এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > বিজেপি-তৃনমূলকে টপকে পিছন থেকে বাজিমাত করবেন না তো জোট প্রার্থী? “ব্যাক্তিগত ইমেজ” ভাবাচ্ছে

বিজেপি-তৃনমূলকে টপকে পিছন থেকে বাজিমাত করবেন না তো জোট প্রার্থী? “ব্যাক্তিগত ইমেজ” ভাবাচ্ছে

 

গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে জয়জয়কার হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। মমতা জড়ে রীতিমতো উড়ে গিয়েছিল বাম-কংগ্রেস গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যের বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস জোটবদ্ধ ভাবে লড়াই করলেও এই অসম জোটকে যে বাংলার মানুষ মেনে নিতে পারেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে। কিন্তু সেই ঝড়ের মধ্যেও খড়গপুর আসনে টিমটিম করে জ্বলতে দেখা যায় ভারতীয় জনতা পার্টিকে।

রাজনৈতিক মহলের কাছে যা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লোকের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, যেখানে মমতা ঝড়ে হালে পানি পাচ্ছে না এবং কংগ্রেসের সংযুক্ত প্রার্থীরা, সেখানে কি করে খড়গপুর আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ জয়লাভ করেছিল! বামপন্থী একাধিক নেতা বিজেপির এই জয়কে তৃণমূল-বিজেপি গোপন আঁতাত বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন।

কিন্তু 16 থেকে শুরু করে 19 গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বিরোধী দলের তকমা হারিয়ে রাজ্যের 42 টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রেও জয়লাভ করতে পারেনি বামফ্রন্ট। অপরদিকে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটেছে ভারতীয় জনতা পার্টির। খড়্গপুরের তদানীন্তন বিধায়কও এখন লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু তার আসনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির দ্বন্দ্বে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী লাভের গুড় নিয়ে পালিয়ে যাবে কিনা, সেই আশঙ্কা দেখা দিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক শিবিরগুলোতে।

বস্তুত, মঙ্গলবার খড়্গপুরের মালঞ্চ বাজার এলাকায় প্রচার করতে আসেন বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মন্ডল। তার প্রচারের সময় জনগণের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা চোখে পড়ে। কেউ দোকান থেকে বেরিয়ে এসে প্রার্থীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে শুরু করেন, আবার কেউ স্যার বা মাস্টারমশাই বলে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আর রাজনীতিতে বর্তমানে যখন অনৈতিকতার এবং অস্বচ্ছতার কাল চলছে, সেই সময় বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মন্ডলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বর্তমানে তাদের একমাত্র সম্পদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আর সেই ভাবমূর্তিকে পুঁজি করেই খড়্গপুরের লড়াই যে এবারে ত্রিকোণ আকৃতি ধারণ করতে চলেছে, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই বিশেষজ্ঞ মহলের। প্রার্থী সম্পর্কে জানা যায়, প্রত্যেকদিন চারটের সময় নিয়ম করে শয্যা ত্যাগ করেন চিত্তবাবু। নিত্য পূজাকর্ম সেরে, লাল চা মুড়ি এবং বিস্কুট সহযোগে প্রাতরাশ সেরে নিজের স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসে চলে আসেন প্রার্থী। তিনি খড়গপুর পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলরও বটে। তাই 10 নম্বর ওয়ার্ডে বসে সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত দৈনিক জনসংযোগ সম্পূর্ণ করেন বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী।

মঙ্গলবার দিন সেইরকমই প্রচার যাত্রায় বেরিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু। সঙ্গে ছিল কংগ্রেস এবং সিপিএমের দলীয় কর্মী সমর্থকরা। নিজ নিজ দলের ঝান্ডা ঘরে নিয়ে প্রার্থীর জন্য সকলের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে থাকে সমর্থকরা‌। স্থানীয় বালাজি মন্দিরের কাছ থেকে পদযাত্রা শুরু করে অতুলমনি স্কুলের কাছে এসে পদযাত্রা শেষ হয় চিত্তরঞ্জন মন্ডলের। প্রাথমিক পর্যায়ের এই পদযাত্রা শেষ করেই মালঞ্চ বাজার এলাকায় পুনরায় জনসংযোগ করতে আগ্রহী হন বাম কংগ্রেস প্রার্থী।

কিন্তু এই প্রচারের সময় কিছু নজিরবিহীন ঘটনা সামনে আসতে শুরু করে। বর্তমান রাজনীতিতে যেখানে আতসকাঁচ দিয়ে খুঁজেও সৌজন্যে পাওয়া যায় না, যেখানে রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি সাধারন জনগন সর্বদায় বীতশ্রদ্ধ থাকেন, সেখানে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার হিড়িক পড়ে যায়। সাধারণ পথচারী এবং দোকানদারদের অনেকেই চিত্তরঞ্জনবাবুকে মাস্টারমশাই বলে বিশেষ সম্মানে অভিহিত করেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পাশাপাশি তারা এও বলেন, “গতবারের ভুল আর এবারে যেন না হয়।” আর লোকমুখে এই কথা শুনেই এখন বাড়তি অক্সিজেন পেতে শুরু করেছেন বাম- কংগ্রেস শিবির। প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মন্ডল পেশায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। 1972 থেকে 2008 সাল পর্যন্ত পূর্বোক্ত অতুলমনি স্কুলেরই শিক্ষকতার কাজ করেছেন চিত্তবাবু। জানা যায়, স্থানীয় এলাকার অনেকেই চিত্তবাবুর হাতে তৈরি ছাত্র-ছাত্রী। এমনকি তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ সরকার নিজেও চিত্তবাবুর ছাত্র।

বাম কংগ্রেস প্রার্থীকে নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে প্রদীপবাবু বলেন, “মাস্টারমশাইকে নিয়ে কিছু বলব না। তিনি সজ্জন মানুষ।” আর এই সর্বজন স্বীকৃত জনসমর্থন নিয়ে খড়গপুর আসনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে জাতীয় কংগ্রেস। প্রচারে নিজের বক্তব্য চিত্তরঞ্জন মন্ডল বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনে টাকার খেলা হয়েছিল। কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ওদের ভোট দিয়েছিল। এবার আর সেটা হবে না।” আর চিত্তবাবুর বক্তব্য শেষ হতে না হতেই স্থানীয় একটি লোক বাজারের ব্যাগ হাতে করে জোট প্রার্থীর কাছে দৌড়ে এসে বলেন, “চিন্তা করবেন না। আমরা এবার আছি।”

নিজের হাতের বাজারের থলে দেখিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে সেই ভদ্রলোক বলেন, “200 টাকার বাজার করেও ব্যাগ ভর্তি হচ্ছে না।” তাই রাম মন্দির করে যে পেট ভরবে না, একথাও সেই বাজার খদ্দেরের মুখ থেকে শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলের অনেকে বলতে শুরু করে দিয়েছেন, এইরকম ঘটনা অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বপরিকল্পিত হয়ে থাকে। নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে জনগণ সেজে এরকম লোকনাটিকার ঘটনা আগেও লক্ষ করা গেছে।

কিন্তু এখন চর্চার বিষয় যে, খড়গপুর আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কুড়ি হাজারও পার করতে পারেনি বাম কংগ্রেস জোট, সেখানে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন বিজেপি পশ্চিমবাংলার চর্চিত বিরোধী মুখ, সেই সময় নিজেদের প্রার্থীকে কী করে জিতিয়ে আনবেন বাম কংগ্রেস শিবির? শুধুমাত্র প্রার্থীর স্বচ্ছ ইমেজের উপর ভরসা করেই কি নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে বাম- কংগ্রেস জোটের! উত্তর পাওয়া যাবে উপনির্বাচনের ভোট গণনার দিন।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!