ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের উত্তপ্ত আঁচের বিস্ফোরণ কলকাতার বুকে কলকাতা বিশেষ খবর রাজ্য June 1, 2019 ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হতে হতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পিঠ শুধু দেওয়ালেই ঠেকে যায় নি, বর্তমানে তা যেন তাঁদের দেওয়াল ফুঁড়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে! এমনই অভিযোগ উঠেছে দলমত নির্বিশেষে প্রায় সকল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের থেকে। আর সেই ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি হয়, যখন পে-কমিশনের মেয়াদ আরও ৭ মাসের জন্য বাড়িয়ে নজিরবিহীনভাবে তা ৪ বছরের করে দেন পে-কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার। আর, তাই রাজ্য সরকারের এই বঞ্চনার প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে এবার পথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের সলতে পাকানো শুরু হয়ে গেল। এর আগে পে-কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের শীর্ষনেতৃত্ব নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আগামীদিনে দলমত নির্বিশেষে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন তাঁরা। গতকাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের উত্তপ্ত আঁচের বিস্ফোরণের সাক্ষী রইল শহর কলকাতা। গতকাল ষষ্ঠ পে-কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দেয় গেরুয়া মনোভাবাপন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। এই অবস্থান বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল ওয়েষ্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস কর্মচারী পরিষদ, আর তার সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে তাতে যোগ দেয় সরকারি কর্মচারী পরিষদ ও ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়াও, এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে সেখানে হাজির ছিল আইএনটিইউসি-এর প্রতিনিধিরাও। বিক্ষোভ কর্মসূচির শুরুতেই ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে, এই প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীল জানান, গত ১৪ ই মে অমিত শাহের রোড-শোতে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে যে নিম্নমানের রাজনীতি করে রাজ্যের শাসকদল, তার প্রতিবাদ জানাতেই এই মাল্যদান কর্মসূচি নেওয়া হয়। নিজের প্রতিক্রিয়ায় ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই জানান, ডিএ বা পে-কমিশন তো বটেই শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনা এবং পিটিটিআইদের নিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি না রাখা নিয়েও আমাদের ক্ষোভ ছিল। আমরা আগামী ১৫ দিন সময় দিলাম, তারমধ্যে যদি এইসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজ্য সরকার কোনো সদর্থক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সারা রাজ্যব্যাপী আমরা জ্বালাময়ী আন্দোলন গড়ে তুলব এবং যেখানেই মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী যাবেন – আমরা কালো পতাকা দেখাবো। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - এদিন এই বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের কুশপুতুল দাহ করা হয়, একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে আওয়াজ ওঠে ‘জয় শ্রীরাম’। উল্লেখযোগ্য, তখন ক্যাম্পাসের বাইরে থিকথিক করছে পুলিশ, কিন্তু পুলিশের তরফে সেই বিক্ষোভে কোনো বাধা দেওয়ার চেষ্টাও হয় না! ফলে কোথাও গিয়ে একটা মানসিক সমর্থন পেয়ে বিক্ষোভ থেকে স্লোগান ওঠে, পুলিশ তোমার ডিএ বাকি, এই বিক্ষোভে বসবে নাকি? এই প্রসঙ্গে দেবাশীষবাবু চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী একমাসের মধ্যে যদি পে-কমিশনের সুপারিশ জমা না পরে, তাহলে আমরা অভিরূপ সরকারের অফিস ঘেরাও করব। এদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর থেকে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠায় বিতর্কের সূত্রপাত হয় সে প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে নোংরা রাজনীতি করে ওই জায়গা যে অপবিত্র করা হয়েছিল, সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে ওই জায়গা পবিত্র করে দেওয়া হল। এই প্রসঙ্গে দেবাশীষবাবু বলেন, ভারতীয় সংবিধানের প্রথম পাতাতেই রামের ছবি আছে – রাম নাম করা হয় সকলের মঙ্গল কামনায়। এর মধ্যে কোনো ধর্মের ব্যাপার নেই, তাই পুরুষোত্তম রামকে নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে রাজনীতি করছেন তার প্রতিবাদ জানাতেই এদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি উঠেছে। এই প্রসঙ্গে, এই বিক্ষোভের আয়োজক ওয়েষ্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস কর্মচারী পরিষদের মন্মথ বিশ্বাস জানান, রাজ্য সরকারের ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে যে বঞ্চনা, তার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আমাদের পথে নেমে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই। ভূ-ভারতে কোথাও ৪ বছর ধরে পে-কমিশন চলছে শুনেছেন? কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দিনের পর দিন সরকারি সুবিধা ভোগ করে সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা করে যাচ্ছেন অভিরূপ সরকার, তাই তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে আমরা আজ তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করি। এদিকে আইএনটিইউসির প্রতিনিধি হিসাবে এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা সুবীর সাহা জানান, রাজ্য সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে আন্দোলনের কথা আমরা বারবার জানিয়েছি। বঞ্চনা তো আর রাজনীতির রঙ দেখে হচ্ছে না, এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতিটি দাবির সঙ্গে সহমত পোষন করায়, আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের আঁচ রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছেছে বলে আশা করি। এরপরেও যদি সরকারের ঘুম না ভাঙে, আগামীদিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হব। আপনার মতামত জানান -