এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃনমূলে, অস্বস্তিতে শাসকদল!

চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃনমূলে, অস্বস্তিতে শাসকদল!

 

প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন গোষ্ঠী কোন্দলের খবর পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। আর এবার পৌরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান রাজীব দালালের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে সদ্য অপসারিত তৃণমূল কংগ্রেসের শহর-সভাপতি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলায় হরিণঘাটা থানার অন্তর্গত রাজীববাবুর শিমহাটের বাড়ির সামনে অনেক মহিলাকে জড়ো হতে দেখা যায় এলাকায়।

উত্তেজনার মধ্যে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িকে লক্ষ্য করে কয়েকজনকে রীতিমতো ইট বর্ষণ করতে দেখা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে রাত্রি পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানা যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ সূত্রে। তবে প্রাক্তন পুরপ্রধান রাজীব দালালের অবশ্য অভিযোগ ওই ঘটনায় তার বাড়ির কাচের জানলা সহ বেশ কিছু আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তাছাড়াও দুষ্কৃতীরা তার বাড়ির ভিতরে ঢুকে জিনিসপত্র লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজীববাবু। তবে হামলার কারণ হিসাবে রাজীববাবুর অভিযোগ, কয়েকদিন আগে বদল ঘটেছে হরিণঘাটা শহর তৃণমূল সভাপতি পদে। এদিনই পদে নবনিযুক্ত সভাপতি দেবাশিস বসুর ডাকে আয়োজিত সভাতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজীববাবু। আর এই সুযোগে দুষ্কৃতীরা তার বাড়িতে হামলা চালায়।

এক্ষেত্রে প্রাক্তন সভাপতি উত্তম সাহার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করতে দেখা গেছে রাজীব দালালকে। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে হামলার পিছনে সদ্য অপসারিত শহর তৃণমূল সভাপতি উত্তম সাহা রয়েছেন। পুলিশ এসে সব দেখে গিয়েছে। প্রয়োজনে আমি উত্তমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব।”

এদিকে স্বাভাবিকভাবেই নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব রকম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন শহর তৃণমূল সভাপতি উত্তম সাহা। তিনি বলেন, “এদিন হামলার সময় জাগুলিতে কর্মতীর্থের মাঠে দলের কর্মীদের নিয়ে সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হামলার কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান উত্তমবাবু। তার বক্তব্য অনুযায়ী, রাজীব আমার ছোট ভাইয়ের মত। আমি কেন লোকজনকে ওর বিরুদ্ধে খেপাতে যাব! তবে এই বিষয়ে রাজনৈতিক মহলের মধ্যে হরিণঘাটা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 2015 সালে হরিণঘাটা পৌরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের পুরবোর্ড গঠন হলে রাজীব দালাল তার পুরপ্রধান হন। তবে এই রাজীববাবু বরাবরই হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। আবার বিগত দিনে উত্তম সাহা হরিণঘাটা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি থাকলেও, অনেক বিষয়েই ব্লক সভাপতি চন্দন দেবনাথকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেখা যেত। অবশ্য পরবর্তীতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পরেই রাজীববাবু জাগুলিয়া পার্টি অফিসে হামলা চালায় ভারতীয় জনতা পার্টি বলে খবর। হামলায় পার্টি অফিসের জিনিসপত্র ভাঙচুর করার পাশাপাশি রাজীববাবুর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে মারধরও করা হয় বলে জানা যায়।

শুধু তাই নয়, দলের অভ্যন্তর থেকে অনেক কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে রীতিমত বিরোধিতা করতে থাকে। আবার অনেক কাউন্সিলর রাজীব দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এদিকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন চঞ্চলবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শহর সভাপতি উত্তমবাবু সম্পূর্ণ সংগঠনকে আওতাভুক্ত করে ফেলেন। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে পুরপ্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাজীববাবুকে।

পরবর্তীতে উত্তমবাবুর অনুরাগীদের তরফ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ কাউন্সিলররা উত্তমবাবুর সঙ্গে রয়েছেন, রাজীববাবুর সঙ্গে তেমন কোনো কাউন্সিলর নেই। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, রাজীববাবু এখনও পর্যন্ত এলাকায় চঞ্চলবাবু বলেই পরিচিত। যার ফলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, উত্তম সাহাকে টাউন সভাপতি পদ থেকে সরানোর পিছনে নেপথ্যে হাত রয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান রাজীব দালালের।

কিন্তু যে যাই বলুক না কেন, এলাকার মানুষের অনেকেই মনে করছেন, রাজীববাবুর বিরুদ্ধে এমনিতেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক মানুষ ক্ষিপ্ত ছিলেন। এই হামলা কিন্তু সেই ধরনের রাগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। এই বিষয়ে প্রাক্তন সভাপতি উত্তম সাহা বলেন, “রাজীব তো লোকসভা ভোটের পর সবসময় আমার পিছনে ঘুরে বেড়াত। নানা কারণে তখন বহু লোক ওকে মারতে এসেছিল। আমি ওকে রক্ষা করেছি। আমি কাউকেই ওর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলিনি। তবে এটা ঠিক, বহুদিন ধরে রাজীবের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।”

এক্ষেত্রে রাজীব দালালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে উত্তমবাবু বলেন, “একসময় কথায় কথায় লোকজনকে পেটাতো রাজীব। সেই কারণে কিছু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওর বাড়িতে হামলা করে থাকতে পারে।” ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, প্রতিদিন যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসছে এবং দলের নেতারাই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন, এই রকম পরিস্থিতি থাকলে কিন্তু আগামীদিনে রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে রক্তচাপ অনেকটাই বাড়তে পারে।

কারণ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টির আত্মপ্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে তৃণমূলের তরফ থেকে বারবার নিজেদের বুথ নিজেদের টাউন এবং জেলাতে সংগঠনের মধ্যে একতা বজিয়ে রাখার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কর্মীসমর্থকরা যদি নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন, তবে দলের পরিস্থিতি যে আগামীতে খারাপ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!