এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতাকে দলে না পেয়ে তাঁকে হারাতে ‘শিষ্যকেই’ প্রার্থী করতে চলেছে তৃণমূল?

হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতাকে দলে না পেয়ে তাঁকে হারাতে ‘শিষ্যকেই’ প্রার্থী করতে চলেছে তৃণমূল?

রাজনীতিতে গুরু-শিষ্য বলে কথা থাকলেও সেই শিষ্যই যে কখন গুরুর বিরুদ্ধে চলে যাবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন না কেউই। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেই দেখা গেছে ‘রাজনৈতিক গুরু’ অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃণমূল ময়দানে নামিয়েছিল ‘শিষ্য’ অপূর্ব সরকারকে। যদিও গুরুই সেবার বাজিমাত করে বেরিয়ে যায় – তবুও, সেই ফর্মুলায় হাল ছাড়তে রাজি নয় তৃণমূল। আর এবার আবার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা যে আবার এক রাজনৈতিক গুরুর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চলেছেন শিষ্য – এবং সৌজন্যে সেই তৃণমূল।

সূত্রের খবর, রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের একদা নির্বাচনী এজেন্ট তথা বর্তমানে রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন! উত্তর দিনাজপুর জেলার রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে এমনই সব চর্চা শোনা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। সেসময় মোহিতবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন সন্দীপ বিশ্বাস। যদিও সন্দীপবাবু পরবর্তীতে দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন।

বর্তমানে তিনি রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যানও বটে। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগে কংগ্রেস ছেড়ে আসা আরেক নেতা পূর্ণেন্দু দে তৃণমূলের হয়ে মোহিতবাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিলেন ২০১৬ সালে। কিন্তু সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল রায়গঞ্জে কংগ্রেসকে টক্কর দিতে এখন থেকেই জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, একসময় কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্তর শিষ্য হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে তৃণমূল নেতা তথা রায়গঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাসকে পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, বিধানসভা এলাকায় দল তাঁকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে।

যা নিয়েই এবার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র জল্পনা। বস্তুত, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও রায়গঞ্জে গত ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে তৃণমূলকে পরাজিত হতে হয়েছে। পরবর্তীতে কংগ্রেসের একাধিক জেলা, ব্লক পঞ্চায়েত স্তরের নেতা-কর্মীদের ভাঙিয়ে তৃণমূল নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে রায়গঞ্জ পুরসভা ও উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখল করে। কিন্তু উত্তর দিনাজপুর জেলার হেড কোয়ার্টার রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত কংগ্রেস ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

রায়গঞ্জের বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় মোহিতবাবুকে দলে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করলেও, শেষপর্যন্ত তাঁকে টলাতে পারে নি তৃণমূল। যদিও রাজ্যের শাসকদল প্রকাশ্যে একথা স্বীকার করে না। তবে মোহিতবাবুর অনুগামী, ভাবশিষ্য, ঘনিষ্ঠ নেতাদের অনেকেই জেলায় এখন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিগত পুরসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। তবে বিরোধীদের দাবি, গত পুরভোট ও পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ ভোট দিতে পারেনি।

ফলে কে কোথায় ক্ষমতায় রয়েছে, তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। কিন্তু রায়গঞ্জ বিধানসভা এলাকায় নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির অনুকূলে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়াল ৪১,৭৪২, কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি ৯,৭৫৫, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ১১,৪২৯ এবং বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী ৮৩,৯৪৪ ভোট পেয়েছিলেন।

এই ফলাফলের নিরিখে রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনে বিজেপি ও তৃণমূল মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে এলেও, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলে যেতে পারে বলে দাবি বাম-কংগ্রেসের। এদিন এই প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে মানুষ রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল দলটাই থাকবে না। রায়গঞ্জের মানুষ বরবরই কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন, সামনের বিধানসভাতেও থাকবেন।”

তবে গত কয়েক বছরে যেভাবে রায়গঞ্জের রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে তাতে সামনের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি রায়গঞ্জ কার দখলে যাবে, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন অনেকেই। তবে রায়গঞ্জ বিধানসভা দখল করতে এবার মোহিত সেনগুপ্তকে হারানোর জন্য কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চায় তৃণমূল। আর তাইতো এখন থেকেই সেই মোহিত সেনগুপ্তর শিষ্য হিসেবে পরিচিত রায়গঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা সন্দীপ বিশ্বাসকে, দিদিকে বলো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাধারন মানুষের সঙ্গে জনসংযোগে পাঠাতে দেখা যাচ্ছে ঘাসফুল শিবিরকে।

তাহলে কি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে প্রধান মুখ তিনি! এদিন এই প্রসঙ্গে সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনে মোহিতদার নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর দল পুরসভার দায়িত্ব দিয়েছে। সাংগঠনিক কাজকর্ম করার যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই পালন করছি। দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দেবে সেটাই করব।” কিন্তু এর আগে, কংগ্রেসের শক্ত ‘খুঁটি’ হিসাবে পরিচিত অধীর চৌধুরীকে দু-দুবার তাঁর শিষ্য দিয়ে হারাতে গিয়ে (হুমায়ুন কবীর ও অপূর্ব সরকার) ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল। এবার কি আরেক শক্ত ‘খুঁটি’ মোহিত সেনগুপ্তকে হারানো যাবে – প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!