এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -4 , কলমে – অপরাজিতা

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -4 , কলমে – অপরাজিতা


সাজানো চলছে ঘরে মাঝে মাঝেই এক এক জন করে আসছে। দেখে যাচ্ছে কেমন সাজাচ্ছে। পার্লারের দিদি মানা করছে অসুবিধা হচ্ছে। কথা বার্তা চলছে থামতে হচ্ছে ,দেরি হচ্ছে একে শীতকাল, তাড়াতড়ি সন্ধ্যে লগ্নও তাড়াতাড়ি বর এসে যাবে সন্ধ্যে হলেই।

মোবাইল নিয়ে রোশনি এলো ঘরে। দিদি দেখ, তোর গায়ে হলুদ  লাগানোর পিকচারটা কি সুন্দর এসেছে, দাদাভাই তুলেছে, তোকে খুব ভালো লাগছে।ও দিদি দিদিভাইয়ের হলে আমাকেও সাজিয়ে দিও।

গায়ে হলুদ, আজকের পিকচারটা সুন্দর নাকি সেদিনেরটা। মনে পড়তেই একটু ঠোঁটের কোন হাসি ফুটলো চন্দ্রেয়ীর।

চৈতালিদির কোনো ছেলেমেয়ে নেই, নিজে গান শিখিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা করেছে চৈতালিদির বর বড়সড় উকিল, কলকাতার বড় কোর্টে প্র্যাক্টিস করেন।টাকার অভাব নেই। চৈতালিদি নিজের ছেলে মেয়ের মতো ভালো বসে তাঁর স্টুডেন্টদের। রিহার্সালে রোজই খাওয়া দাওয়া হয়। রিহার্সালের পর সবাই ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে, চৈতালিদির রাঁধুনি ঘরে ঢুকলো হাতে হলুদের প্যাকেট নিয়ে, আসলে চৈতালিদিকে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করতে এসেছিলো।সেদিন সাদা রঙের একটা আনারকলি সালোয়ার পড়েছিল চন্দ্রেয়ী।

অনেকদিন আছে ওই মাসি ,সবাইকে চেনেও। সন হঠাৎ প্যাকেটটা নিয়ে , এদিক ওদিক টানা টানি করছিলো।

মাসি – অমন টেননি ছিঁড়ে যাবে

সন – না গো মাসি এটা হলুদের প্যাকেট এমন জোরে টানলেও ছিঁড়বে নি।
বলে জোরে টান দিলো প্যাকেট ছিঁড়ে হলুদ উল্টোদিকে পুরো চন্দ্রেয়ীর গোটা গায়ে।

চৈতালিদি – ইসু

২ সেকেন্ডের জন্য সব চুপ। তারপর সব হা হা করে হাসতে শুরু করলো। হাসির রোল গোটা ঘরে কেবল দুজন গম্ভীর চন্দ্রেয়ী আর সন।

মাসি – দেখলেতো বললুম শুনলে নি, মেয়েটার গায়ে , কি হলো এবার।

চন্দ্রেয়ী – রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে সনের দিকে , মাথা থেকে গোটা গায়ে হলুদ, সাদা সালোয়ারটা গেলো, এই হলুদের দাগ আর উঠবে না লাল হয়ে যাবে।

সন – হকচকিয়ে গিয়েছিলো, একটু সামলে নিয়ে ‘ হ্যাপি হোলি ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

কিন্তু চন্দ্রেয়ীর দিকে তাকিয়েই থেমে গেলো।

চন্দ্রেয়ী উঠে গোটা গা থেকে হলুদ ঝাড়ছে, আর সনের দিকে এমন করে তাকাচ্ছে এবার ওকে ভস্মই করে দেব।

চৈতালিদি – একটু শান্ত হয়ে থাকতে হয়, এটা হলুদের প্যাকেট ছিল আর যদি এটা লঙ্কা গুঁড়ো হতো কি সর্বনাশ হতো বল তো।

চন্দ্রেয়ী – দিদি আমি একটু আসছি ওয়াস রুম থেকে।

জামা ঝাড়তে ঝাড়তে দরজা দিয়ে বেরিয়ে ওয়াস রুমের দিকে গেলো।
মুখটা ভালো করে ধুলো। গোটা ঘায়ে হলুদ, এবার বাসে করে মেসে ফিরবে কি করে? লোকে হা করে তাকিয়ে থাকবে , গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে। মাতাল একটা। এত শখের সাদা জামাটাও গেল।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই দেখলো সন কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে , পাস্ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো ,

সন – সরি , আমি বাইকে করে মেসে পৌঁছে দেব।

চন্দ্রেয়ী চলে যাচ্ছিলো। সন ওর হাতটা ধরলো, সিরিয়াসলি সরি, হাতটা ছাড়িয়ে এবার চন্দ্রেয়ী ওর টিশার্টের কলাট চেপে ধরলো – রেগে, আমার থেকে দূরে থাকবে। বলে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ঘরে চলে গেলো। দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠছে।

আর কিছু বলেনি সন। কিন্তু চন্দ্রেয়ী লক্ষ্য করেছে যখন সনের কলাট চেপে ধরেছিলো সনের দুটো চোখ বদলে গিয়েছিলো, ভীষণ অন্যরকম, দুটো চোখ যেন অনেক কিছু বলতে চাইছিলো ভীষণ রিলাক্স, ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিলো চন্দ্রেয়ী। দূর ফালতু ভাবছে অনেক কিছু, ওর আবার চোখ, তার আবার অনেক কথা। দূর।

সেদিন প্রীতমদা বাইকে করে পৌঁছে দিয়েছিলো। না সন আর কোনো কথা বলেনি, কেমন শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।

চাইতালিদি একটা সালোয়ার দিয়েছিলো চন্দ্রেয়ী চেঞ্জ করেনি। মেসে এসে সনকে গালাগালিও করেছিল সংযুক্তা হেসে গড়াগড়ি খেয়েছিলো।

(নিচের লিংকে গল্পের আগের পরের অংশ পেয়ে যাবেন।)

না পরের দিন আবার যাকে তাই, কোনো পরিবর্তন নেই। নির্লজ্জ বেহায়া বললে যা হয়। বাকিরা বেশ ওদের দুজনকে দেখে মজা পায়। হকইতালীদিও জানে ব্যাপারটা , কিন্তু পাত্তা দেয়না, ওদের মাঝে ঢেকে না। ওদের ব্যাপার ওরাই মেটাবে।

মাঝে মাঝে সনের এক একটা কাজকর্ম দেখে অবাক হয়ে যেত চন্দ্রেয়ী, ছোট ছেলের মতো।

যেমন – প্রীতমদার কাশি হয়েছে , ডাক্তার একটা কফ সিরাপ দিয়েছে, সেটা প্রীতমদা খাচ্ছিলো হটাৎ কোথাও কিছু নেই তার হাত থেকে কফ সিরাপ এর শিশি টা নিয়ে জল খাবার মতো খেয়ে নিলো অনেকটা।

প্রীতমদা – ওটা কফ সিরাপ, মুড়ি মুড়কি বা বিয়ার নয়, তুই এমন করে খেয়ে নিলি?

সন – ব্যাপক লাগে আমার খেতে, পুরো নেশা লেগে যায়।

অবাক লাগে চন্দ্রেয়ীর কাউকে শুধুশুধু এমন করে কফ সিরাপ খেতে দেখেনি ও। সত্যিই কি ওর কিছু গন্ডগোল আছে ?

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

কিন্তু তার পরেই সবটা বদলে গেলো। হটাৎ বাড়ি গিয়ে শুনলো পিয়ালী দি তার বর আর পর সেই সোনার তুলির দেওর আসবে চন্দ্রেয়ীকে দেখতে।

আপত্তি জানিয়েছিল চন্দ্রেয়ী , কেউ কথা শোনে নি।
সেজে গুজে বসতে হয়নি।

সামনাসামনি দেখেছিলো সত্যি রাজপুত্তর, কিন্তু তাকানোগুলো যেন বড্ডো কঠিন, অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না.

মরুকগে, একে বিয়ে করবে না তো ভাবাভাবির কিছুই নেই ,

একা কথা বলেছিলো – সেটা এমন –

দেখুন আমি জানি যে আপনাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে, আর আপনি আমাকে পছন্দ করেননি, কিন্তু একটা কথা যদি কোথাও মানে ১ % ও যদি হ্যা হয় প্লিজ না করে দেবেন, বলবেন যে আমাকে পছন্দ হয়নি। আমি চাই না এখুনি বিয়েটা করতে। এসএল আপনি একটা ছেলে তো না করাটা খুব সহজ, আমি না করলেও কেউ শুনবে না।

অপূর্ব – এখুনি বিয়ে করতে চাও না নাকি আমাকে বিয়ে করতে ?

চন্দ্রেয়ী – না সেসব কিছু নয়, এখন বিয়ে করতে চাই না।

অপূর্ব – আমি তো দাদার কাছে শুনলাম উল্টো কথা, আমাকে নাকি বিয়ে করতে চাও না, আমি হ্যা বললেও নাকি না করে দিতে।

চন্দ্রেয়ী – দেখুন ওটা রাগের মাথায় কিছু একটা বলে দিয়েছি, প্লিজ মাইন্ড করবেন না, এমন কিছু নয়।

অপূর্ব – অন্য কোথাও এন্গেজড ?

চন্দ্রেয়ী – নো

চন্দ্রেয়ী ভেবেছিলো অপূর্ব না করে দেব। কিন্তু না করেনি হ্যা বলেছিলো। ওদের বাড়ি থেকে বলেছিলো যত তাড়াতাই হয় বিয়েটা হবে।

চন্দ্রেয়ীর মাথায় বাজ পড়েছিল , ভালো লাগেনি অপূর্বকে, কথায় কথায় অহংকার ফুটে উঠছে , সবাই এর কাছে আমি কি বিশাল এমন একটা ভাব। একে বিয়ে অসম্ভব। বাড়িতে হাজার না বললেও কেউ শোনেনি।

চন্দ্রেয়ী সরাসরি অপূর্বকেই কল করেছিল এটা জানতে কেন অপূর্ব হ্যা বললো, চন্দ্রেয়ী তো তাকে রিকোয়েস্ট করেছিল।

অপূর্বর জবাব ছিল – চন্দ্রেয়ীর মতো একটা সাধারণ মেয়ে ওকে না বলবে সবার সামনে, এটা মানা শক্ত, আমার জন্য মেয়েরা পাগল।

চন্দ্রেয়ী – আমি নয়, দেখুন যেখানে মনের মিল নেই সেখানে সারাজীবন একসঙ্গে থাকাটা আমাদের দুজনের জন্যই ঠিক হবে না।

অপূর্বর জবাব ছিল – টাকা থাকলে সুখ সব কিছুতেই আসে, বিয়ে লোকে বাবা মায়ের জন্য করে, বাড়ির দেখাশোনা করবে, মনের মিলের দরকার নেই।

চন্দ্রেয়ী ভাবতে পারছিলো না কথা গুলো কি সত্যি বলছে অপূর্ব, সত্যি ও বদলা নেবার জন্য চন্দ্রেয়ীকে বিয়ে করতে চাইছে।

বাড়িতে বলেছিলো কেউ বিশ্বাস করেনি , না মা থেকে অব্রির লোক খুশি এমন ছেলে , আর কি চাই, লোককে বলতে পারবে এত ভালো ছেলে আমার জামাই, মেয়ের সুখ তো টাকাতেই।বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল।

 

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -৩ – কলমে – অপরাজিতা

 

পরের পর্ব আসছে ………………………………

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!