এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > “নিজের যোগ্যতা বাড়ান, শুভেন্দুদাকে কাঠি করবেন না”, তৃণমূলের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে পোস্ট ইঙ্গিত কার দিকে? জল্পনা তুঙ্গে

“নিজের যোগ্যতা বাড়ান, শুভেন্দুদাকে কাঠি করবেন না”, তৃণমূলের গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে পোস্ট ইঙ্গিত কার দিকে? জল্পনা তুঙ্গে


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন রয়েছেন, ততদিন তার বিকল্প যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেই, তা জানেন প্রত্যেকেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের স্থানে কে বসবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। বর্তমানে তৃণমূল নেত্রীর পরের ঘোষিত স্থানে রয়েছেন তার ভাইপো তথা যুব তৃনমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অঘোষিত স্থানে থেকে কর্মীদের মন জয় করেছেন যিনি, তিনি হলেন শুভেন্দু অধিকারী। একথা আড়ালে-আবডালে হলেও স্বীকার করে নেন তৃণমূলের প্রত্যেক ছোট, বড়, মেজো সকল নেতাই।

গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছিল। বাঁকুড়া জেলায় কার্যত মাথা তুলে দাঁড়ানোর মত অবস্থা ছিল না রাজ্যের শাসকদলের। পরিস্থিতি সামলাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের কাঁধে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংগঠন তৈরি করার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে ঠিকমত পালন করতে পারেনি তারা বলে অভিযোগ দলের একাংশের। আর সেই সময় অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে এই বাঁকুড়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভেন্দু অধিকারীকে।

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চষে বেরিয়ে বাঁকুড়ার মাটিতে ঘাসফুল ফোটানোর চেষ্টা করেন তিনি। সম্প্রতি যেদিন দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোলো, সেদিন বাঁকুড়া জেলায় বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলার অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীও।

জানা যায়, এই যাবৎকালে বাঁকুড়া জেলায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সমাবেশের যে ভিড় হয়েছিল, তা কার্যত রেকর্ড সংখ্যক ভিড়ে পরিণত হয়েছিল সেই সভায়। যার মূল অবদান ছিল সেই শুভেন্দু অধিকারীর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই সভায় জনতার মাথা দেখে রীতিমতো উজ্জীবিত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নানা আক্রমণাত্মক বাক্য শানান। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, মঞ্চ থেকে দিল্লিতে বিজেপি হেরেছে শুনে বিজেপিকে কটাক্ষ করার মাত্রা দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। আর এরপরই সকল নেতা নেত্রীদের সাথে নিয়ে টানা স্লোগান থাকেন তিনি।

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন শ্লোগানের একটি ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে তৃণমূলের নানা গ্রুপে তৃণমূল নেত্রীর দেওয়া স্লোগান এখন রীতিমত ভাইরাল। তবে এই ভিডিওতে যার জন্য বাঁকুড়ার সমাবেশ ফুলে-ফলে ভরে উঠল, সেই শুভেন্দু অধিকারীর দেখা নেই। জানা যাচ্ছে সেটি একটি ‘টিকটক ভিডিও’ এবং ‘আমার গর্ব মমতা’ পেজ থেকেই ভাইরাল হয়। আর সেটি নানা পেজ থেকে শেয়ার হয়। রীতিমতো ভাইরাল হয়ে ওঠে।

একাংশের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সেই ভিডিও থেকে কেটে তা নানা গ্রুপে ছাড়া হয়েছে‌। কিন্তু কেন তৃণমূলের এই অবিসংবাদিত নেতাকে সেই ভিডিও থেকে সরিয়ে দেওয়া হল! তবে এই নিয়ে বিশেষভাবে চুপ শাসকদলের নেতা নেত্রীরা। সমর্থকদের মতে, এ হেনো কোনো ভিডিও অফিসিয়াল পেজ থেকে শেয়ার হয়নি। কিন্তু তাতেও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। তা হলো এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেও কেন কোনো ব্যাবস্থা নিলো না তৃণমূল। আর এখানেই শুভেন্দু প্রেমীরা বলছেন এটা ইচ্ছাকৃত করা হয়েছে। তাদের দাদাকে এইভাবে আটকে রাখা যাবে না।

সমালোচকদের একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান ঘটাতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মত দক্ষ নেতাকে পরিশ্রম করা সত্ত্বেও সরিয়ে দিতে চাইছেন। আর তার কারণেই তৃণমূল দলের এখন শুভেন্দু অধিকারী পরিশ্রম করলে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করলেও তার কোনো দাম নেই। আর তার চূড়ান্ত প্রমাণ, সেই ভিডিওতে শুভেন্দু অধিকারীর মত সাংগঠনিক নেতার অনুপস্থিতি। এদিকে এই ঘটনার পরেই এবার শুভেন্দু অধিকারীকে নিজেদের নেতা বলে তৃণমূলের অনেকেই তাকে অপমান করার প্রতিবাদে নানা পোস্ট করতে শুরু করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে অনেক পোস্ট করা হচ্ছে। যদিও এই নিয়ে মাঠে নামছে অনেকেই। সেই সব পোস্ট এর কমেন্টেও একে অপরকে বিঁধতে ছাড়ছেন না সমর্থকরা। আবার কেউ কেউ বলছেন এসব বন্ধ করুন, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে বিজেপিকে জায়গা করে দেবেন না।  আর এই নিয়ে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে সর্বাধিক। অন্য পোস্টে বাধ্যবাধকতা রাখা হলেও এদিন একটি পোস্টে নাম না করে তৃণমূলের এক সর্বাধিক হেভিওয়েটকে কটাক্ষ করা হয়েছে।

 

 

সুশোভন ভৌমিক তাঁর  পোস্টে বলেছেন – “ছবি থেকে সরাতে পারো হৃদয় থেকে পারবে?কাদা যত ইচ্ছা ছেটাও ভালোবাসা বাড়বে। “

জানা যাচ্ছে সুমিত দাসগুপ্ত নামে এক ব্যক্তি “বন্ধুমিলন এবং আলাপন “ গ্রুপে একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, “গুরুত্ব বাড়াতে হলে নিজের যোগ্যতায় বাড়ান। শুভেন্দুদাকে যত কাঠি করবেন, ওনার গুরুত্ব তত বাড়বে।” আর এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শুভেন্দু অধিকারীকে অপমান করা হয়েছে বলে কাকে যোগ্যতা বাড়াতে বললেন! কার উদ্দেশ্যে তারা এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন? অনেকে বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী নিজের যোগ্যতায় অনেক জায়গায় দলকে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছেন। সেদিক থেকে তাকে সেকেন্ড ইন কমান্ড না করে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে জায়গা করে নিচ্ছেন তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেদিক থেকে পরোক্ষে এই পোস্ট করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ও শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই খোঁচা দিলেন দিলেন কি প্রশ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের?

 

ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারীর অনেক অনুগামীরা কটাক্ষ করে বলছেন, দাদাকে এত অবহেলার কারণ হল তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা দাদার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে উঠতে পারবে না। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূলে যদি কারও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে তার নাম শুভেন্দু অধিকারী। তাই দলের কোনো এক শীর্ষ স্তরের নেতা নিজের জায়গা শুভেন্দুবাবুকে দেবেন না জন্যেই পরোক্ষে হিংসা করছেন। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি, যিনি শুভেন্দু অধিকারীকে হিংসা করছেন? তাহলে কি সত্যিই তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নাকি কোনো নাম প্রকাশ না করে এই ব্যাপারে শুধুমাত্র জল্পনার জাল সৃষ্টি করলেন শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা! প্রশ্নটা উঠছে দলের অন্দরেই।

 

এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ওই ভিডিও এবং ফেইসবুক পোস্ট এর ভিত্তিতে লেখা। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যাক্তির সম্মানহানি কিংবা বিভেদ তৈরির কারণে লেখা নয়।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!