এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > উৎসবের মরসুম শেষ হলেই শাসকদলের সংগঠনে বড়সড় পরিবর্তন? বাড়ছে জল্পনা

উৎসবের মরসুম শেষ হলেই শাসকদলের সংগঠনে বড়সড় পরিবর্তন? বাড়ছে জল্পনা

উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত মালদহ জেলা। রাজনৈতিক দিক থেকে মালদহ জেলার একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। বিগত 35 বছরের রাজ্যের বামফ্রন্ট জমানাতেও মালদা জেলাকে দক্ষিণপন্থীদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারেনি রাজ্যের বাম শিবির।

পরবর্তীতে 2011 সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করলেও মালদা সেই কংগ্রেসিদের দখলেই রয়ে গেছিল। কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচন আসতে আসতেই জেলার রাজনীতির ছবিটার কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের সাংসদ মৌসম বেনাজির নূর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে মালদহ উত্তর কেন্দ্র থেকে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইটা মৌসমের পক্ষে সুখকর হয়নি।

বস্তুত, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী খগেন মুর্মুর কাছে পরাজিত হতে হয় মৌসম বেনজির নূরকে। তবে নির্বাচনের হারের পরই মালদহ জেলার সাংগঠনিক শক্তিকে মজবুত করতে সেই মৌসম বেনজির নূরকে মালদহের দায়িত্ব দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে মৌসাম বেনাজির নুর তৃণমূলের সভাপতি হওয়ার পরেই অনেকে মনে করেছিলেন বরকত গনি খান চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে কাজ করতে দেখেছিলেন মৌসম বেনজির নুর এবং রাজনৈতিক পরিবারে ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার কারণে তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু তিনি জেলা সভাপতি হওয়ার পরে ঘরে এবং বাইরে তৃণমূলের অন্তর্কলহ ছবি সামনে আসতে শুরু করে। একদিকে যেমন পুরাতন মালদা পৌরসভায় নিজের দলের পৌরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে হাজির করেন দলীয় কাউন্সিলররা,

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে তেমনই ইংরেজবাজার পৌরসভায় চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। নীহারবাবু প্রকাশ্যেই অভিযোগ করতে থাকেন, কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে হেনস্থা করেছেন।

সম্প্রতি কিছুদিন আগে মালদহ জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল সরকার ওরফে বাবলাবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তিনি অতিসত্বর রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথে রওনা দেবেন। এমনকি পরবর্তী পৌরসভা নির্বাচনে তিনি করবেন না বলেও জানিয়ে দেন এবং গোটা ঘটনার জন্য তিনি জেলা সভাপতি এবং জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করতে থাকেন।

আর এরকম একটা পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে মালদহ জেলার রাজনীতি যে ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই জেলা নেতৃত্বের মনে। আর তাই উৎসবের মরসুম শেষ হতে না হতেই এলাকায় সাংগঠনিক পরিবর্তন আনতে চলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

জানা যায়, এতদিন তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক ভিত্তিক কমিটি ছিল। আর সেই ব্লক ভিত্তিক কমিটি অনুযায়ী প্রতিটি ব্লকে একটি করে সভাপতি ছিলেন। যে সভাপতি গোটা ব্লককে পরিচালনা করতেন। কিন্তু এবারে ব্লক ভিত্তিক কমিটির পরম্পরা তুলে দিয়ে শুরু হবে বিধানসভা ভিত্তিক কমিটি। যে সমস্ত এলাকায় দলের বিজয়ী বিধায়ক রয়েছে, সেই সমস্ত এলাকায় বিধায়করাই হবে এলাকার চেয়ারম্যান।

আবার যেখানে বিধায়ক নেই, সেখানে তিনজন কনভেনার নিযুক্ত করে অথবা কোনো মনোনীত চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই ক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটাকেই কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানা গেছে তৃণমূল সূত্রে।

মালদা জেলার ইংলিশবাজার ব্লকের মধ্যে মিলেমিশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে বিধানসভা কেন্দ্র। যার মধ্যে মানিকচকের মধ্যে পড়ে মিল্কি এবং শোভানগর। অন্যদিকে মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে নরহাট্টা অঞ্চল। তাই কর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিককারণে দ্বন্দ্ব রয়েছে, কোন কোন কর্মী, কোন কোন বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত হয়ে কাজ করবে!

পাশাপাশি তাদের প্রচারের ভিত্তি বা স্থানীয় সমস্যা সমাধানের ভিত্তি বা কী হবে, তা নিয়েও দ্বন্দ্বে রয়েছে জেলা তৃনমূলের কর্মীরা বলে খবর। কিন্তু 2019 সালে সমগ্র রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ফল খুব একটা ভালো না হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রশান্ত কিশোরকে তৃণমূলের নির্বাচনী বৈতরণীকে 2021 সালে পারে লাগানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা বলে ব্লক কমিটি নয়, বিধানসভা কমিটি গঠন করে দলের সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। যদিও প্রশান্তবাবুর সঙ্গেই ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব।

মালদহ জেলার ক্ষেত্রে অবশ্য দলের শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে একটি আলাদা প্রয়োজন রয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। কারণ এই জেলাতে ভোটে জিতে আসা এমপি থেকে শুরু করে বিধায়কদেরকে দলে শামিল করতে পারলেও জনগণের ভোটে জিতে কখনই সেইরকম শক্তি প্রদর্শন করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই সাংগঠনিক বিস্তারের মাধ্যমে সেই অসাধ্য কাজ যদি মালদহ জেলার মাটিতে সাধিত হয়, তাহলে তা তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে একটি বড় পাওয়া হবে।

আবার বিধানসভা ভিত্তিক কমিটি গঠন করার মধ্যে দিয়ে আগামী 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনের কিছুটা আভাসও পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। প্রায় দলীয় সকল নেতাদের মতে, যারাই কিনা বিধানসভা ভিত্তিক কমিটির চেয়ারপারসন হবেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তারাই প্রার্থী হতে পারেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

মালদহ জেলার ক্ষেত্রে যেহেতু তৃণমূলের বেশিরভাগ বিধায়ক নেই, সেহেতু এই জেলায় বিধায়কহীন বিধানসভাগুলিতে যে সমস্ত কনভেনার বা চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হবে, সেই সমস্ত ব্যক্তিরা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কাজের ভিত্তিতে টিকিট পেতে পারে বলে মনে করছেন একাংশ।

কিন্তু পথ চলতে চলতে একদিকে জেলা সভাপতি মৌসম বেনাজির নূরের সঙ্গে অন্যান্য নেতাদের সংঘাত অন্যদিকে ব্লক থেকে শুরু করে অঞ্চল পর্যন্ত সংগঠনকে চাঙ্গা করে তোলা। সবকিছু মিলিয়ে মালদা জেলায় সংগঠনকে চাঙ্গা করা তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রতিকূল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন নিজেদের প্রতিকূলতার হাওয়াকে কাটিয়ে সাংগঠনিক শক্তির জোরে তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক বৈতরণীকে কিভাবে পার করতে পারে, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!