এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -১ – কলমে – অপরাজিতা

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -১ – কলমে – অপরাজিতা


আজ চান্দ্রেয়ীর বিয়ে। পার্লার থেকে সাজানো এসেছে ওকে, সব আচার অনুষ্ঠান করেছে নিয়মমাফিক। কোথাও কোনো ত্রুটি নেই।শুধু সারাটা দিন অনেক কথা মনে পড়ছে। আর কোনো অপমান গায়ে লাগছে না , কি যেন একটা হয়ে গেছে , বেশ সব কিছু গা সওয়া, দেওয়ালে পিঠ থেকে গেছে বলেই কি?

ভাবলেশ হীন মুখে বসে আছে চন্দ্রেয়ী। পার্লারের দিদি সাজাতে এসেছে। ঘরে বসে আছে মেজো পিসি। মুখে যতই মেক আপ বসুক না কেন, মনের ভাব লুকোচ্ছে না। পার্লারের দিদিও বলছে – এই মেয়ে কি হলো হাসো একটু, আজ না তোমার বিয়ে , বর এসে এই মুখ দেখলে কি বলবে? কিন্তু যার সঙ্গে ঘর বাঁধতে যাচ্ছে …………………………
না , হাসি পাচ্ছে না। আর বর সে তো ………….

চার মাস আগেও ওর জীবনটা অন্যরকম ছিল। বেশ গান, পিএইচডি-র প্রিপারেশন, চৈতালিদির কাছে গান শেখা , কলকাতায় মেসে থাকা, বন্ধুবান্ধব, ঘুরতে যাওয়া, মজা সব কিছুই বেশ চলছিল সাথেই মায়ের যাকে হাতের কাছে পায় তাকেই বলা আমার মেয়ের জন্য একটা ভালো ছেলে থাকলে বোলো। অসহ্য লাগে চন্দ্রেয়ীর। ভাইয়ের বেশ মজা লাগে ওর মুখটা দেখলেই বোঝা যায়। চন্দ্রেয়ীর সঙ্গে ওর জন্মের শত্রুতা তাও যদি মা ওকে এত তোলা না দিতো। মেয়ে যেন একটা বোঝা শুধু বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই কাজ। আর ছেলে? বাব্বা বংশে বাতি দেবে। আমার ছেলে এই, ওই সেই। দেখতেও রাজপুত্র , মেয়েটাকেও যদি এমন দেখতে হতো। বিয়ে দিতে ভাবতে হতো না। ছেলে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। খোঁজ নিয়ে দেখলে বুঝবে কতটা পড়ে আর কতটা নেশা করে হোস্টেলে পরে থাকে।

চার মাস আগে চন্দ্রেয়ীর পিসির মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়, জানা যায় তার কাকা শ্বশুরের ছেলে নাকি ইঞ্জিনিয়ার খড়্গপুর আই আই টি থেকে পড়েছে। দেখতেও রাজপুত্র। ব্যাস পিসিও লেগে পড়ে সম্বন্দ করতে। পিয়াদির বিয়ের আগেই ছেলের বাবা আর এক দাদা আসে দেখতে। এসেই নাক সিঁটকোয়, কেননা চন্দ্রেয়ী আহামরি সুন্দরী নয়, ওদের অপ্সরী চাই , পাশাপাশি ওদের কথা অনুযায়ী, ওদের সায়েন্স পড়া মেয়ে চাই,কেননা যারা এইসব আর্টস নিয়ে বা গান টান নিয়ে পরে তাদের মেরিড কম বলে। ওরা আত্মীয়র মধ্যে বলে দেখতে এসেছিলো কিন্তু পরে ভেবে বলবে।

গান নিয়ে পড়ানোর কোনো ইচ্ছা ছিল না মায়ের ,বাবা আর মেয়ের জোরের কাছে পারেনি। কি ভুল যে হয়েছে এখন সেই কথা রোজ বলে মা। যাই হোক. এদিকে পিসি, পিসির বাড়ির লোকজন চন্দ্রেয়ীর বিয়ে না হলে যে তাদের কি সমস্যা তা চন্দ্রেয়ী জানে না তারা প্রায় হাতে পায়ে ধরতে থাকে ছেলের বাড়ির লোককে। ভালো লাগেনা চন্দ্রেয়ীর। এদিকে তারা না করে দেয়। চন্দ্রেয়ী ভাবে এখানেই স্টপ হলো। কিন্তু না স্টপ হয়নি। পিয়াদির বিয়েতে ছেলের বাড়ির লোক পিয়াদিকে কম দেখেছে আর চন্দ্রেয়ীকে বেশি দেখেছে না কেমন দেখতে বলে নয়, একটা একটা করে খুঁত বের করবে বলে, যেমন না তেমন লম্বা নয়, খুব ফরসাও নয়, স্লিম তো নয় মোটাই। আমাদের অপুর সঙ্গে মিলবে না। মুখের সামনেই মুখ বেঁকানো সবই চলেছে। আর চন্দ্রেয়ীর মনে হয়েছে কেন গেলো সে বিয়েতে।

যাই হোক বিয়ে মিটলো, না,  সেই অপু কোথাও ছিল না তখনও। সে আসেনি কাজে ব্যাস্ত। ভাগ্যিস সে এলে যে আর কি কি শুনতে হতো কে জানে। এরপর অষ্টমঙ্গলায় কথায় কথায় ফের বিয়ের কথা উঠেছে। পিয়াদিও কম যায়না, অষ্টমঙ্গলা সেরে চন্দ্রেয়ীদের বাড়িতে এসেছে। ফোনে সেই অপূর্বর ছবি আপলোড করে চন্দ্রেয়ীকে দেখাবে কি জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলো। খানিকটা ওকে ছোট করেই। পিয়াদির কি কে জানে ? সবসময় চন্দ্রেয়ীকে টক্কর। ওর বরকেও তো দেখতে ভালো আর ওকেও দেখতে ভালো।

যাই হোক, জামাইবাবুর সামনেই পিয়াদি এই দেখ এটা অপু ওর ভাই দেখেছিস কি সুন্দর দেখতে, ভাবিস না অন্য ছেলে দেখা হবে বলে হয় হয় করে হাসতে লাগলো। জামাইবাবু পাল্লা দিয়ে বলে অপু এলে আমি বলবো ওকে তোমার কথা মন খারাপ করো না , ভাবটা যেন এমন ওই ছেলের সাথে বিয়ে হয়নি বলে যেন চন্দ্রেয়ী শোকে মরে যাচ্ছে। আশ্চর্য। না আর থাকতে পারেনি আর চন্দ্রেয়ী মুখের উপর বলেছে জামাইবাবু বিশ্বাস করো তোমার ভাই রাজপুত্র জানি কিন্তু আমি তোমার ভাইয়ের উপরে এতটুকুও ইন্টাররেস্টেড নোই, যদি উনি দেখতে আসতেন আমি অনেকেই সরাসরি বলতাম আমি বিয়ে করবো না ,তাই কষ্ট পেয়ো না আমার জন্য। কথাটা শুনে পিয়াদি আর ওর বরের মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছিলো, ধাক্কা খেয়েছিলো বোঝাই যাচ্ছে। যায় হোক আর কথা বাড়েনি। অবশ্য ওদের আর কি দোষ, বিয়ে হচ্ছে না, দেখুন না, কত রিকোয়েস্ট করেছে চন্দ্রেয়ীর বাড়ির লোক, মা , পিসির বাড়ি ,যে কারণেই ওরা এত অপমান করার সুযোগ পেয়েছে। যাই হোক মিটেছে সব আর কিছু হবে না।

ইতিমধ্যে আবার ফের চন্দ্রেয়ী ব্যাস্ত হয়ে গেছে ওর লাইফে, একটা মস্ত সুযোগ এসেছে। চন্দ্রেয়ীর খুব ইচ্ছা স্টেজ পারফরম্যান্স করবে, চৈতালিদি  একটা সুযোগ দিয়েছে ওর গ্রুপে ,ওরা অনেক জায়গায় প্রোগ্রাম করে শুনেছে অনেক গল্প। এবার চন্দ্রেয়ীকে সেই গ্রুপে অ্যাড করেছে চৈতালিদি। যা শুনে বাকিরা একটু নাক সিঁটকেছে বৈকি তাতে কি চন্দ্রেয়ীর সব স্বপ্ন যেন সত্যি হয়েছে। বাকিদের নাক সিটকানোর কারণ হলো চন্দ্রেয়ী আগে অন্য অমিতাভবাবুর কাছে গান শিখতো ,তাঁর শরীর খারাপ থাকায় তিনি এখন আর শেখাচ্ছেন না তাই তাঁর ছাত্রী চৈতালিদিকে বলেছেন, আর সেই সূত্রেই চৈতালিদি সঙ্গে আলাপ ও গান শেখা। চন্দ্রেয়ী ভালো গান গায় তাই চৈতালিদির খুব কাছের হয়ে গেছে কয়েকদিনেই।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

চৈতালিদি সপ্তাহে তিনদিন যেতে বলেছে সন্ধেবেলা রিহার্সাল, গেছেও কদিন।স ব বয়সের আছে , ৭-৮ জন ,ওরা খুব মিশুকে। চন্দ্রেয়ীকে এত সহজভাবে নিয়েছে যে চন্দ্রেয়ীরও মিশে গেছে ওদের সাথে।

এদিন প্রীতমদা একটা সুর তুলেছে সিন্থেসাইজারে। বাকিরাও সবাই শুনছে মন দিয়ে। খুব ভালো বজায় প্রীতমদা। দোতলায় একটা বড় ঘরে রিহার্সাল হচ্ছে। খুব মন দিয়ে শুনছিলো চন্দ্রেয়ী, হঠাৎ বাইরের অন্ধকারের বারান্দায় চোখ পড়তেই চিৎকার করে উঠলো ভয়ে।

একটা কঙ্কালের মুখ অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। বাকিরাও চিৎকার শুনে ওর দিকে তাকালো, এতক্ষনে কঙ্কাল দরজার কাছে চলে এসেছে। আর ঘরের আলো তার উপরে পড়েছে। ইন্দ্রানীদি একটু বিস্ময়ে দরজার দিকে তাকিয়ে – তুই? কবে এলি? এগুলো কি?

যে ঘরে ঢুকলো সেও একটু হতবম্ব হয়ে গেছে চন্দ্রেয়ীর চিৎকারে, কিন্তু বাকিরা তাকে দেখে বেশি হতবম্ব, তার সাজপোশাকে। চন্দ্রেয়ীরও হাঁ করে একঝাঁক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। যে ঘরে ঢুকলো তার বয়েস ২৭-২৮ কিংবা ওই একটু কম বেশি হবে।সুঠাম চেহারা কিন্তু কেমন যেন একটা। মুখে একমুখ গোফ দাড়ি, বড়োবড়ো চুল কাঁধ পর্যন্ত তাতে আবার মাথায় একটা ক্যাপ, গলায় হাতে রুদ্রাক্ষের মালা , আর হ্যাঁ একটা কালো টি-শার্ট যার বুকে কঙ্কালের মুখ আঁকা। ওই তাই অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিলো যা দেখে ভয় পেয়েছিলো চন্দ্রেয়ী। হাতে গাঁজার কল্কে নেই এই যা। ও কাঁধে একখানা গিটার তাতে আঁকিবুকি নানা কিছু আঁকা, মানে কিছু বোঝে নি চন্দ্রেয়ী, ওই মর্ডার্ন আর্ট টাইপ। কিন্তু এ হলো সেই রকম যাদেরকে দেখলে চন্দ্রেয়ী রীতিমতো নাক সিঁটকোয়। একে দেখে খানিকটা এবনরমাল লাগছে চন্দ্রেয়ীর। এ কে?

অতনুদা কি পড়েছিস এগুলো? দাড়ি গোঁফ ফের নতুন কিছু নাকি?

যে এলো সে অন্যদের কোনো কথা না বলে চন্দ্রেয়ীর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি দেখছে , চন্দ্রেয়ী মুখটা ঘুরিয়ে নিলো , এর সাথে কথা বলার কোনো মানে নেই, কেমন বেখাপ্পা ইসশ।

 

অতনুদা – এই শুনতে পাচ্ছিস না ?

আগত – বোম ভোলে

বিত্তদা – কি? তুই তো গিয়েছিলো কুর্গ ? সেখানে ভোলে বাবা কোথা থেকে এলো।

আগত – ভোলে বাবাই সব, এক ভোলেবাবার চ্যালার সাথে দেখা তাকে দেখেই আমিও ভোলে বাবার ভক্ত।

 

মহুয়াদি – এই যে মাতাল আমাকে ভুলেই গেলে?

আগত – নো বেবি, তোমাকে ভুলতে পারি, তুমি মহুয়া আমি মাতাল। বলেই মহুয়াদির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। মহুয়াদিও জড়িয়ে ধরলো। এবার চন্দ্রেয়ী বুঝেছে কে এটা , মহুয়াদির বয়ফ্রেইন্ড। ম্যাঁগো, আর ছেলে পেলো না মহুয়াদি, দেখেই মাতাল মনে হচ্ছে। যাকগে মরুকগে।

বাকিদের সাথেও কথা বলছে। যা শোনা গেছে তাতে সেই ভোলে বাবার চ্যালার কাছে গ্যাঁজা খেয়েছে আর তার ফলে কতকিছু হয়েছে হওয়ায় ভেসেছে, সমুদ্রের জলে ডুবেছে, একের পর এক বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে। অসহ্য একটা।

চন্দ্রেয়ী বুঝতে পারছে তার দিকে মাঝে মাঝেই দেখছে। আচ্ছা ছেলে তো গার্লফ্রেন্ড এর কাছে বসে আছে তারপরেও অন্য মেয়েদের দিকে এমনভাবে তাকাতে লজ্জা লাগে না। ছিঃ মাতাল, সাইকো একটা মনে মনে গালাগালি দিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রেয়ী। ছেলেটার মুখে কোনো বিকার নেই।
বিপাশা দি – ও চন্দ্রেয়ী ও হলো সন। আর সন ও চন্দ্রেয়ী আমাদের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছে প্রোগ্রামে।

এবার সে প্রীতমদাকে বললো – সরি মাঝখানে স্টপ হয়ে গেছে আমার জন্য, তুমি ফের শুরু করো, ব্যাপক লাগছিলো আমি শুনলাম বাইরে থেকে। বাকি কথা পরে হবে। ফের সুর তুললো প্রীতম দা, যে যার মতো শুনছে।

আগত চন্দ্রেয়ীর পাশে এসে বসলো, পাশে বলার থেকে বলা ভালো প্রায় গায়ের কাছে। প্রায় চন্দ্রেয়ীর গায়ে গা ঠেকিয়ে, ছিটকে একটু সরে গিয়ে চন্দ্রেয়ী দাঁত চেপে রাগী রাগী ভাব করে তাকালো।

কোনো বিকার নেই, হাত বাড়িয়ে – হাই, আমি সন। চন্দ্রেয়ী মুখে কিছু বললো না কিন্তু মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে বিরক্ত।

কিন্তু সেটা দেখে বুঝেও কোনো বিকার নেই, প্রায় চন্দ্রেয়ীর মুখের খুব কাছে এসে বললো – বয়ফ্রেন্ড আছে চাঁদ ?

চন্দ্রেয়ী পিছনের দিকে সরে গিয়ে বসলো বললো – চান দ্রে য়ি। আমার নাম চন্দ্রেয়ী , নট চাঁদ।

সন – ছোট করে ডাকলাম আরকি, চাঁদ, বাই দা ওয়ে আমাকে কেউ কেউ সূর্য বলেও ডাকে, তুমিও ডাকতে পারো।

বাকিদের কোনো বিকার নেই তার নিজেদের মতো গান শুনতে ব্যস্ত।

সন – বয়ফ্রেন্ড আছে?

চন্দ্রেয়ী একটু বিরক্ত হয়ে – কেন?

সন  – (আর বসে নেই, সে প্রায় শুয়ে পড়েছে) – আমি ফ্রি আছি, একটু টাইম পাস করতাম।

চন্দ্রেয়ী – কি?

 

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -২ – কলমে – অপরাজিতা

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!