ভরসা কি নেই কারুর ওপর, অভিযোগ জানানো নিয়ে বড়সড় নির্দেশ নেত্রীর উঠছে প্রশ্ন কলকাতা রাজ্য July 10, 2019 কথায় আছে, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আর এবার সেই ঘটনা এসে উপস্থিত হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ললাটে। দীর্ঘ দিন যার চোখ দিয়ে সংগঠনকে দেখে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী, সেই যখন রং বদল করে পদ্ম শিবিরে যায়, তখন দলীয় গঠনতন্ত্রের যে অংকগণিত তিনি মনে করে নিয়ে গেছিলেন এবং সংগঠনের সাজসজ্জার যতটুকু অংশ তার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, সেই অংশ যে রীতিমতো তৃণমূল কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছে তা বলাই বাহুল্য। নিত্যদিনের রাজনৈতিক দলবদল তো বটেই, পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচন থেকে দল বিরোধী কাজ করার অভিযোগ উঠেছে একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তাই রাজনীতিতে এবার কোনো সেকেন্ড ম্যানে আস্তা না রেখে আসরে নেমেছেন স্বয়ং তৃণমূল সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার শীর্ষ নেতৃত্বদেরকে নিয়ে বিধানসভায় বসেন দলনেত্রী। জেলায় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে যেন সরাসরি তাকেই জানানো হয় এদিন এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী। বস্তুত, এবছর লোকসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে পদ্মফুলের বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে। তবে রাজ্যের শাসক দলকে পদ্ম শিবির সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে উত্তরবঙ্গে। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের দাবি মত উত্তররতে ৮এ ৮ না পেলেও আটে সাতটি আসন লাভ করে ভারতীয় জনতা পার্টি। অন্যদিকে বাকি একটি আসন জিতে নেয় জাতীয় কংগ্রেস। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তরবঙ্গে তাদের প্রাপ্ত সিটের সংখ্যা শূন্য। যার কারনে উত্তরাঞ্চল যে নেত্রীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তা বলার অবকাশ রাখে না। এছাড়াও এই বিষয়ে দলীয় অন্তর্ঘাত বারবার সামনে এসেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে দলীয় অন্তর্ঘাত করার অভিযোগে পদ হারাতে হয় জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে। তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন তৃণমূল কংগ্রেসের বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। পরে অবশ্য পদ হারিয়ে বিজেপির পথে পাড়ি দেন বিপ্লববাবু। সঙ্গে নিয়ে যান জেলা পরিষদের 10 জন সদস্যকে। যার জেরে এবারে জেলা নেতৃত্বদের প্রতি অনেকটাই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তার স্পষ্ট দাবি, জেলার যেকোনো সাংগঠনিক ক্রাইসিসের কথা সরাসরি তাকেই জানাতে হবে। এই বিষয়ে কোনো মধ্যম নেতৃত্বকে তিনি অনুমোদন করবেন না। তবে এই দিনের আলোচনায় কিছুটা রেয়াত পায় দক্ষিণের মুর্শিদাবাদ। জানা যায়, মুর্শিদাবাদে এবার তৃণমূল আগের তুলনায় অনেক ভালো ফল করেছে। জাতীয় কংগ্রেসের গড় হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদে তৃণমূল কংগ্রেস সিংহভাগ লোকসভা আসন জয় করে। শুধু তাই নয়, বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে 22 টির মধ্যে 17 টি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পর এই প্রথম মুর্শিদাবাদে এত বড় সাফল্য পেয়েছে ঘাসফুল শিবির। তাই এদিনের আলোচনায় কৃতিছাত্রের মতো মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্ব যে মমতার মমতাবর্ষণ থেকে বঞ্চিত হবেন না, তা এক রকম ধারণা করাই যাচ্ছিল। সূত্রের খবর, এদিন তৃণমূল নেত্রী মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি সমস্ত জেলায় গোষ্ঠীকোন্দল যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপদ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে, এই বিষয়ে জেলা নেতৃত্বদেরকে সাবধান করতে দেখা যায় নেত্রীকে। নেত্রী জানান, ঐক্যই শক্তি। তৃনমূল কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল যত কমবে, দলের শক্তি তত বাড়বে। কিন্তু গোষ্ঠী কোন্দলের রাস্তা থেকে দল যদি না সরে, তাহলে তা কমে বিপর্যয় নিশ্চিত। যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা আসে, তাহলে তা নিয়ে যেন সরাসরি তার সঙ্গেই আলোচনা করা হয় বলে জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের এই সভায় নিজেদের মধ্যে বিবাদ দূর করারও নির্দেশ দেন দলনেত্রী। তিনি এও জানান, অতিসত্বর সেরা নেতৃত্বকে জনসংযোগ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। দলীয় শক্তিকে পুনরুদ্ধার করতে জনসংযোগই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেই বিষয়ে জেলা নেতৃত্বকে নীতি নির্ধারণ করতে উপদেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বকে প্রশাসন নির্ভরশীল হওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেন। দলের পুরোনো সংগ্রামী ভাবমূর্তিকে ফিরিয়ে আনার বার্তাও ঝরে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠ থেকে। দলকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে বলে উপদেশ দেন তৃনমূল নেত্রী। পাশাপাশি তিনি জানান, চার জেলাতেই বিধায়করা সংগঠন দেখাশুনা করবে। যেখানে বিধায়করা অন্য দলে চলে গেছেন, সেখানে সংগঠনের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার চেয়ারম্যান। তবে লোকসভা ভোটের ফল যাই হোক না কেন, বিধানসভা ভোটে সেই ফল যে প্রতিফলিত হবে না, এই বিষয়ে আশাবাদী দলনেত্রী। সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সংগঠন ঠিক করো। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। 21 সালেও তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে।” কিন্তু দলনেত্রীর আলোচনায় একদিকে বাস্তবের মাটি, অন্যদিকে পরাজয়, দল ভাঙা, গোষ্ঠী কোন্দল একাধিক সমস্যায় জর্জরিত উত্তরবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে কতটা উজ্জীবিত করে মমতার এই ভোকাল টনিক! এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। আপনার মতামত জানান -