মেয়াদ পুরো করতে পারবে না রাজ্য সরকার? জল্পনা বাড়িয়ে দিলেন খোদ অনুব্রত মণ্ডল মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম রাজ্য December 17, 2019 নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হবার পর থেকেই বাংলায় বিক্ষোভ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। উন্মত্ত জনতা কোথাও স্টেশন পুড়িয়ে দিচ্ছে, আবার কোথাও বা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করছে। আর এই পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে আসা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক দিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা করলেও, কেন বাংলাকে শান্ত রাখতে তারা ব্যর্থ! তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে একাংশ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যত দিন যাচ্ছে, ততই বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে। আর সেদিক থেকে এই ঘটনাকে তুলে ধরেই কেন্দ্রের কাছে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের আবেদন জানাতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি। আর যদি তা হয়ে যায়, তাহলে আগামী 2021 এর অনেক আগেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তবে তৃণমূলের তরফে অবশ্য সমালোচকদের এই সমস্ত বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব সহকারে না দেখলেও, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন অনুব্রত মণ্ডলের গলায় কিন্তু শোনা গেল অন্য কথা। সূত্রের খবর, সোমবার গুসকরায় বীরভূমের আউসগ্রাম বিধানসভা এলাকার দলীয় কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার সহ অঞ্চল ও ব্লক নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সেখানে বিশদে আলোচনা হয়। আর এরই ফাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিধানসভা ভোট হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায় অনুব্রত মণ্ডলের গলায়। কর্মীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বের মাঝে দলের এক অঞ্চল নেতৃত্বকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “বুথে বুথে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে মিটিং করো। কারণ ভোট খুব তাড়াতাড়ি হতে পারে। মাথায় রাখো।” আর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা তৃণমূলের শীর্ষনেতার এহেন মন্তব্যেই এখন ছড়িয়ে পড়েছে জল্পনা। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - তাহলে কি সত্যিই বাংলায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হয়ে যাবে বিধানসভা ভোট? পরে এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “বিধানসভা নির্বাচন এক বছর আগে হতেই পারে। এটা কোনো ব্যাপার নয়। তাতে আমাদের মাথা ধরেনি। আমাদের কর্মীরাও তৈরি আছে।” কিন্তু কেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিধানসভা ভোট হয়ে যাওয়ার কথা শোনা গেল অনুব্রত মণ্ডলের গলায়? তাহলে কি বাংলার আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে বিরোধীরা যে দাবি করছে এবং বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানাচ্ছে, তাতে কি বাংলায় এবার সেই শাসন জারি হতে চলেছে! আর তার জেরেই কি বিধানসভা ভোট আগে হতে পারে বলে আশঙ্কা করলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি? রাজনৈতিক মহলে যখন এই সমস্ত জল্পনা চলছে, ঠিক তখনই এদিনের এই কর্মী সম্মেলন থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, “যে গন্ডগোল হচ্ছে, তার পেছনে বিজেপির ইন্ধন রয়েছে। এটা টাকা দিয়ে করানো হচ্ছে। টাকা খরচ করে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। এনআরসি নিয়ে রাজ্যে হিংসাত্মক আন্দোলন হচ্ছে, তা অন্যায় হচ্ছে। আজ সারা ভারতের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বলেছিলেন যে এনআরসি মানব না। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে সবাই বলছে। কিন্তু আমরা বলছি, কেউ হিংসা ছড়াবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে মিটিং-মিছিল করুন। যারা বাসে, ট্রেনে আগুন ধরাচ্ছেন, তারা সরকারের ক্ষতি করছেন। এটা করবেন না।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে তৃণমূল বিরোধিতা করলেও, বাংলায় যাতে কোনো অগণতান্ত্রিক বিক্ষোভ না হয়, তার জন্য প্রথম থেকেই আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের ভয়াবহ বিক্ষোভে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ওপর উঠেছে বড় প্রশ্ন। তাই এই পরিস্থিতিতে বাংলার আইন-শৃংখলার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বাংলার সরকার আগেই পড়ে যেতে পারে বলে মনে করেছিল একাংশ। তবে সমালোচকদের সেই মন্তব্যতে কিছুটা হলেও গুরুত্ব দিয়ে সময়ের আগেই বিধানসভা ভোট হওয়ার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। আর অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ পেয়ে তীব্র আশংকার দোলাচলে রয়েছেন তৃণমূলের সমস্তস্তরের নেতা-কর্মীরা। আপনার মতামত জানান -