এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > রাতভর ধর্ণা আর ঠান্ডা মাথার রাজনীতিতে ভর করে ষষ্ঠ দফার আগেই বড় জয় ছিনিয়ে নিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা

রাতভর ধর্ণা আর ঠান্ডা মাথার রাজনীতিতে ভর করে ষষ্ঠ দফার আগেই বড় জয় ছিনিয়ে নিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা


নির্বাচনের মরশুমে তৃণমূলের ‘উন্নয়ন বাহিনী’ যেভাবে ‘সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে তাতে ১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না দিলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে বারেবারেই অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। কিন্তু ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগে, নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, ১০০% নয়, মাত্র ৭৩% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া যাবে। একে দল ছাড়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো মামলা’ করে তাঁকে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র বিষ্ণুপুরে ঢোকা থেকে আটকানো হয়েছে, তার উপরে ১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না দেওয়ায় – গতকাল বিকেলেই নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্নায় বসে যান সৌমিত্র খাঁ।

অন্যদিকে, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভা থাকায়, দলীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও বিজেপি শীর্ষ নেতা মুকুল রায়। ফলে, এই আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সফল করতে তাঁরা দায়িত্ব দেন প্রিয় শিষ্য, তথা এই মুহূর্তে রাজ্য-রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। দুই রাজনৈতিক গুরুর ফোন পেয়েই গতকাল সন্ধ্যায় আসরে ঝাঁপিয়ে পড়েন শঙ্কুদেব। আর শঙ্কুদেব পণ্ডা ও সৌমিত্র খাঁ ধর্নায় বসেছেন খবর পেতেই রাকেশ সিং সহ বিজেপির যুব বাহিনী ক্রমশ ভিড় বাড়াতে শুরু করেন নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে, কলকাতা ও আশেপাশের ৮ টি থানার ওসি অন্তত ৪০০ পুলিশের বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ এসেই স্পষ্ট জানিয়ে দেন এত রাত্রে নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্নায় বসা যাবে না। শঙ্কুদেব স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটা মুহূর্তই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – তাই নির্বাচন কমিশনকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেই হবে, অন্যথায় এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মত, কোনো অবস্থাতেই শঙ্কুদেবদের আন্দোলন ভাঙতে না পেরে পুলিশ ‘টার্গেট’ করে বিজেপির যুব শক্তিকে উত্তেজিত করে গন্ডগোল লাগিয়ে গ্রেপ্তারির মাধ্যমে এই আন্দোলন তুলে দেবার।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু, সেই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তেজিত যুব-জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন গেরুয়া শিবিরের তরুণ তুর্কি শঙ্কুদেব পণ্ডা। এইসব করে মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও শঙ্কুদেবরা যখন আন্দোলন থেকে এক পাও পিছু হটতে রাজি নন, তখন পুলিশ জানিয়ে দেয় আন্দোলনের জন্য কোনো মঞ্চ-বাঁধতে দেওয়া হবে না, মাথার উপর ত্রিপল টাঙানোর অনুমতিও দেয় না পুলিশ। নাছোড় শঙ্কুদেব পণ্ডা স্পষ্ট জানিয়ে দেন খোলা আকাশের নিচেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু এত সবের পরেও রাত কেটে গিয়ে সকাল হয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশন শঙ্কুদেবদের সঙ্গে দেখা করতে চান না।

তখন আজ রবীন্দ্রজয়ন্তীকে মাথায় রেখে রাস্তাতেই রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রাবৃত্তির মাধ্যমে নিজেদের কবিপ্রণাম জানানোর সিদ্ধান্ত নেন শঙ্কুদেবরা। আর এই সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরির ফলে, ততক্ষনে এই আন্দোলন মিডিয়ার দৃষ্টিও আকর্ষণ করে নিয়েছে। এই আন্দোলনের খবর পৌঁছে যায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কানে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ঘনঘন ফোন আসতে থাকে আন্দোলনকারী বিজেপির দুই যুবনেতার কাছে – টনক নড়ে নির্বাচন কমিশনের। দপ্তরের ভেতরে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘন্টা দেড়েক ধরে সৌমিত্র খাঁ ও শঙ্কুদেব পণ্ডার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চলে। ১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবির পাশাপাশি, শঙ্কুদেব বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চান, যে অনুব্রত মন্ডলকে নজরবন্দি করে তাঁর নিজের জেলা বীরভূমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে, সেই তৃণমূল নেতাকে কি করে বাঁকুড়া জুড়ে অবাধে ঘুরতে দেওয়া হচ্ছে। এই নির্বাচনেও অনুব্রতবাবুকে নজরবন্দি রাখার কথা স্পষ্ট ভাষায় জানান তিনি। শঙ্কুদেবদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন ৭৩% থেকে বাড়িয়ে ৮৯% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু, তাতে সম্মত না হয়ে আবার দপ্তরের বাইরে ধর্নায় বসে যান তাঁরা। এরপরেই সমগ্র বিষয়টা পৌঁছে যায় দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে। চাপ আসতে শুরু করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে।

১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে খোলা আকাশের নীচে রাতভর ধর্নায় যুবনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা ও বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ।

এর কিছুক্ষন পরেই বিশেষ পর্যবেক্ষক বিজেপি রাজ্য নেতাদের আলোচনার জন্য ডাকেন – নির্বাচন কমিশনের অফিসে পৌঁছান বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও শিশির বাজোরিয়া, ডেকে নেওয়া হয় সৌমিত্র খাঁ ও শঙ্কুদেব পণ্ডাকেও। দীর্ঘ আলোচনার পর, নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, আপাতত ৯২% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিশ্চিত করা হচ্ছে, এছাড়াও আরও ৩০ বাহিনী আসার কথা আছে, যদি ওই বাহিনী এসে পৌঁছায়, তাহলে ১০০% বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে অবশেষে ধর্ণা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শঙ্কুদেব পান্ডারা।

কিন্তু, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, শঙ্কুদেব পণ্ডার রাজনৈতিক পরিপক্কতার ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ বঙ্গ-বিজেপির নেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, মমতা ব্যানার্জিকে বাদ দিয়ে বিরোধী দলের কোনো নেতা সারারাত ব্যাপী ও প্রায় ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় কলকাতার বুকে ধর্ণা আন্দোলন করে দেখিয়ে দিলেন। দ্বিতীয়ত, প্রবল চাপের মুখেও নিজের ‘নার্ভ’ ধরে রেখে বিশাল পরিমান যুব নেতা-কর্মীদের কোনো পুলিশি প্ররোচনায় পা দিতে না দিয়ে এতবড় আন্দোলন প্রায় একক দক্ষতায় সামলালেন তুখোড়ভাবে।

সবথেকে বড় কথা, আন্দোলনের মাঝেও বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বড় সম্পদ রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করলেন – যার ফলে, এতদিন বিরোধীরা বিজেপির গায়ে যে ‘অবাঙালি পার্টির’ তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করত, তা যেন ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এক লহমায়। সব মিলিয়ে দিনের শেষে নিজের রাজনৈতিক গুরু কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের দেওয়া দায়িত্ব সুনিপুন ভাবে সামলে হাসি ফোটালেন দুই শীর্ষনেতার মুখেই। গেরুয়া শিবিরের অনেক শীর্ষনেতাই এরপর ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন – রাতভর ধর্ণা আর ঠান্ডা মাথার রাজনীতিতে ভর করে ষষ্ঠ দফার আগেই বিজেপির হয়ে বড় জয় ছিনিয়ে নিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!