এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > উলটপুরান! তৃনমূল করব না মুচলেকা দিলে তবেই গ্রামে থাকার অনুমতি একদা তৃনমূল গড়েই

উলটপুরান! তৃনমূল করব না মুচলেকা দিলে তবেই গ্রামে থাকার অনুমতি একদা তৃনমূল গড়েই

একসময় কেশপুর গরবেতা অভেদ্য লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে সেখানে শাসন করে এসেছে কমিউনিস্টরা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চিত্র পরিবর্তিত হতে থাকে পশ্চিমাঞ্চলের। তাই ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে থাকে সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে এলাকায় নিজেদের সংগঠনকে বৃদ্ধি করতে বিশেষ নজর দেয় রাজ্যের শাসক দল।

যার ফলে কেশপুর তৃণমূলের দখলে চলে আসে। কিন্তু বরাবরই রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত এই সমস্ত এলাকায় চিরাচরিত শান্তি কখনও বিরাজ করেনি। তাই শাসক-বিরোধী সংঘর্ষ সেকাল-একাল দুই সময় সমান ভাবে রয়ে গেছে। এখন প্রায় দিনই এই সমস্ত অঞ্চলে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ চোখে পড়ে।

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী চলচ্চিত্র অভিনেতা দেবের কাছে বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ পরাজিত হলেও রাজ্যে বিজেপির ব্যাপক উত্থানে উৎসাহিত হয়েছে এলাকার গেরুয়া শিবিরের কর্মীগন। আর এরপরই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায় বিজেপি কর্মীদের। কিছু কিছু এলাকায় পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে পড়ে।

“তৃণমূল করব না” বলে মুচলেকা পত্র যদি বিজেপির হাতে তুলে দেওয়া না হয়, তাহলে এলাকায় বসবাস করা যাবে না, থাকা যাবে না, নিজের বাড়িতে এই ধরনের ফরমান বিজেপির তরফ থেকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির গভীরতা বুঝতে পেরে পশ্চিমাঞ্চলে নিজেদের ঘরকে শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টার কমতি রাখেনি ঘাসফুল শিবির। এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী দাপুটে তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীও কেশপুরে সভা করেন। পরে এলাকায় মিছিল করতে দেখা যায় শুভেন্দু অধিকারীকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর তৃণমূলের মিছিলের পরে সায়ন্তন বসুকে নিয়ে পাল্টা মিছিল করে পরাজিত ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। এরকমভাবে সভা পাল্টা সভা, মিছিল, পাল্টা মিছিলকে কেন্দ্র করে কেশপুরের রাজনৈতিক উত্তাপ যে ক্রমেই বৃদ্ধির পথে সে বিষয়ে একমত প্রায় সকলেই। কিন্তু চিরাচরিত মানচিত্রের বাইরে বেরিয়ে এলাকার মানুষের শান্তি যে ক্রমে বিঘ্নিত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্তমানে কেশপুরে তৃণমূলের অনেক অফিসেই অস্থায়ী শিবির বানিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে একাধিক তৃণমূল নেতাকে । ঘরছাড়া এই তৃণমূল নেতারা দাবি করছে, নিজেদের গ্রামে বসবাস করতে গেলে তাদেরকে তৃণমূল ছাড়ার এবং বিজেপিতে যোগদান করার মুচলেকা পত্র জমা দিতে হবে পদ্মফুল শিবিরের কাছে। নইলে এলাকায় বসবাস করতে দেওয়া হবে না। কেশপুর ব্লকের তৃণমূল কার্যালয় গেলেই চোখে পরবে, বারান্দায় চেয়ার টেবিলে বসে আছে তৃণমূল নেতা কর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করলে জানা যায়, এলাকার পরিস্থিতি কতটা গভীর।

8 নম্বর আমরাকুচি পঞ্চায়েতের জামিরা, চরকা, খলসা সহ একাধিক গ্রাম ও কেশপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেখ আজহারের সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি জানান, 18 দিন ধরে আমরা সামাজিকভাবে বয়কট হয়েছিলাম। আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারি। পরে ওরা মুচলেকা পত্র দিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হই। কয়েকদিন আগে আমি বাড়ি গিয়েছিলাম খবর পেয়ে ওরা বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে। পরে সশস্ত্র অবস্থায় আমাদের কাছে এসে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি করার লিখিত মুচলেখা দেওয়ার কথা বলে। আমি মৌখিকভাবে তাদের প্রস্তাবে রাজি হই, কিন্তু মুচলেকা না দিলে থাকা চলবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় ঘর ছেড়ে পার্টি অফিসে রয়েছি। আমার মত এখানে কেশপুর ও আমরাকুচি পঞ্চায়েত মিলিয়ে 40 জন রয়েছেন।

চরকার দাপটে তৃণমূল নেতা করিম বক্সও এই পার্টি অফিস রয়েছে তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, “দল ছাড়ার মুচলেকা দিলে ওরা বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে। কাটমানি নিয়ে বিজেপি অপপ্রচার করছে। আসলে নিজেদের সন্ত্রাস ঢাকতে ওরা এই সমস্ত কথা বলছে। আমরা কারো কাছে কাটমানির টাকা নিইনি। ভোটের ফল বের হওয়ার পর থেকেই পার্টি অফিসে রয়েছি।”

অন্যদিকে এই ব্যাপারে কেশপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “কাটমানির কোনো বিষয়ই নেই। বিজেপি লোকজন জোর করে লেখা নিয়ে তৃণমূল ছাড়তে বাধ্য করাচ্ছে। অনেকে বাড়িতে থাকার জন্য বিজেপির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে চেষ্টা করছি তাদেরকে ধীরে ধীরে বাড়িতে পাঠানোর।” কিন্তু শুধু যে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাই নয়, এলাকায় বারবার তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে পদ্মফুল শিবিরকে।

উল্লেখ্য, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে ঘেরাও করে যেভাবে নিগ্রীহিত করা হয় তার থেকেও আন্দাজ পাওয়া যায় এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনা। এদিন এই বিজেপির মধ্য মন্ডলের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ রায় বলেন, “আমাদের দলের কর্মীদের ওরা মিথ্যা মামলায় ফাসাচ্ছে। বহু নেতাকর্মী এখনও জেলে রয়েছে। ফলে মুচলেখা নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের এখনও হয়নি। আসলে ওরা ক্ষমতায় থেকে মানুষের কাছ থেকে এত কাটমানি নিয়েছে, যে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে ওরা নিজেদের ঘর ছাড়া হয়েছে। এর জন্য বিজেপি কোনো ভাবে দায়ী নয়।”

কিন্তু দুই দলের রাজনৈতিক সংঘর্ষ একদিকে আর এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা, অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার এতদিন পরে পর্যন্ত এলাকায় আইনের শাসনের যে এখনও সময় হয়নি, তা সকলেই বুঝতে পারছে। এখন প্রশাসন পরিস্থিতিকে কি করে সামাল দেয়, এলাকার রাজনীতিতে সত্যি সত্যি তৃণমূলের অস্তিত্ব সংকট ঘটে, নাকি শাসক দল নিজেদের প্রচারের মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি ঘটায়! সেদিকেই তাকিয়ে বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!