এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বিনা অনুমোদনে অনুপম-কেষ্টর ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’, দ্রুত কেন্দ্রে ফেরার কড়া বার্তা দলীয় পর্যবেক্ষক শঙ্কুর

বিনা অনুমোদনে অনুপম-কেষ্টর ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’, দ্রুত কেন্দ্রে ফেরার কড়া বার্তা দলীয় পর্যবেক্ষক শঙ্কুর


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – আজ সারাদেশের সঙ্গে বাংলার পাঁচ জেলার ৮ লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ ছিল। আজই প্রথম উত্তরবঙ্গের গন্ডি ছাড়িয়ে দক্ষিণবঙ্গের সীমানায় পৌছালো বাংলার ভোটগ্রহণ পর্ব। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে দক্ষিণবঙ্গ মানেই অধুনা শাসকদল তৃণমূলের গড়, কিন্তু এবারের ভোট পূর্ববর্তী বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল – এখানে গেরুয়া শিবিরের তুমুল উত্থান হচ্ছে। ফলে, এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া কেমন হয় সেদিকে কড়া নজর ছিল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে এই ৮ আসনের মধ্যে অন্যতম দুটি আসন হল তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের গড় বলে পরিচিত – বোলপুর ও বীরভূম।

সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণই ছিল – সংবাদমাধ্যমের ভাষায় যা ‘মশালাহীন’। কিন্তু, প্রায় নিস্তরঙ্গ সেই দিনে রীতিমত চমক এল দুপুরের পর। যখন, বিজেপির যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অনুপম হাজরা হঠাৎ করেই দেখা করেন বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের সাথে। অনুপমবাবু ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে বোলপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। কিন্তু, তারপর থেকেই অনুপমবাবু ও অনুব্রতবাবুর সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হতে থাকে। এর আগে বহুবারই তিনি প্রকাশ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে।

এমনকি, যখন তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হন – তখনও তিনি অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন। অনুব্রত মন্ডলকে ‘বীরভূম জেলার মুখ্যমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন বীরভূম জেলায় এই নেতার ক্ষমতা নাকি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও বেশি। আর তা এতটাই বেশি যে, বীরভূম জেলায় প্রবেশ করতে গেলে স্বয়ং মমতা ব্যানার্জিকে অনুব্রত মন্ডলের থেকে নাকি অনুমতি নিতে হয়! অনুব্রত মন্ডলের জন্যই তিনি কোনো দলবিরোধী কাজ না করা সত্ত্বেও তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিস্কৃত হতে হয়েছে বলেও জানান।

আর তাই, আজ যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে এবং তিনি এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি শিবিরের প্রার্থী – সেখানে এই সাক্ষাৎ ঘিরে তীব্র জল্পনা ছড়ায় রাজ্য-রাজনীতিতে। শুধু তাই নয়, তিনি অনুব্রতবাবুর সঙ্গে দেখা করে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন এবং ভাত-পোস্ত-মাছ দিয়ে অনুব্রতবাবুর বাড়িতেই দুপুরের খাওয়া সারেন। আসলে, অনুপম হাজরা এবারে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হলেও, আদতে তিনি বোলপুরের ভোটার। আজ এসেছিলেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। এদিকে সম্প্রতি অনুব্রত মন্ডলের মাতৃবিয়োগ হয়েছে, ফলে সমস্ত কিছু ভুলে – এই কঠিন সময়ে অনুব্রতবাবুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই এদিন তিনি সেখানে যান।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অনুপমবাবু বিদায়ী সাংসদ হলেও, ব্যক্তিগত জীবনে একজন অধ্যাপক ও সজ্জন মানুষ হিসাবেই পরিচিত। এখনও রাজনীতির প্যাঁচ-পয়জার অতটা বোঝেন না, সুতরাং তিনি একজন সাধারণ ভদ্র মানুষের মত আরেকজন মানুষের জীবনে ‘মাতৃবিয়োগের’ মত কঠিন সময়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই কাজ করে থাকতে পারেন। কিন্তু, তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, তিনি যাঁর সঙ্গে সৌজন্য প্রকাশ করতে গিয়েছিলেন, তিনি রাজনীতির ময়দানে একজন পোড়খাওয়া ব্যক্তি। সুতরাং, তিনি যে কোনো মুহূর্তেই এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎকেও’ সহজেই মুড়ে দিতে পারেন রাজনীতির মোড়কে! আর বাস্তবে হলোও তাই!

এই সাক্ষাতের শেষেই কুশলী অনুব্রত মন্ডল সটান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিলেন, ও (অনুপম হাজরা) বোকামি করেছে, এবার ওকেই প্রার্থী করতাম। যদি দলে আসতে চায় তাহলে দলে নেব। অনুপম হাজরার ‘সৌজন্য’ উড়িয়ে যা রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে চর্চিত বিষয়। তৃণমূল নেতার এই মন্তব্যের পরে, আগামী দফার নির্বাচনগুলিতে তো বটেই – আজকের ভোটগ্রহণের বাকি পর্বও যে বিশেষভাবে প্রভাবিত হতে পারে এই মন্তব্যের পরে! বিশেষ করে, অনুপমবাবুর এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দলীয় স্তরে অনুমোদিত ছিল না। আর তাই সুযোগ পেতেই, অনুব্রত মন্ডল এই নিয়ে রাজনীতি করেছেন, যা রীতিমত অস্বস্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের।

এদিকে সূত্রের খবর, অনুপম হাজরার এই রাজনৈতিক ‘সৌজন্য সাক্ষাতের’ খবর পেতেই প্রচন্ড চটেছেন দলের তরফে কলকাতা ও যাদবপুর কেন্দ্রের বিশেষ পর্যবেক্ষক শঙ্কুদেব পণ্ডা। এই কথা তাঁর কানে যেতেই তিনি নাকি সটান ফোন করে অনুপম হাজরাকে সত্বর নিজের কেন্দ্র যাদবপুরে ফেরার কড়া নির্দেশ দেন। অনুপমবাবুও সেই মত রাতের মধ্যেই নিজের কেন্দ্রে ফেরত যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। তবে, এই ঘটনা যে এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে – তা কিন্তু নয়। অনুপমবাবুর এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ ও তার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের ‘রাজনীতির’ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরে।

এমনিতেই, কলকাতা-দক্ষিণ ও যাদবপুর কেন্দ্রের দায়িত্ব পেয়ে শঙ্কুদেব পণ্ডাকে একের পর এক কঠিন লড়াই লড়তে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে, শাসকদল ঘনিষ্ঠ পুলিশ-আধিকারিক ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর, এরপর অনুপমবাবুর এই দলীয় অনুমোদনহীন সাক্ষাৎকার ঘিরে শাসকদল ‘রাজনৈতিক খেলা’ শুরু করবে বলেই মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবির। আর তাই, ইতিমধ্যেই অনুপমবাবুকে কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি, খুব শীঘ্রই তাঁকে দিয়েই অনুব্রত মন্ডলের বক্তব্যের পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করাতে চলেছেন তিনি বলেও জানা গেছে।

এদিন এই প্রসঙ্গে, শঙ্কুদেব পণ্ডার এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর বক্তব্য, আসলে অনুপম হাজরা তৃণমূলের রাজনীতির শিকার হলেও, ব্যক্তিগতভাবে অসম্ভব ভদ্র মানুষ। তিনি চিন্তাও করতে পারেন না, রাজনৈতিক স্বার্থে এরা কি কি করতে পারে! কোথাও সৌজন্য দেখানোর আগে, বোঝা উচিত – যাঁকে সৌজন্য দেখাচ্ছেন, তিনি সৌজন্য নিতে জানেন কিনা! এমনিতেই, বিজেপি কিন্তু সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত কড়া অনুশাসনে মোড়া একটি রাজনৈতিক দল। এখানে দলীয় অনুশাসনই শেষ কথা, তাই অনুপম হাজরার এই বিনা দলীয় অনুমোদনে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেও শঙ্কুদেব পণ্ডা প্রকাশ্যে তাঁর পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। দফায় দফায় এই নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে খুব শীঘ্রই পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে চলেছেন তিনি।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!