এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মেদিনীপুর > তৃনমূল নেতার খুনে পুলিশের নিয়ন্ত্রন! বিজেপি এলাকা ছাড়া হতেই জমি দখলে ঝাপাচ্ছে শাসকদল

তৃনমূল নেতার খুনে পুলিশের নিয়ন্ত্রন! বিজেপি এলাকা ছাড়া হতেই জমি দখলে ঝাপাচ্ছে শাসকদল

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বরাবর উত্তপ্ত জেলা হিসেবে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর। শুধু উত্তপ্তই নয়, দীর্ঘদিনের শাসক-বিরোধী মনোভাব অবস্থান করে এই জেলায়। একসময় যেমন পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল সিপিআইএমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মানুষ, বর্তমানে ঠিক সেরকমভাবেই রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে যথেষ্ট কঠিন হয়ে উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সংগঠনকে ধরে রাখা।

বস্তুত, 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরে মাটি হারাতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। একসময় যে তৃণমূল কংগ্রেস এলাকার প্রায় সবকটা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ নিজেদের দখলে রেখেছিল, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের সেই অপ্রতিরোধ্য ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারেনি শাসকদল।

ফলত বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদ চলে যায় পদ্মফুল শিবিরের হাতে। আর এই সময় থেকেই প্রায় স্পষ্ট হয়ে পড়ে আগত দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোগাতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর। আর সেইমত 2019 সালে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্রে বিজয়ী হয় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি।

আর এরপর থেকেই কার্যত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের পক্ষে এলাকায় রাজনীতি করা এবং সদর্পে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। নানুর থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রাম প্রায় সর্বত্রই বিজেপির উত্থানের মুখে চুপসে যেতে হয় তৃণমূল কর্মীদেরকে। আর সম্প্রতি ময়নার বাকচায় বৃদ্ধি পাওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা গেল রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে।

মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত counter-insurgency ফোর্স এবং অতিরিক্ত বিরাট সংখ্যক পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। এতে করে একদিকে যেমন রাজ্য সরকার নিজেদের প্রশাসনিক ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন, পাশাপাশি বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বলেও মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রসঙ্গত, বিশেষ এই পুলিশ বাহিনী নামানো পর থেকেই স্থানীয় এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের খুন হয়ে যাওয়া নেতা বাসুদেব মন্ডলের খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত একাধিক বিজেপি কর্মী সমর্থক এলাকা ছেড়ে পলায়ন করে বলে খবর। মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকা বর্তমানে পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে খবর।

অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের কাছে পরাস্ত হয়ে কার্যত ঘরছাড়া হতে হয়েছিল একাধিক তৃণমূল নেতা কর্মীদেরকে। এবার স্থানীয় এলাকায় পুলিশের বাড়তি ভূমিকা গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ঘর ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা পুনরায় ঘরমুখী হচ্ছে বলে খবর।

রাজনৈতিক এই পরিবর্তনকে কাজে লাগাতে রীতিমতো উদ্যোগী হয়েছে এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। আগামীদিনে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কি হবে, সেই বিষয়ে গত সোমবার দিন রাতে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বরা বিশেষ বৈঠক সম্পন্ন করে বলে খবর।

শুধু সোমবার নয়, মঙ্গলবার দিনও তৃণমূলের তরফ থেকে এলাকায় সংগঠনকে মজবুত করার জন্য বিশেষ বৈঠক করা হয়েছে। মিটিংয়ে স্থির হয়েছে, এলাকায় সব রকমের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দূরে সরিয়ে ময়না, বাকচায় নিজেদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত দলীয় নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরতে পারেননি, তাদেরকে ঘরে ফেরানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে শাসকদলের পক্ষ থেকে বলে খবর।

সেক্ষেত্রে যদি কোনোরকম রাজনৈতিক বাধা আসে, সর্বশক্তি দিয়ে সেই বাধাকে প্রতিরোধ করা হবে বলেও জানা যাচ্ছে। এদিকে এলাকায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে বিভিন্ন ধরনের ধরপাকড়ের খবর। ইতিমধ্যেই গত সোমবার দিন রাতে স্থানীয় এলাকার একজন গৃহশিক্ষক সহ 3 জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আবার 2018 সাল থেকে শুরু হওয়া তৃণমূল- বিজেপি রাজনৈতিক তরজায় 21 গ্রাম সংসদ বিশিষ্ট বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত যা ময়না, ভগবানপুর এবং সবং ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই তৃণমূল এবং বিজেপির রাজনৈতিক সংঘর্ষকে সামাল দেওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে প্রশাসন। যার অঙ্গ হিসাবে বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচটি জায়গাতে প্রশাসনের তরফ থেকে ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিআইএফ বাহিনীর দ্বারা এলাকায় প্রতিনিয়ত টহলদারি চলছে। এলাকার গোরামহাল, বরুনা, চাঁদিবেনিয়া এবং খিদিরপুর এলাকাগুলিতে রীতিমতো টহল দিচ্ছে প্রশাসনিক বাহিনী। ইতিপূর্বে রাজনৈতিক খুনের ঘটনায় তৃণমূলের অভিযোগ মত যে সমস্ত বিজেপি দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দিয়েছে, তাদের খোজেও ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে প্রশাসন বলে খবর। তাই বিজেপির কাছে বর্তমানে প্রশাসনের এই অতিরিক্ত ভূমিকার শেষ হওয়া দিন গোনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই বলেই মনে করছে একাংশ।

পুলিশের অতি সক্রিয়তা শেষ হলে এলাকায় নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির বলে খবর। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস এই সময়কে রাজনৈতিকভাবে সবথেকে অনুকূল বলে মনে করছে। পুলিশের ভূমিকায় এলাকায় যখন বিজেপির মধ্যে সন্ত্রস্ত আবহাওয়া তৈরি হয়েছে, সেই সময় নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ গতি আনতে এলাকার স্থানীয় বিধায়ক সংগ্রাম দোলুই, ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার, জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ এবং সমবায় স্থায়ী দপ্তরের কর্মাধক্ষ শেখ সাজাহান আলি এবং অন্যান্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বৈঠক করা হয়।

এই বৈঠকেই নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিকে পুনরুদ্ধার করে ঘরছাড়া বিজেপি নেতা কর্মীদের বিক্ষিপ্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে এলাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল বলে খবর। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ময়না ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, “বাকচার ঘরছাড়া কর্মীদের ঘরে ফেরানোর যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে।” অন্যদিকে বিপরীত মেরুতে গিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, “700 র বেশি পথ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ নিরীহ মানুষজনকে ধরে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতেই পুলিশ বিজেপি কর্মীদের টার্গেট করেছে। কিন্তু শাসক দল এবং পুলিশ এই কাজে সফল হবে না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির অনুপস্থিতিতে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালীর চেষ্টা তৃণমূল কংগ্রেস করলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন যদি তারা জোগাড় করতে না পারে, তাহলে আগামীদিনের তাদের এই রাজনৈতিক উত্থান শুধুমাত্র সামরিক হয়েই থেকে যাবে। তাই এলাকায় শাসন ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি মানুষের মনজ্ঞ কাজকর্ম করার প্রয়োজন আছে রাজ্যের শাসকদলের বলে মত বিশ্লেষকদের একাংশের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!