এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > প্রভাবশালীদের কাটমানি নেওয়ার প্রতিবাদেই গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হল! অভিযোগ মৃত তৃনমূল নেতার পরিবারের

প্রভাবশালীদের কাটমানি নেওয়ার প্রতিবাদেই গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হল! অভিযোগ মৃত তৃনমূল নেতার পরিবারের


প্রভাবশালী নেতৃত্বের কাটমানি খাওয়ায় বাঁধা দেওয়াতে তৃণমূল নেতাকে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করার অভিযোগ উঠল শাসকদলের প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, সোমবার রাত্রি বেলায় টুঙ্গি গ্রামের দলীয় অফিসের ভিতরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে বালির এক পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতিকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল দলের এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূলের আরেক কর্মী ভ্রমর মন্ডল নামে জনৈক ব্যাক্তি। মৃত বালি 1 পঞ্চায়েত তৃণমূলের সভাপতি নিমাই মণ্ডলকে পরপর সাতটি গুলি করা হয়। যার জেরে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে। নিমাইবাবুর পরিবার দাবি করেছে, কাটমানি নেওয়ার প্রতিবাদ করায় তাকে খুন করা হয়েছে।

এমনিতেই তৃণমূলের অন্দরে প্রভাবশালী নেতাদের বিভিন্ন প্রকল্পের নাম করে কাটমানি গ্রহণের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্পে প্রতিটি উপভোক্তার কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা করে কাঠমানি চেয়েছিলেন এক তৃণমূল নেতা বলে অভিযোগ। পেশায় প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত নিমাই মন্ডল ওই ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হল বলে অভিযোগ। মৃত ওই তৃণমূল নেতার মেয়ে এবং ছেলের তরফ থেকে পরিবারের লোকজন এবং এলাকার বাসিন্দারা এই বিষয়ে দোষারোপ করছেন স্থানীয় এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে।

এদিন গ্রামে গিয়ে অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার খোঁজ পাওয়া যায়নি এবং তার পরিবারের কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু গোটা ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ দাবি করছে, বিজেপি এবং কংগ্রেস একজোট হয়ে ওই তৃণমূল নেতাকে খুন করেছে। আবার অপরদিকে জেলার অন্য গোষ্ঠী সংবাদমাধ্যমের সামনে অন্তর্ঘাতের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিন এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম খোদা হাফিজ, রাহুল মন্ডল এবং সুজাত আলি শেখ। তাদেরকে 6 দিনের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।” এদিন ঘটনাস্থলের সাংবাদিকরা গিয়ে দেখেন যে টুঙ্গি গ্রামের যে অফিসে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেই অফিস তালা বন্ধ রয়েছে। ঘটনার দিন অফিসে ছিলেন সিরাপ আলি নামে এক প্রবীণ তৃণমূল কর্মী। \

এদিন তিনি সাংবাদিকদেরকে জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সন্ধ্যাতে দলীয় অফিসে বসে আমরা গল্প করছিলাম। মোট 6 জন সেই সময় সেখানে ছিলেন। নিমাইবাবু একপাশে ছিলেন। হঠাৎ করেই দেখি 5 জন মুখে কালো কাপড় বেঁধে অফিসে আসছে। কোনো কথা না বলেই তারা নিমাইবাবুকে গুলি করতে থাকে। পরপর 6 থেকে 7 টি গুলি করা হয়। বাধা দিতে গেলে ওরা আমার দিকে পিস্তল তাক করে ভ্রমর নামে আরেকজন তৃণমূল কর্মীও তাকে বাচাতে গিয়েছিলেন। দুষ্কৃতীরা তার পায়ে গুলি করে তা দেখে বাকিরা ছুটে অফিস থেকে পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতীরা নিমাইবাবুর মৃত্যু নিশ্চিত করে পার্টি অফিসের সামনে রাস্তা দিয়ে হেটে গ্রামের মাঠের দিকে চলে যায়।

রাস্তার দু’পাশে অনেক বাড়ি ছিল, কিন্তু গুলির শব্দ শুনে বাইরে বেরোলেও হাতে রিভলভার থাকায় কেউ তাদেরকে ধরতে সাহস পায়নি। দুষ্কৃতীরা প্রত্যেকেই কুড়ি থেকে 25 বছর বয়সী। কিন্তু তারা যে নিমাইবাবুকে হত্যা করার স্থির উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে অফিসে দুর্ঘটনা ঘটে, তার থেকে 700 মিটারের মধ্যেই নিমাইবাবুর বাড়ি। তার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে পড়েছে। মৃতের মেয়ে শাওনি মন্ডল বলেন, “বাবা গ্রামে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সেটা ওই নেতা মেনে নিতে পারেননি। ওরা বিভিন্ন প্রকল্পে গ্রামের গরিব লোকেদের কাছ থেকে টাকা নিত। বাবা তার প্রতিবাদ করত। আর সেই কারণেই গতবছর বহিরাগত দুষ্কৃতী নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে হামলা করেছিল।” অন্যদিকে এই ব্যাপারে নিমাইবাবুর স্ত্রী অপর্ণা মন্ডল বলেন, “ওই নেতা কয়েকদিন আগে ওকে হুমকি দিয়ে বলেছিল বাড়ির লোকজনদের তোর ছবি বাধিয়ে রাখতে বলিস। কিন্তু আমার স্বামী কখনই অন্যায়কে প্রশ্রয় করত না। সে কারণেই ওর উপর ওদের এত বেশি রাগ ছিল।”

বিশেষ সূত্র মারফত জানা গেছে, নিমাইবাবু এক নম্বর বালি পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে তার বিরোধিতা ছিল, একথা তৃণমূল কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি আবু তাহেরও সংবাদমাধ্যমের সামনে স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও দলের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করে ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূল নেতা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস এবং বিজেপি একজোট হয়ে নিমাইবাবুকে খুন করেছে।”

যদিও গোটা ব্যাপারটা নিয়ে তৃণমূলকেই দোষারোপ করেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস এবং বিজেপির জেলার সহ সভাপতি শাখারভ সরকার। এদিন তারা বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।” কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দল নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা করছে, তখন এরকম একটা বিষয়ে খুনের মতো জঘন্য অপরাধ এবং তাতে গোষ্ঠীকোন্দলের দলের উল্লেখ পাওয়া শাসক দলের পক্ষে সুখকর নয়। তাই আগামী দিনে নিজেদের ঘাঁটিকে শক্ত করতে মুর্শিদাবাদ জেলায় মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস যে সাংগঠনিক বিস্তার চালাচ্ছে, তাতে এমন ঘটনা যে একেবারেই দলের স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর নয়, সেই বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!