এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > গল্পে-আড্ডায় > সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব – 8, কলমে – অপরাজিতা

সোনার হরিণ চাই – ( লাভ স্টোরি ) – পর্ব – 8, কলমে – অপরাজিতা


ঈশান কখন যে নামটা মনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি চন্দ্রেয়ী, ওই মজা করা, গায়ে পড়া, উদ্ঘট সেজে থাকা। যাকে একদিন অসহ্য মনে হতো তার উপরেই কেমন যেন একটু করে মায়া পরে গিয়েছিলো চন্দ্রেয়ীর, ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি, যখন বুঝেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেলো।

হোটেলে বিকেলে চৈতালিদির সাথে দরকারে ওর ঘরে গিয়ে দেখেছিলো চৈতালিদি বিছানায় বসে আছে ঈশান তার কোলে মাথা দিয়ে বাচ্চা ছেলের মতো শুয়ে আছে, চৈতালিদি তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কিছু কথা হচ্ছিলো শুনতে পায়নি, শুধু কানে গেছে – চৈতালিদি বলছে – কি হয়েছে? মায়ের জন্য মন খারাপ করছে ? ঈশান চৈতালিদিকে জড়িয়ে ধরেছে।

ঈশান কে হয় চৈতালিদির? খুব কাছের কেউ? স্টুডেন্ট নাকি আত্মীয়? জানে না চন্দ্রেয়ী জানার ইচ্ছা ও হয়নি।

চন্দ্রেয়ীকে দেখে চৈতালিদি – ও তুই আয় ?

ঘুরে দেখলো ঈশান , উঠে পড়লো ,চন্দ্রেয়ী ঈশানের চোখে জল দেখেছে। ঈশান মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো ,দাঁড়ায়নি ফর্মাল ড্রেস, গিয়েছিলো কোথায়? কাঁদছেই বা কেন?

চৈতালিদি বলছিলো ঈশানকে বসতে বসেনি। চলে গিয়েছিলো।

চৈতালিদি বলেছিলো যা বলার – চৈতালিদি সম্পর্কে ঈশানের মাসি হয়, মায়ের জ্যাঠার ছোট মেয়ে, সেই হিসাবে ছোট মাসি আর সেখান থেকেই সি এম। তারমানে সি এম মানে চৈতালি মিত্র নয়, ছোটোমাসি। ঈশান বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। কিন্তু বাবার সাথে কোনো কালের বনিবনা ছিল না ঈশানের। বাবা বড় চাকরি করতো যা দেখেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন ঈশানের দাদু। কিন্তু ঈশানের মা খুব সাধারণ ছিলেন, যে কারণে অপূর্ব সুন্দরী হয়েও স্বামীর কাছে অবহেলার পাত্রী ছিলেন, বাইরে যে কারণে তিনি আবার এক ডিভোর্সি, এক ছেলের মায়ের প্রেমে পড়েছিলেন , মায়ের উপর মানসিক অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিলো বাবার। আর এই সব কারণেই বাবার থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিলো ঈশান, মা ছিল ঈশানের দুনিয়া। মায়ের ইচ্ছা ছিল ঈশান আই আই টি থেকে পড়ুক আর মায়ের ইচ্ছাতেই পড়েছিল,তার মানে ঈশান সত্যি বলেছিলো সংযুক্তাকে যে ও আইআইটি থেকে পড়েছে।

দাদু কলকাতায় একটা ফ্লাট কিনে দেয় ঈশান আর ওর মায়ের নামে , ঈশান ঠিক করেছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেলে মাকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটেই থাকবে। বাবার থেকে অনেক দূরে। কিন্তু তা আর হয়নি , ঈশান তখন পড়ছে, হটাৎ এক রাত্রে ফোন যায় ওর মা আর নেই।

চৈতালিদি বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে। এরপর নাকি ঈশান আর পড়তে চায়নি , কিন্তু অনেক বুঝিয়ে চৈতালিদি আর ওনার হাসব্যান্ড ঈশানকে সামলেছেন ,তারপর পড়াশোনা শেষ করে কয়েকদিন চাকরি করে, তারপর শোনে যে ওর বাবা এই বয়সে নাকি আবার বিয়ে করেছে। সেই মহিলাকেই বিয়ে করেছেন, বাড়ি যায় অনেক ঝগড়া ঝাটি ঝামেলা করে তারপর মায়ের গয়না, শাড়ী, যা কিছু প্রিয় ছিল সব নিয়ে চলে আসে কলকাতার ফ্ল্যাটে সেই থেকে আর বাবার সাথেও কোনো সম্পর্ক নেই। চাকরি ছেড়ে দেয়। তারপর অনেকে কিছু করে ওই ফ্রীল্যাংসিং করে।

চন্দ্রেয়ী – আজ কি হয়েছে ?কাঁদছিলো?

চৈতালিদি – আজ একটা বড় প্রজেক্ট হাতে এসেছে ,সেই জন্য মায়ের জন্য মন খারাপ। আবার কি? বড্ডো একা রে ছেলেটা, কেউ নেই এত বলি আমার কাছে এসে থাক। না ওই বাড়িতে মা ছিল কয়েকদিন ,ওই বাড়ি ছেড়ে থাকবো না। খুব ভয় হয় জানিস কেমন মেয়ে আসবে ওর জীবনে কে জানে ? যদি সে ধাক্কা দেয় সামলাতে পারবে না। বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো তুই কি বলছিলি বল

চন্দ্রেয়ী – নিজের দরকার বললো। তারপর জিজ্ঞাসা করলো -আচ্ছা – সোনার হরিণ কি ?

চৈতালিদি হেসে ফেললো – তোকেও বলেছে, পাগল কোথাকার। যখন ছোট ছিল কিছুতে ভাত খেত না, ওর মা বলতো খেয়ে নাও আমি সোনার হরিণ এনে দেব। সেই লোভে ভাত খেত।তারপর কিছু কাজ করতে হলেই দিদি বলতো এটা করে দাও আমি সোনার হরিণ দেব, কাজ করে দিতো। কাজ করার পরে চাইলে দিদি বলতো -বড়  হও সোনার হরিনের মতো বৌ এনে দেব। সোনার হরিণ ওর কাছে এমন একটা জিনিস যেটা ওর মায়ের সঙ্গে ওকে জুড়ে রাখে। কদিন ফের শুরু করেছে।

 

আমাদের সব গল্প পড়তে হলে আমাদের পেজে – গল্পে আড্ডায় ক্লিক করুন, ওখান গল্পের আগের সব অংশ পেয়ে যাবেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

নিজের ঘরে এসে শুয়েছিল চন্দ্রেয়ী। কিন্তু কথাগুলো কানে বাজছিলো।ওই কারণেই ট্রেনে মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছিলো ঈশানের। কি করে জানবে চন্দ্রেয়ী, সংযুক্তাও তো বলেনি। আজ চন্দ্রেয়ীর মা যদি বুঝতো চন্দ্রেয়ীর মা থেকেও যেন নেই. আর ঈশানের নেই। আজ ঈশানের মতোই চন্দ্রেয়ীও খুব একা। রাত্রে খাওয়া শেষে গিটার হাতে বসেছিল ঈশান। ‘আমার সোনার হরিণ চাই বাজিয়েছিল। সবাই হাততালি দিচ্ছিলো। চন্দ্রেয়ী আর চৈতালিদি বাদে।

সরি বলবে ভেবেছিলো চন্দ্রেয়ী। কিন্তু

লনে একা দাঁড়িয়েছিল চন্দ্রেয়ী , ঈশান পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল , না এবার আগের মতোই।

ঈশান – এড্রেসটা দিলে না ?

চন্দ্রেয়ী – কার ?

ঈশান – তোমার ?

চন্দ্রেয়ী – কেন?

ঈশান – বা রে পালাবে , তোমাকে নিয়ে আসতে হবে না। বাড়ি যাও দেন আমাকে বোলো কবে কোথায় দাঁড়াতে হবে, আমি পৌঁছে যাবো।

চন্দ্রেয়ী – তোমার মনে হয় আমি তোমার সাথে পালাবো।

ঈশান – মনে হয় না , আমি সিওর, কেননা তোমার কাছে আর কোনো অপশন নেই।

চন্দ্রেয়ী – আর কি মনে হয় ?

ঈশান – তুমি ভাবছিলে ইগোপূর্ণকে সত্যি যদি কল করে বলা যায় যে তুমি প্রেগনেন্ট, বিয়ে ক্যানসেল হতে পারে।

চন্দ্রেয়ী – একটু থমকালো, সত্যি একথা ভেবেছে সে, কিন্তু নিজেকে সামলে বললো। শোনো জীবনটা না এত সহজ নয়। তোমার মতো যা খুশি করলাম ভাবলাম না চিন্তা করলাম না।

ঈশান – জীবনটা এতটাই সোজা ম্যাডাম, যত তুমি জটিল বানাবে ততই জটিল। সোজা বানালে সোজা।

চন্দ্রেয়ী – আচ্ছা , তোমার সাথে পালালাম, তারপর ? আর আমাকে বাড়ি ঢুকতে দেবে না আমার বাড়ির লোক, মুখও দেখবে না।

ঈশান – দূর , আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

চন্দ্রেয়ী – ততদিন।

ঈশান – আমার সাথে ফ্ল্যাটে থাকবে

চন্দ্রেয়ী – কি?

ঈশান – তুমি একটা কাজ করো, কনটেন্ট লেখো টাকা পাও, তাছাড়া এমন প্রোগ্র্যাম করে টাকা পাবে, তুমি স্বাধীন।  আর এদিকে আমি একা থাকি। আমার ফ্ল্যাটে ২ টো ঘর আছে, সেখানে থাকতে প্রব্লেম কি? আর আমার সাথে পালিয়েছো সেটা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে  পারবে না , তোমাকে খুঁজেও পাবে না। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো ,অসুবিধা কি আছে ?

চন্দ্রেয়ী – হয়ে গেছে ? তোমার সাথে তোমার ফ্ল্যাটে গিয়ে আমি থাকবো একা?

ঈশান – আরে বন্ধু হয়ে থাকা যায়না , ইচ্ছা করলে বিয়েও করতে পারো আমাকে আমি রেডি।

চন্দ্রেয়ী – চন্দ্রেয়ী বিরক্ত হয়ে মাথাটা নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছিলো।

ঈশান – আরে দাড়াও এই নাও চকলেট খাও

চন্দ্রেয়ী ঈশানের হাতের দিকে দেখলো কোনো চকলেট নেই , ততক্ষনে ঈশান অনেকটা এগিয়ে এসেছে চন্দ্রেয়ীর দিকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রেয়ী দেখলো দাঁত দিয়ে অর্ধেকটা চকলেট ধরে আছে বাকিটা চন্দ্রেয়ীর দিকে এগিয়ে রেখেছে।

একটু আগে যার জন্য মায়া হচ্ছিলো এবার আর হচ্ছে না ,ও ছেলে শোধরাবার নয়, চন্দ্রেয়ী এতক্ষন বেশি বেশি ভাবছিলো।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!