প্রশাসক বসানো পুরসভায় প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরদের তান্ডব! আধিকারিকদের হেনস্থা ও মারধর কলকাতা রাজ্য September 19, 2019 ক্ষমতায় আসার পরই প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে চালানোর পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দলের জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে। এবার দল এবং নেত্রীর অসস্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানিহাটি পুরসভায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলার ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এই পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার, সেক্রেটারি ও ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর করার জন্য তাড়া করা হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং তার অনুগামীদের দাপটে কোনোক্রমে প্রানে বাঁচতে তিন আধিকারিক পুরসভার পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে লোকসংস্কৃতি ভবনের বাথরুমে লুকিয়ে রক্ষা পান। পরে পুর কর্মীদের সহায়তায় দ্রুত পালিয়ে বাঁচেন। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে কংগ্রেসের তরফে রাজ্য সরকারের সদর দপ্তর নবান্নে চিঠি লিখে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছেও দাবি জানানো হয়েছে। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে । এদিন এই প্রসঙ্গে পুরসভার প্রশাসক তথা বারাকপুরের মহকুমা শাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম বলেন, “এই সংক্রান্ত অভিযোগ শুনেছি। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু কেন এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটল! কেন প্রাক্তন কাউন্সিলার প্রশাসক দিয়ে পরিচালিত পৌরসভায় দলবল নিয়ে হামলা চালালেন! আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - জানা যায়, এই পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার জয়ন্ত দাস ওরফে গোবিন্দ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছাড়ে ৬টা নাগাদ দলবল নিয়ে পুরসভার সামনে হাজির হন। এরপরই তিনি আচমকা অ্যাম্বুলেন্স বিভাগে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে দেন। পরে দোতলায় উঠে পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার ও সেক্রেটারিকে গালাগালি করতে করতে তাড়া করেন বলে অভিযোগ। তবে দুই আধিকারিক কোনওমতে পুরসভার পেছন গেট দিয়ে বেরিয়ে লোকসংস্কৃতি ভবনের ভিতরে বাথরুমে ঢুকে পড়েন। তাঁদের না পেয়ে অভিযুক্তরা পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারকেও মারতে যায়। কিন্তু তিনিও সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে পালান। তিন আধিকারিকের খোঁজে হামলাকারীরা তিন তলায় উঠে এক মহিলা কর্মীকেও হেনস্তা করে বলে অভিযোগ। তিন আধিকারিক পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছে বুঝতে পেরে তারা লোকসংস্কৃতি ভবনে যায়। সেখানে খানাতল্লাশি চালিয়েও আধিকারিকদের কোনও খোঁজ না পেয়ে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে মারধর করা হয় বলে অভি যোগ।এদিন এই ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার জয়ন্ত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য তথা পানিহাটির প্রাক্তন কাউন্সিলার সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভায় প্রশাসক বসানো হলেও, তৃণমূল নেতৃত্ব বাড়িতে বসেই পুরসভা চালাতে চাইছে। অবৈধভাবে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানো নিয়ে প্রশাসক ও পুরসভার অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়েছে। সেকারণে আধিকারিকদের উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আধিকারিকরা কোনওমতে পালিয়ে বেঁচেছেন। এই ঘটনা পানিহাটির কাছে বড় লজ্জা। আমরা সর্বস্তরে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” এদিকে এই ঘটনায় পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, “আমাদের প্রাক্তন কাউন্সিলারের সঙ্গে কংগ্রেসের সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কয়েকদিন ধরে ব্যক্তিগত ঝামেলা চলছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের লোকেদের মধ্যে পুরসভার গেটের সামনে ঝামেলা ও হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় পুলিস আসছে জানতে পেরে দুই পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন দিক দিয়ে পালায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন পুরসভার ভিতর দিয়ে দৌড়ে পালায়। পুরসভার কোনও কর্মী বা আধিকারিককে মারধরের কোনও প্রশ্নই নেই। অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।” কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক যাই বলুন না কেন, যেভাবে তার দলের প্রাক্তন কাউন্সিলার প্রশাসক দিয়ে পরিচালিত পৌরসভায় ঢুকে সরকারি আধিকারিকদের উপর হামলা চালালেন তা নিঃসন্দেহে বেনজীর এবং নিন্দনীয় ঘটনা, সেই ব্যাপারে একমত প্রায় প্রত্যেকেই। আপনার মতামত জানান -