এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মেদিনীপুর > অনিয়মিত বেতন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, আশার আলো দেখছেন এই কর্মীরা

অনিয়মিত বেতন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, আশার আলো দেখছেন এই কর্মীরা


এতদিন বেতন বৈষম্য কিংবা বেতন সময়ে মিলছে না বা বেতন বৃদ্ধিজনিত একাধিক কারণে প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তোলার একাধিক নজির মিলেছে। যেহেতু সামনেই লোকসভা নির্বাচন তাই বিভিন্ন দাবীদাওয়া সংক্রান্ত ইস্যুতে সুরাহা পাওয়ার আশায় ভুক্তভোগীদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন করতেও দেখা গিয়েছে। তবে এদিন খোদ প্রশাসনকেই ভুক্তভোগীদের পক্ষে সওয়াল তুলতে দেখা গেল।

সম্প্রতি দীঘায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘নিজেদের জীবন বাজি রেখে পর্যটকদের জীবন বাঁচানোর কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের মাসিক বেতন কেন সময়ে হবে না? বেতনের জন্য কেন প্রতিমাসে প্রশ্ন আসে? তোমাদের এই লাল ফিতের ফাঁস বেঁধে রাখার প্রবণতার কারণে অর্ধেক মানুষ সুবিধা পায় না’!

এই প্রেক্ষিতে জেলাশাসক জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে শেষ বেতন পেয়েছেন দীঘার জীবনরক্ষকরা। ফলে, কেন বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা, সে বিষয়ে দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি দুষ্মন্ত নারিয়ালকেও প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে তিনি জানান, জেলাশাসকের সঙ্গে দিন দুয়েক আগে বৈঠক হয়েছিল – রিক্যুইজিশন না পাঠানোর কারণে কতজনকে নিয়োগ করা হয়েছে সেটার হিসাব নেই তাঁদের কাছে। এই প্রেক্ষিতে জেলাশাসক জানান, দপ্তরের অনুমোদন নিয়েই কাজে নিয়োগ করা হয় এবং রিক্যুইজিশনও পাঠানো হয়।

এই কথা শুনেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রীতিমত ধমকের সুরে বলেন, যাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে চলেছেন, তাঁদের বেতন দেওয়ার সময় কোনো রিক্যুইজিশনের দরকার নেই। আর এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি বরদাস্ত করবেন না তিনি বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এর সাথেই, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে, তিন মাস বেতন না পেলে এসব কর্মীদের সংসার চলবে কী করে? তাই মাসের প্রথমে তাঁদের বেতন দিয়ে দেওয়ার কড়া নিদান দেন নেত্রী।

তাছাড়া ওই সংশ্লিষ্ট সভাতেই জেলার বিএলএলআরও দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এক বছরের মধ্যে মেরিন ড্রাইভের ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করা, চোলাই ভাটি তৈরির পিছনে পুলিস ও আবগারির দপ্তরের কর্মীদের একাংশের মদত দেওয়ার বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই মানবিক মুখ প্রত্যক্ষ করে আশার আলো দেখছেন দীঘার নুলিয়ারা। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বেতন সময় মতো দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন – সেখানে আর কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলেই আশা করছেন এই সব ভুক্তভোগী কর্মীরা।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না। তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

সূত্রের খবর, ওই সভাতেই আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী যে দীঘার মেরিন ড্রাইভের কাজ সম্পন্ন করার জন্যে তিনটি ব্রিজের কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে? জবাবে, একবছরেরও বেশি সময় লাগবে শুনে ধমকের সুরে মুখ্যমন্ত্রী, ‘জলদি কাজ’ শেষ করার নির্দেশ দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে এই প্রজেক্ট সম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন – এতো সময় লাগালে চলবে না। এক বছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে।

এরপর নন্দকুমার থেকে দীঘা পর্যন্ত রাস্তার কাজে গড়িমসি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পূর্ত দপ্তরের আধিকারিককে বলেন, ‘তোমাদের অফিসারদের অক্সিজেন সাপ্লাই কর। কাজটা ধুকুরধুকুর করে করছে। দূরন্ত ট্রেন না হোক, অন্তত রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো চলা উচিত। লোকাল ট্রেনের মতোও চলছে না’! এরপর দীঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে দীঘায় আগত প্রচুর বিদেশি পর্যটকদের জন্য মানি ট্রান্সফার ব্যবস্থার সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার আবেদন করা হলে তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাসও দেন এদিন।

এর সঙ্গেই, সমুদ্রের পাড়ে যাতে কেউ দোকান না বসাতে পারে তার জন্য কড়া নজরদারির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া রামনগর এলাকায় ১০০ টি হোম স্টে প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্যেও পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দেন। ভূমি দপ্তরের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, এই জেলায় ডিএলএলআরও, বিএলএলআরওদের বিরুদ্ধে ভীষণ অভিযোগ আসছে। ভূমি দপ্তরের কাজ ভালো করে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির খুব একটা অভিযোগ নেই বলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ভয়ে লোকে তোমাদের নাম বলতে পারে না’। ডিএলএলআরও ও বিএলএলআরওদের নিয়ে হোয়াটসস অ্যাপ গ্রুপ করারও পরামর্শ দেন নেত্রী।

একইসঙ্গে, ওই গ্রুপ রেগুলার মনিটরিং করার নিদানও দেন তিনি। এরই সাথে জানান, এরপর এই সব প্রশাসনিক আধিকারিকদের নামে কোনো অভিযোগ এলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মদের ভাটির প্রসঙ্গে নেত্রীর বক্তব্য, তাঁর কাছে খবর এসেছ আবগারি দপ্তর এবং কিছু পুলিশ কর্তার মদতেই এই সব বেআইনি কাজ চলছে। এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে, নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন এদিন।

ব্যারাকপুরকে মডেল করে চোলাইয়ের ভাটি ভাঙার পর ওইসব গরীর মানুষদের নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী এদিন। এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে নেত্রী প্রশাসনের আধিকারিকদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে সংযত থাকতে। বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে নাম জুড়লেই কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাঁদের। রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি লাঞ্ছিত হয় এমন কোনো কাজ বরদাস্ত করবেন না মুখ্যমন্ত্রী।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!