সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -৩ – কলমে – অপরাজিতা অন্যান্য গল্পে-আড্ডায় June 14, 2020 এখনো সন্ধ্যে হয়নি, একে একে সবাই আসছে। বিয়েবাড়ি আল্পনা দেওয়া হয়েছে। ঘরের মেঝেতেও এখানে বড় আল্পনা। অনুপমাদি ছোট মাসির ভাসুরের মেয়ে এইমাত্র এলো। অনেক কথার পর আল্পনার দিকে তাকিয়ে, তুই দিয়েছিস এই অল্পনাটা ? কি সুন্দর রে? চন্দ্রেয়ী – না। অনুপমা – ও আমি ভাবলাম তুই ? তুই ও তো সুন্দর আল্পনা দিস, এই মুখটা ঠিক কর খালি গম্ভীর হয়ে থাকা। পার্লারের দিদি – তাই তো বলছি, আমার কখন সাজানো হয়ে যেত শুধু কাঁদছে , চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে, বার বার মেক আপ কি করে করি বলো তো। অনুপমা – মন খারাপ হবে না বলো, চলে যাবে সেই কতদূর, আচ্ছা দিদি তুমি সাজাও আমি ছেলেকে একটু দেখি, কিছু খাওয়াই। মেঝেতে যে আল্পনা দেওয়া আছে সেটা চন্দ্রেয়ী দেয়নি, লোক এসেছিলো। চন্দ্রেয়ী হয়তো দিতো অন্য সময় হলে এবারে ইচ্ছা হয়নি। আল্পনাটা ভালো করে এবার তাকিয়ে দেখলো। সত্যিই খুব সুন্দর দিয়েছে। ঠিক এমনি একটা আল্পনা দিয়েছিলো চন্দ্রেয়ী চৈতালিদির বাড়িতে। সেদিন একটা পুজো ছিল , চৈতালিদি দ্বায়িত্ব দিয়েছিলো চন্দ্রেয়ীকে আল্পনা দেওয়ার। বেশ নিজের মতো আল্পনা দিচ্ছিলো। প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, ঠাকুর ঘরের দরকার কাছে – সন, সি এম ( চৈতালি মৈত্র -এই নামেই ডাকে সন ম্যামকে) এই নাও ফুল যা খাটালে না ?বলে এগিয়ে এলো। বাকিরা দাড়া দাড়া করতে করতেই যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেলো। আল্পনার মাঝখানেই পা। সব নষ্ট আবার মুছে নতুন করে দিতে হবে। চৈতালিদি – উফফ ইসু (চৈতালিদি সনকে ওই নামেই ডাকে, অন্যসময় হলে প্রতিবাদ জানাতো, কিন্তু এখন চন্দ্রেয়ীর দিকে সরি সরি মুখ করে তাকিয়ে রইলো )একটু দেখেশুনে কাজ করতে হয় তো , হলো তো ? চন্দ্রেয়ীর মনে হচ্ছে এবার মেরেই ফেলবে? চন্দ্রেয়ী – কটমট করে তাকালো। সন – সরি। চন্দ্রেয়ী – সব সময় এমন নাচ কেন? দেখে কাজ করতে পারো না। বাকিরা যে যা কাজ করছিলো তাতে মন দিলো। শুভম ফল কাটা ফেলে কাপড় আনতে গেলো মুছবে বলে। কোনো লজ্জা বলে বস্তু নেই, চন্দ্রেয়ীর দিকে ঝুকে সন – তোমাকে আজকেও ব্যাপক লাগছে একদম সোনার হরিণ, সেটা দেখতে গিয়েই। চন্দ্রেয়ী – এখন থেকে সরে যায়। সন – আমি হেল্প করছি। চন্দ্রেয়ী – নো, থ্যাংক ইউ। চন্দ্রেয়ী এদিন একটা লাল রং এর শাড়ী পড়েছে সেখানে সোনালী রঙের হরিণ আঁকা আছে। ফের আল্পনা দিয়েছে আর মনে মনে সনের গুষ্টির তুষ্টি করেছে। পুজো মিটেছে। এদিকে সনকে আজকাল মেসেও সহ্য করতে হচ্ছে চন্দ্রেয়ীকে। কেননা রোজ দু বার তিনবার সংযুক্তাকে কল করে। ভিডিও কল ও হয় হোয়াটস্যাপ এ। সংযুক্তা আর চন্দ্রেয়ী যেহেতু একটা ঘরেই থাকে তাই কি কথা হচ্ছে সবটাই কানে যায় চন্দ্রেয়ীর। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - একটা কথা বলা হয়নি ইতিমধ্যে সংযুক্তা নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে ব্রেক আপ করে নিয়েছে, এটা নিয়ে অনেকবার হলো সেটা কোনো কথা নয়, এমন প্রায় হয়, কথা বন্ধ করে দে ইন্দ্রর সাথে, ফের ইন্দ্র অনেক অনুনয় বিনয়, পায়ে পড়া, হাতে ধরা , গিফট কিনে দেওয়া এসব করে মানায়, আবার প্রেম শুরু হয়। চন্দ্রেয়ীকেও ইন্দ্র বলে কথা বলতে। চন্দ্রেয়ীকেও সংযুক্তার ধমক খেতে হয়। কিন্তু এবারে সংযুক্তা ঘোষণা করেছে ইন্দ্রর সাথে আর সম্পর্ক নেই, রাখবে না সে আর সন প্রেম করছে। যাই হোক চন্দ্রেয়ী অনেকবার বলেছে কানে হেডফোন নিয়ে কথা বলতে চন্দ্রেয়ীর অসুবিধা হয় তা নোই লাউড স্পিকারে দিয়ে গোটা ঘরে ঘুরে ঘুরে বিশেষ করে চন্দ্রেয়ীকে যেন দেখিয়ে দেখিয়ে সনের সাথে কথা বলবে। চন্দ্রেয়ী কিছু বললেই দু তরফের একটাই কথা চন্দ্রেয়ী নাকি হিংসা করছে , অদ্ভুত। আর যত ন্যাকা ন্যাকা কত , আমার বাবু খেয়েছে? আমার সোনা ঘুমিয়েছে। – চন্দ্রেয়ী কানে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে তবুও বালিশ ফুঁড়ে কথাকানে ঢোকে। কোনো সিরিয়াস কিছু নয়, শুধু আমার সোনা, আমার মানা। বেশি বেশি, সংযুক্তা তো ইন্দ্রর সাথে আগে কানে হেডফোন লাগিয়েই কথা বলতো এর বেলায় চন্দ্রেয়ীকে শোনানোর কি আছে? এই করেই চলছে , তবে দু দিন একটু বন্ধ হয়েছে কানে হহেডফোন লাগিয়েই কথা বলছে সংযুক্তা। কেননা রিসেন্টলি একটা ওয়েব পোর্টালে কনটেন্ট লেখার কাজ করছে চন্দ্রেয়ী। সবটাই অনলাইন।মাইনেও মোটামুটি দেয়, খুব বেশি না হলেও চন্দ্রেয়ীর একার পক্ষে যথেষ্টই। খাটনি বেশি তবে মেসেই তো থাকে সারাদিন অসুবিধা হয়না। আর এই লেখার সময় কেউ কথা বললে লিখতে অসুবিধা হয়, সংযুক্ত সেটা বুঝেছে ফলে হেডফোনে কথা বলে। তবে ওই লেখার সময়টুকুই, তারপর আবার যাকে তাই। প্রেম করছে সংযুক্তার সঙ্গে কিন্তু তাতেও ঝাড়ি মেরে মেরে যাচ্ছে চন্দ্রেয়ীকে। যেমন -চন্দ্রেয়ীর কাছে এসে বসেছে প্রথমদিনের মতো , সরে গেছে চন্দ্রেয়ী , -তোমাক সেদিন শাড়ী পরে ব্যাপক লাগছিলো , এখন এতবড় চুল কারুর দেখিনি , ভীষণ সুন্দর। আমার দিকে কম নজর দিয়ে সংযুক্তার দিকে নজর দাও – চটপট উত্তর চন্দ্রেয়ীর , লাভ হয়নি,ফের শুরু করেছে। উৎপাত আরো বেড়েছে। রাত্রি ১২ টায় হঠাৎ চান্দ্রেয়ীর ফোনে অজানা নাম্বার থেকে ফোন। চন্দ্রেয়ী প্রথমে ধরেনি , ৪-৫ বার কল করেছে , চন্দ্রেয়ী – হেলো, ফোন ওপর থেকে – আমি সন চন্দ্রেয়ী -তুমি ? আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেলে ? কেন কল করেছো? সন – আমার সোনার ফোনে কল করতে পারছি না, একবার ওকে দাও কথা বলবো। চন্দ্রেয়ী – দেব না সন – এত হিংসা করো কেন? অফার তো তোমাকেই করেছিলাম নিলে না, এখন আমি একজনের সাথে এনগেজ হলাম তুমি রাগ করছো। সংযুক্তা ফোন , চন্দ্রেয়ী ফোনটা দিয়ে দিলো। অনেক রাত অবধি কথা হচ্ছে তাও চন্দ্রেয়ীর ফোনে। উফফ কবে শেষ হবে এসব। এদিকে সংযুক্ত আবার বোমা ফাটিয়েছে – সন নাকি ওকে বলেছে সন খড়গপুর আই আই টি থেকে পাস করেছে, আগে চাকরি করতো এখন করে না, ফ্রীল্যাংসিং করে। কথাটা হজম হয়নি চন্দ্রেয়ী চন্দ্রেয়ী – শোন্, খড়গপুর আই আই টি না কোনো কোচিং সেন্টার নয়, যত্তসব ,তোকে ধপ দিচ্ছে আর তুই ? আমি বলছি শোন্ ওর থেকে দূরে থাক , ইন্দ্রর সাথে আবার সব ঠিক করে নে । সংযুক্তা – তোকে বিশ্বাস করতে হবে না , আমি বিশ্বাস করেছি। তাছাড়া যে এত ভালো গিটারে সুর তোলে সে মিথ্যা বলে না। চন্দ্রেয়ী কিছু বলেনি আর, যেদিন ঠকবে নিজে বুঝবে, তবে গিটার খুব ভালো বজায়, সুরগুলো যেন কথা বলে, রিহার্সালে শুনেছে, কিন্তু তাতে কি?বাকি তো অসহ্য! চন্দ্রেয়ী -তুই সত্যিই কি দেখে ? সংযুক্তা – ও আমার পৃথ্বীরাজ চন্দ্রেয়ী – এই শোন্, ও না এমন সবাইকে বলে, আমাদের মহুয়া দি ওকে মাতাল বলে কেন জানিস? তাকে বলেছে তুমি মহুয়া আর আমি মাতাল। সংযুক্তা – বলুক, তবুও ও আমার পৃথ্বিরাজ। তোর যদি ভালোলাগে বল, আমি সরে যাচ্ছি, তুই প্রেম কর বিয়ে কর। চন্দ্রেয়ী – মাথা খারাপ আছে তোর? ওকে মানে ওর সাথে প্রেম, বিয়ে ? সংযুক্তা – আমার তো মনে হচ্ছে তুই ওর প্রেমে পড়েছিস, তাই হিংসে হচ্ছে তোর , আমার সাথে ব্র্যাক আপ করতে চাইছিস। চন্দ্রেয়ী – তুই মর। সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -২ – কলমে – অপরাজিতা সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব -4 , কলমে – অপরাজিতা আপনার মতামত জানান -