবাসী পুত্র কলকাতায় ছুটিতে বাড়ি এলে, ছাত্র বলে তাঁকেও নাকি রেহাই দেওয়া হয় নি। তাঁকেও চলে জেরার নামে পুলিশের নিপীড়ন। আর সবথেকে মজার কথা, তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার এইরকম একের পর এক ভুয়ো মামলা সাজালেও, পাশে দাঁড়াননি কোনো কংগ্রেস নেতা।

উল্টে, একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সে যাত্রায় রাম জেঠমালানি তাঁর হয়ে সওয়াল করে তাঁকে বাঁচান, নাহলে কার্যত আজ জেলে পচে মরতে হত এই দাপুটে নেতাকে বলে জানালেন তিনি নিজেই। আর এরপরেই রাকেশ সিং ঠিক করে ফেলেন, অনেক হয়েছে আর নয় – যদি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হয়, তাহলে একমাত্র উপায় বিজেপিতে যোগদান। আর এরপরেই তিনি সোজা দিল্লিতে গিয়ে দেখা করেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেড়ে ফেরার পথে নিজের বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন – তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ – তিনি নাকি আইনক্স হলে ‘দা অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইমমিনিস্টার’ ছবির প্রদর্শনের সময় হল ভাংচুর করেছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বিজেপির এক নেতার কথায়, আসলে রাকেশ সিংয়ের জানা ছিল না, বিধাননগর পুলিশের একটি সেলের কাজই হল, কলকাতা থেকে দিল্লিগামী বিমানে কে উঠছে (তা সে তৃণমূল, বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস যে দলেরই হন না কেন!) তার খবর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর তাই রাকেশ সিং দিল্লির বিমানে ওঠা ইস্তক তাঁর পিছনে আঠার মত লেগে থাকে গোয়েন্দারা। এরপর তিনি দিল্লিতে মুকুলবাবুর বাড়িতে যেতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, তাঁর বিজেপি যোগের সম্ভাবনার কথা। আর তাই ফিরতি পথেই তাঁকে বাড়ি ঢোকার মুখে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয়। রাকেশবাবুর কথায়, এর সবথেকে বড় প্রমান আমাকে ‘দা অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইমমিনিস্টার’ ছবির প্রদর্শনের সময় হল ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলেও – সারারাত ধরে থানায় শুধু দুটি প্রশ্ন করা হয় – মুকুল রায়ের সঙ্গে কি কথা হল? শঙ্কুদেব পণ্ডার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা?

তিনদিন বাদে সেই মামলার জামিন পেলেও, নতুন একটি মামলায় আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে নেয় পুলিশ। আর এরপরেই পুরো ব্যাপারটি সামলাবার দায়িত্ব শঙ্কুদেব পণ্ডার হাতে ছেড়ে দেন মুকুল রায়। দায়িত্ব পেতেই শঙ্কুদেব অপেক্ষা করছিলেন কখন রাকেশ সিং জামিন পান – আর তারপর দুঁদে গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে, দেন এক মাস্টারস্ট্রোক। দিল্লিতে বসেই রাকেশ সিংয়ের জন্য দিল্লির বদলে কেটে দেন অন্য জায়গার বিমানের টিকিট! সেখান থেকে ৪ বার গাড়ি বদলে ও ২ বার ট্রেন বদলে নিয়ে যান বাংলা থেকে অনেক দূরের এক রাজ্যে। তারপর সেখান থেকে অন্য একটি বিমানে করে নিয়ে আসেন দিল্লির পার্শ্ববর্তী এক রাজ্যে। তারপর সেখান থেকে গাড়িতে করে রাকেশ সিংকে দিল্লির এক নিরাপদ স্থানে এনে কার্যত লুকিয়ে রাখেন নির্বাচন ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত।

কিন্তু, আজ সকালে রাকেশ সিং যখন সেখান থেকে বেরিয়ে বিজেপির সদর দপ্তরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন তখনই তাঁকে পুনরায় ঘিরে ফেলে এসটিএফের একটি দল ও দিল্লি পুলিশ। কোনোরকমে খবর পৌঁছায় শঙ্কুদেবের কাছে – আর এরপরে তাঁর তৎপরতায় খবর যায় মুকুলবাবুর কাছে। মুকুলবাবু নিজে দ্রুত পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে – এসটিএফ ও দিল্লি পুলিশকে প্রশ্ন করেন, কি চার্জ আছে রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে? কেন তাঁকে আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে? কার নির্দেশে করা হচ্ছে? এমনকি স্পষ্ট জানিয়ে দেন – এইসবের সদুত্তর না দিয়ে যদি রাকেশ সিংকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা হয়, তাহলে তিনি সরাসরি নির্বাচন কমিশনে যাবেন!

মুকুলবাবুর এই রনংদেহী মূর্তি দেখে সেখান থেকে দ্রুত এসটিএফ ও দিল্লি পুলিশ চলে যায়। মুকুলবাবুর পিছনের গাড়িতেই বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন মুকুল রায় ও কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র হাত ধরে। বিজেপিতে যোগদান করে রাকেশবাবুর বক্তব্য, আমি একা নোই, আমার সঙ্গে প্রায় ৫০ জন দক্ষিণ কলকাতা কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা বিজেপিতে যোগদান করলেন। সবথেকে বড় কথা যাঁদের কথা বললাম তাঁরা সকলেই কোনো না কোন ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত, ফলে আগামীদিনে ওই ইউনিয়নগুলোও বিজেপির ছাতার তলায় আসবে।

রাকেশবাবুর আরও বক্তব্য, বাংলায় আমি সবসময়েই বামফ্রন্টের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব ছিলাম। কিন্তু, বামফ্রন্টকে সরিয়ে এখন যারা রাজ্য চালাচ্ছে, সেই তৃণমূল কংগ্রেস বামফ্রন্টের থেকেও ভয়ঙ্কর। ফলে, বাংলার মানুষকে রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত করতে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের নেতৃত্বে আস্থা রেখে বিজেপিতে যোগদান করলাম। আর, এতবড় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ ‘মাস্টারমাইন্ড’ শঙ্কুদেব পণ্ডা কি বলছেন? টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ছোট্ট জবাব, নো কমেন্টস!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!