ক্রমশ রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের ‘মুখ’ হয়ে উঠছে সরকারি কর্মচারী পরিষদ বিশেষ খবর রাজ্য April 2, 2018 বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য দাবী আদায়ের পথে একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই বকেয়া ডিএ ও ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশের দাবিতে অভিনব ‘ঘেউ ঘেউ’ কর্মসূচি করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এর কিছুদিন পরেই অভিরূপ সরকারের সঙ্গে দেখা করে সত্ত্বর ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার পাশাপাশি, যতদিন না তা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ১৫% ভাতা দেওয়ার সুপারিশ জানানো হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে অভিরূপবাবু জানান সেই দাবি মেনে নিতে তাঁর নৈতিকভাবে কোনো আপত্তি নেই। এরপরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনে দেখা করে ভোটের সময় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষার দাবিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা ও নির্বাচনী দায়িত্ত্ব পালনের সময় কোনো রাজ্য সরকারি কর্মচারীর মৃত্যু হলে ১০ লক্ষ টাকা ও আহত হলে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসে। ক্ষতিপূরণের দাবি ও অঙ্ক তৎক্ষণাৎ নির্বাচন কমিশন মেনে নিলেও, যেহেতু সুরক্ষার ব্যাপারটি রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীল, তাই তা গুরুত্ত্বের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবার কথা জানায়। সরকারি কর্মচারী পরিষদের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আবগারি দপ্তরে সরকারি কর্মীদের ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তার বদলে এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার বোর্ড করার আদেশনামা বের হয়। কিন্তু সরকারি কর্মচারী পরিষদের জোরালো দাবির পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সংগঠনের দাবির কাছে মাথা নুইয়ে শেষপর্যন্ত সরকার ওয়েবসাইট থেকে সেই আদেশনামা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। আর এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই আগামী ২৪ শে এপ্রিল এস্প্ল্যানেডের ওয়াই চ্যানেলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে এক অভিনব বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করতে চলেছেন তাঁরা। সেই কর্মসূচিতে বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের পাশাপাশি বিজেপি শিক্ষক সেল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদ,পরিবহন কর্মচারী সংগঠন ও বিদ্যুৎ পর্ষদ কর্মচারী সংগঠনের নেতৃ ও কর্মীবৃন্দও যোগদান করবে। এই প্রসঙ্গে বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন বিজেপি প্রভাবিত হলেও, আমরা দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের উপর রাজ্য সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে লড়াই করে যাচ্ছি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা সকালেই মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন তাঁর সরকার নাকি ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকার, অথচ সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া ডিএ দিচ্ছেন না, অন্য সব রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়ে গেলেও আমাদের এখনো কেন্দ্রীয় হারে বেতন কমিশনের সুপারিশই জমা পড়ল না। সপ্তম বেতন কমিশন তো দূরের কথা, কেন্দ্রীয় হারে বেতন কমিশনের সুপারিশ গত আড়াই বছর ধরে জমা পড়ছে না। উল্টে, দীর্ঘসূত্রিতা জারি রেখে আগামী ২৬ শে নভেম্বর পর্যন্ত বেতন কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা করা হল, অর্থাৎ আগামী ২৬ শে নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হারে বেতন পাওয়ার আশা রাজ্য সরকারি কর্মীদের কার্যত নেই। তাহলে উনি কি সরকারি কর্মচারীদের ‘মানুষ’ বলেই মনে করেন না? উল্টে ৫৪% ডিএ বাকি থাকার সময় মাত্র ১৫% ডিএ দিয়ে এই সরকারি কর্মচারীদের কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে তুলনা করেন! অথচ দেখুন কিছুদিন আগেই ত্রিপুরাতে নতুন সরকার এই সপ্তম বেতন কমিশনের পুরো সুপারিশ লাগু করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দেবাশিসবাবু আরো যোগ করেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের আর্জি জানানোর পরের দিনই কিন্তু বিজেপি রাজ্য সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন – এই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হবে। ফলে, আজ যাঁরা রাজ্যের শাসকদলের সংগঠন করেন বা যাঁরা সেভাবে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন – তাঁরাও দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। কেউ সরাসরি এসে আমাদের সংগঠনে যুক্ত হচ্ছেন, কেউ বা পিছন থেকে আমাদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারের শাস্তির মুখে পড়ার ভয়ে। দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনায় ক্ষোভের পাহাড় যে কি উচ্চতায় পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী কল্পনাও করতে পারছেন না! দুদিন আগেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে কর্মরত কয়েকজন কর্মচারীবন্ধু আমাদের সংগঠনে যোগ দেন। আগামী মাসে আলিপরদুয়ারে একটি সভা হবে, সেখানেও বড় সংখ্যায় সরকারি কর্মচারীরা আমাদের সংগঠনে যোগদান করবেন। আর তাই ক্রমশ রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠছে বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদ। আমাদের আশঙ্কা সরকারী কর্মচারীদের সংগঠন করার অধিকারটাই কেড়ে নেবে এই স্বৈরাচারী তৃণমূল সরকার, তাই এখন আর রঙ না দেখে সমস্ত স্তরের কর্মচারীবন্ধুরা আন্দোলনের ময়দানে নামুন – তা নাহলে মনে রাখবেন শেষের সেদিন কিন্তু ভয়ংকর! আপনার মতামত জানান -