এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > বর্ধমান > তৃনমূল বিধায়ক গ্রামে দলীয় কর্মীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের সময় পড়ল বোমা! তীব্র চাঞ্চল্য

তৃনমূল বিধায়ক গ্রামে দলীয় কর্মীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের সময় পড়ল বোমা! তীব্র চাঞ্চল্য

“দিদিকে বলো” কর্মসূচি ঘিরে তৃণমূলের মধ্যে যখন জোর সাজো সাজো রব, তখন বিধায়কের কর্মীর বাড়িতে রাত্রি যাপনের সময় তাজা বোমা পড়ে। যাতে উত্তেজনার পারদ চরম মাত্রায় বেড়ে গেল ভাতারে‌। জানা যাচ্ছে, ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মন্ডল যখন সমগ্র দিন নাসিগ্রামে দিদিকে বলো কর্মসূচি পালন করে রাত্রে দলীয় কর্মীর বাড়িতে নিশিযাপন করতে চান, তার জন্য যখন বিছানাপত্র তৈরি হয়ে গেছে, ঠিক সেই সময় সেই দলীয় কর্মীর বাড়ির সামনে তাজা বোমা পড়ে চরম চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে।

বিধায়ক অভিযোগ করেন, বিজেপি এই ধরনের সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু একেবারে কানের কাছে বোমা পরলেও এলাকা ছেড়ে চলে যাননি বিধায়ক। বরঞ্চ আরও বেশী কর্মচঞ্চলতা নিয়ে এলাকায় কর্মসূচি পালন করেন তিনি। যে বাড়ির সামনে বোমা ফাটে, সেখানেই নিশিযাপন করেন। নিরাপত্তার কোনো পরোয়া না করে সকালবেলা এলাকায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বাড়িতে ফিরে আসেন সুভাষবাবু।

কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস দলের এই মেগা প্রচার ও জনসংযোগ যাত্রায় দিদিকে বলো কর্মসূচিকে কেন বিরোধীরা টার্গেট করছে, তা নিয়ে প্রবল চাঞ্চল্য দেখা যায় এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, ঘটনাটি কি হয়েছে আমি তার খোঁজ নিয়ে দেখছি। বুধবার সকাল থেকেই ভাতারের নাসিক গ্রামে এলাকার বিধায়ক সুভাষ মন্ডল এই কর্মসূচি শুরু করেন।

পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সমস্যার কথা শোনেন। এলাকার মানুষের অভাব অভিযোগ শোনার পাশাপাশি তাদেরকে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। স্থানীয় বিধায়ককে কাছে পেয়ে নিজেদের দাবির কথা তাকে জানান এলাকাবাসী। বিধায়ক সেই দাবিদাওয়া ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। উল্লেখ্য ওই এলাকায় একটি রাস্তার কাজ চলছে। প্রথম দফায় কাজ হলেও দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু হয়নি। সেই রাস্তার কাজ সমাপ্ত করার দাবি তার কাছে রাখা হয়।

পাশাপাশি এলাকার বৃদ্ধ লোকেদের বার্ধক্য ভাতা, বিধবাদের বিধবা ভাতা অনেকে পাচ্ছেন, অনেকে পাচ্ছে না বলেও বিধায়কের কাছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না পাওয়া থেকে শুরু করে ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দপ্তরের নামে অভিযোগ বিধায়কের কাছে জমা পড়ে। জনগণের প্রত্যেকটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন সুভাষ মন্ডল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সুভাষবাবু ভূমি এবং ভূমি সংস্কার বিষয়ক জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামের থেকেই বিডিওকে ফোন করেন। দলীয় কর্মসূচি মোতাবেক তারপর তিনি দলীয় কর্মীর বাড়িতে যান রাত্রিবাসের জন্য। রাত এগারোটা পর্যন্ত ওই বাড়িতে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বারোটা নাগাদ তিনি যখন শুতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় বিপর্যয় ঘটে অভিযোগ। বিধায়কের থাকার জন্য যে দলীয় কর্মীর বাড়িতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার সামনে বোমা ছুড়ে বসে একদল দুষ্কৃতী। বিকট শব্দে সকলে হকচকিয়ে যান।

এই বিষয়ে রাতেই পুলিশকে অবগত করান বিধায়ক সুভাষ মন্ডল। স্বাভাবিকভাবেই যখন কর্মীদের মধ্যে সাময়িক ভীতি সঞ্চার হয়েছিল, তখন সকলকে আশ্বস্ত করেন বিধায়ক নিজেই। সেই কর্মীর বাড়িতেই রাত কাটান। পরেরদিন আটটা নাগাদ তিনি দলীয় পতাকা উত্তোলন করে এলাকা পরিত্যাগ করেন। প্রসঙ্গত, বড়বেলুন 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই এলাকায় পঞ্চায়েতে দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি কর্মীরা গতকালকেই বিক্ষোভ দেখায়। যার কারণে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছিল চরমে। কিন্তু রাত্রিবেলা বিধায়কের ঘর লক্ষ করে বোমা ফাটলে সারাদিনের উত্তেজনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। খবর পাওয়া মাত্র বিশাল পুলিশ বাহিনী রাত্রে গ্রামে পৌঁছে যায়।

জানা যাচ্ছে, পুলিশ নিজের মতো করে তদন্ত শুরু করেছে। এই ব্যাপারে নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মন্ডল বলেন, “বুধবার সারাদিন জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করেছি। খুবই ভালভাবে সেই কর্মসূচি পালন হয়েছে। আমি যে বাড়িতে রাত্রিযাপন করছিলাম, রাত বারোটা নাগাদ আচমকা সেই বাড়ির সামনে একটা বোমা পড়ে। আমরা সবাই শব্দ পেয়েছি। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছিলাম। রাতেই পুলিশ এসে তদন্ত করে গিয়েছে।”

তিনি বলেন, “বিজেপির লোকজন চক্রান্ত করে আমাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য চকলেট বোমা ফাটিয়েছে। তবে আমরা রাত্রিযাপন সেরে সকালে পতাকা উত্তোলন করেই বাড়ি ফিরেছি।” অন্যদিকে পাল্টা বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্দিপ নন্দী বলেন, “গোটা রাজ্যের সঙ্গে ভাতারের আমাদের শক্তি বেড়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দলের লোকেরা বিজেপিতে যোগদান করছেন। আমাদের সেই শক্তিকে রাশ করতেই এবং দলীয় কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এইভাবে বিজেপিকে দমানো যাবে না। আমরা দলীয় কর্মীদের পাশে রয়েছি এবং আগামীতেও থাকব। ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নন।”

তবে নিজেদের কর্মসূচি দিদিকে বলো যখন সদর্পে পালন করছে তৃণমূল কংগ্রেস, তখন ওর জন্য রাজনীতি দেখিয়ে এই ধরনের চকলেট বোমা ফাটিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে যে পড়েছে বিরোধী শিবির, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল কংগ্রেস গত 2011 সালে ক্ষমতায় আসার পরে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু 11 থেকে 16 এবং পরবর্তীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য জুটলেও সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে 42 এ 42 আসন জেতার টার্গেট রাখা তৃণমূল কংগ্রেস তার নিজের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। 42 এর মধ্যে মোটে 22 টি আসন লাভ করে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তৃণমূলকে।

যেখানে 2 টি আসন থেকে এক লাফে 18 টি আসনে জয়যুক্ত হয়ে যায় ভারতীয় জনতা পার্টি। আর তারপরেই নিজেদের সংগঠনের জনপ্রিয়তা কমার কারণ অন্বেষণ করতে প্রশান্ত কিশোরকে। দলের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত দিদিকে বলো কর্মসূচি বর্তমানে তৃণমূলের জনসংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কর্মসূচিকে ঘিরে যদি বিরোধীরা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে, তাতে আখেরে লাভ তৃণমূল কংগ্রেসের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!