এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ন্যায্য দাবি জানাতে গিয়ে গ্রেপ্তার ১৮ সরকারি কর্মী – কি বলছেন কর্মচারী আন্দোলনের রথী-মহারথীরা?

ন্যায্য দাবি জানাতে গিয়ে গ্রেপ্তার ১৮ সরকারি কর্মী – কি বলছেন কর্মচারী আন্দোলনের রথী-মহারথীরা?


বকেয়া ডিএ ও কেন্দ্রীয় হারে বেতন না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছেন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারী। এই নিয়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন, আইনি লড়াই – সবকিছুই জারি রেখেছেন দেওয়ালে একপ্রকার পিঠ থেকে যাওয়া সরকারি কর্মীরা। আর, আজ সেই ক্ষোভের আঁচ পৌঁছে গেল একেবারে রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষমহল – নবান্নে।

সরকারি কর্মচারী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিজয় শঙ্কর সিনহার নেতৃত্ত্বে আজ খোদ নবান্নে এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সরকারি কর্মচারীরা। আর সেই বিক্ষোভের আগুন নেভাতে, নজিরবিহীনভাবে ১৮ জন সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যে ঘটনার জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে সরকারি কর্মচারী মহল। আর শেষ পর্যন্ত – সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে গ্রেপ্তার করা সরকারি কর্মচারীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয় বন্ধু মিডিয়ার তরফে এক্সক্লুসিভলি যোগাযোগ করা হয় বর্তমানে রাজ্যে সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ত্ব দেওয়া প্রায় সমস্ত রথী-মহারথীদের। কি বলছেন তাঁরা আজকের সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে?

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

দীর্ঘদিন ধরে এইভাবে বকেয়া ডিএ না পাওয়ায় এবং তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও বেতন কমিশন চালু না করার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সারা রাজ্যজুড়ে ডিএম অফিসে আজ বিক্ষোভ হয়েছে এবং সব সব দপ্তরে দপ্তরে এক ঘন্টা করে ধর্ণা হয়েছে। নবান্নতেও আমরা একই দাবিতে আমরা কর্মসূচি নিয়ে এবং সেই সময় আমরা ‘বডি-পোস্টার’ পরে স্লোগান দিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি করি। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অবস্থানেও পুলিশ এসে আমাদের ধাক্কা দেয়, বডি-পোস্টার ছিড়ে দেয় এবং তারপর আমাদের সেখান থেকে টানতে টানতে বাইরে বার করে।

আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় ও খারাপ ব্যবহার করে পুলিশ এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের পুলিশ ভ্যানে তুলে শিবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারা রাজ্য জুড়েই এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং আমাদের নিঃশর্ত মুক্তির আওয়াজ ওঠে। আমরা থানার ভিতরেও আমাদের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আন্দোলন করি এবং শেষপর্যন্ত বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় আমাদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।

আমাদের বর্তমানে ৫৬% মহার্ঘভাতা বাকি, জানুয়ারিতে আবার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ডিএ পাবেন – ফলে আরও বাড়বে ফারাক। অন্যদিকে, তিন বছরেও পে কমিশন হল না – নজিরবিহীনভাবে আবার ৬ মাসের জন্য তা বর্ধিত করা হল। সবথেকে বড় কথা, ভারতবর্ষের প্রায় সবকটি রাজ্যই বর্তমানে কেন্দ্রীয়হারে ডিএ ও বেতন পাচ্ছেন – অথচ আমরা দিনের পর দিন বঞ্চিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পাঁচ দফা ন্যায্য দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম – কিন্তু পুলিশকে দিয়ে রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করল – তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।

এর প্রতিবাদে আগামীকাল সারা বাংলা জুড়ে বিক্ষোভ হবে। শুধু তাই নয়, আগামী ৮ ও ৯ ই জানুয়ারী আমরা ধর্মঘটে যাচ্ছি। সেই ধর্মঘটে আমরা দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সরকারি কর্মচারী সংগঠনকে আহ্বান জানাচ্ছি – আমরা আমাদের দাবি আদায়ে ওই দুদিন প্রশাসনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি – যাতে করে প্রশাসন বাধ্য হয় বকেয়া ডিএ ও অবিলম্বে পে কমিশন চালু করতে।

– বিজয় শঙ্কর সিনহা, কো-অর্ডিনেশন কমিটি

আজকের ঘটনায় রাজ্য সরকার ও পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এইভাবে ন্যায্য দাবির আন্দোলন থেকে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার নজিরবিহীনভাবে পে-কমিশনের সময় বাড়িয়ে যাচ্ছে – ফলে সরকারি কর্মচারীদের মনে প্রচন্ড রকমের ক্ষোভ জমে গেছে। সরকারি কর্মচারীরা একপ্রকার নিরুপায় হয়েই রাস্তায় নেমে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এই মাসেই আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামছি। কিন্তু, এ সত্ত্বেও বলব, এককভাবে আন্দোলন না করে, ঝাণ্ডার রঙ না দেখে যৌথ আন্দোলনের মাধ্যমেই নবান্নে একটা বড় ধাক্কা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। সরকারি কর্মচারীরা বঞ্চিত হতে হতে যে জায়গায় পৌঁছেছেন – যে কোন সময় একটা বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে।

এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, শাসকদলের সরকারি কর্মচারী সংগঠনের অন্যতম এক শীর্ষনেতাকে আসরে নামাতে হয়েছে। সঞ্জীব পাল বাবুকে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়ে সরকারি কর্মচারীদের এই ক্ষোভকে লঘু করানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু, এইভাবে এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনাকে চাপা দেওয়া যাবে না – ঝাণ্ডার রঙ না দেখে দলমত নির্বিশেষে এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বৃহত্তর আন্দোলনই একমাত্র পথ।

– দেবাশিস শীল, সরকারি কর্মচারী পরিষদ

ন্যায্য দাবিতে সরকারি কর্মচারীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন আর সেখান থেকে পুলিশ দিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই ঘটনার তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি। আর এই আন্দোলন তো রাজ্যে প্রথম নয় – বাম আমলেও এমন আন্দোলন হয়েছে। এমনকি, রাইটার্স বিল্ডিংয়ে এরকম আন্দোলন হয়েছে এবং তখন এরকম বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন তৃণমূল নেতৃত্ত্ব রাইটার্সে এসে আমাদের তখন সমর্থন জানিয়েছিলেন।

তাহলে আজকে কি এমন পরিস্থিতি হল যে কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা ডিএর দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন করতে পারবে না? ফলে, আজ যে ১৮ জন সরকারি কর্মচারী ও কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হল তার ত্বর ধিক্কার জানাচ্ছি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যতদূর যেতে হয় আমরা যাব। এই আন্দোলনকে যতটা তীব্র করা যায়, যতখানি ছড়িয়ে দেওয়া যায় আমরা সব করব।

রাজ্য সরকার বুঝতে পেরেছে যে অবস্থা খুব খারাপ। সমস্ত শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী – প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে প্যারাটিচার, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে শুরু করে আশা কর্মী, রাজ্য সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে হাই স্কুলের টিচার, সিভিক পুলিশ থেকে শুরু করে ভিলেজ পুলিশ, হোমগার্ড – সবাই কিন্তু আজ একযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

তাই এইভাবে গ্রেপ্তার করে বা দমন-পীড়ন করে আর বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী কত গ্রেপ্তার করতে পারেন? কতবড় থানা বা জেল আছে ওনার আমরা – সরকারি কর্মচারীরা তা দেখতে চাই এবার। ১০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে উনি কিভাবে গ্রেপ্তার করেন আমরাও সেটা দেখতে চাই। কনফেডারেশনের তরফ থেকে এই আন্দোলনে আমরা কো-অর্ডিনেশনের পাশে থেকে সমর্থন জানাচ্ছি এবং এই আন্দোলনে যেভাবে সম্ভব আমরা পাশে থাকছি।

– সুবীর সাহা, কনফেডারেশন অফ গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ীজ

আজকের ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই – সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টায় পুলিশকে দিয়ে যেভাবে টানা-হ্যাঁচড়া করিয়ে গ্রেপ্তার করানো হল – রাজ্য-রাজনীতিতে এক কথায় তা নজিরবিহীন। এই ঘটনা – রাজ্য-রাজনীতিতে এক ‘কালো-দিন’ হিসাবে থেকে যাবে।

আমরা, সামগ্রিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী শনিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে বসছি – সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, এর প্রতিবাদ জানাতে আমরা আগামী সোমবার কালো-ব্যাজ পরে কাজ করতে যেতে চলেছি। আমরা গত সপ্তাহেই কর্মচারী ভবনে চারটি বামপন্থী সংগঠন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ৮ ও ৯ ই জানুয়ারী আমরা গোটা রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটে যেতে চলেছি।

সেই ধর্মঘটে দলমত নির্বিশেষে আমরা সমস্ত সরকারি কর্মচারী সংগঠনকে রঙ ভুলে আহ্বান জানাচ্ছি এবং এই ধর্মঘট সারা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি দপ্তরে হবে। শুধু তাই নয়, আগামী ১৮ ই ডিসেম্বর চারটি বামপন্থী সংগঠন রানী রাসমণি রোডে জমায়েত করে রাজ্য সরকারকে এই ধর্মঘটের নোটিশ প্রদান করবে।

– সঙ্কেত চক্রবর্তী, স্টিয়ারিং কমিটি

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!