এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > জনসংযোগ প্রচারে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তৃণমূলের অভিনেতা-বিধায়ক

জনসংযোগ প্রচারে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তৃণমূলের অভিনেতা-বিধায়ক

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের খারাপ ফলাফল হওয়ার পেছনে জনসংযোগেই যে ব্যাপক ত্রুটি রয়েছে, তা আঁচ করতে পেরেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের সাধারণ মানুষেরা কাছে আরও বেশি বেশি করে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

সম্প্রতি “দিদিকে বলো” কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে দলের সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু দলের বিধায়ক থেকে মন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেলেও তাদের কাছে সাধারন মানুষের অভাব অভিযোগ আরও বেশি করে পৌঁছতে দেখা যাচ্ছে।

ভোটের সময় ভোট চাইতে এসে মানুষের পাশে থাকব বলে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় বসে গেলে তাদের আর সেইভাবে দেখা যায় না বলে বিভিন্ন জায়গায় মানুষেরা অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের বিধায়কদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভাব, অভিযোগ শোনার নির্দেশ দিলেও সাধারণ মানুষ তাদের অভাব, অভিযোগ সেই তৃণমূল বিধায়কদের কাছে পৌঁছে দিতেই বিধায়করা রীতিমত ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছেন।

সূত্রের খবর, রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বারাসাত পৌরসভার 32 নম্বর ওয়ার্ডের সংলগ্ন অঞ্চলে বারাসাত শহর তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে “দিদিকে বলো” কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। আর এই কর্মসূচিতেই যোগ দিয়েছিলেন বারাসাতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। এদিকে একদিকে বিধায়ক, অন্যদিকে বিশিষ্ট অভিনেতাকে দেখতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

জানা যায়, এদিন প্রথমেই চিরঞ্জিত বাবু আপনপল্লীতে যান। সেখানে পাড়ার মহিলা থেকে বৃদ্ধরা সবাই তাকে দেখে এলাকায় জল জমার ফলে তাদের দুর্ভোগ হচ্ছে বলে জানান। আর এই ঘটনাটি শুনে কোনোরকমে ভিড় এড়িয়ে সেখান থেকে চলে যান চিরঞ্জিতবাবু। এরপর সেখান থেকে রামকৃষ্ণ পল্লীতে গিয়ে দলীয় কর্মী, পেশায় রাজমিস্ত্রি গোকুল সরকারের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।

এদিকে খাওয়া-দাওয়া করে দলীয় কর্মীর বাড়ি থেকে বের হতেই বিধায়ককে দেখে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা তার কাছে ছুটে এসে বলেন, “একবার চলুন, দেখুন কিভাবে জল জমে আছে।” অপর আরেকজন বলেন, “কত বছর ধরে কাউন্সিলরকে ড্রেনগুলো ঠিক করার কথা বলছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। আপনি একবার দেখে আসুন।” কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সাধারন মানুষ এত আকুতি-মিনতি করলেও, তাদের কোনো কথা না শুনে, গুরুত্ব না দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।

বাসিন্দাদের অভিযোগ শোনার পরই চিরঞ্জিতবাবু বলেন, “এখন এটা শোনার সময় নয়। ভোটের আগে আসলে সব শুনব।” কিন্তু ভোট আসে। ভোট যায়। সাধারণ মানুষদের অভাব অভিযোগ শোনার মত নেতা নেত্রীদের অভাব বরাবরই থেকে যায়। এই ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হল। ভোটের আগে তিনি শুনবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ প্রকল্পে অংশ নিয়ে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগকে রীতিমত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। অনেকে বলছেন, আসলে জনপ্রতিনিধি হলেও নিজের অভিনয় করে গেলেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।

আর তাইতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের অভাব, অভিযোগ শোনার জন্য দলের বিধায়কদের দুয়ারে দুয়ারে পাঠালেও সেই মানুষের অভিযোগ না শুনে “এখন এটা বলার সময় নয়” বলে সাধারণ মানুষকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু এমনটা চলতে থাকলে তৃণমূল নেত্রীর জনসংযোগ প্রকল্প ঠিক কতটা সফলতা পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। আর বিধায়কের এহেন ব্যবহারে কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের বক্তব্য, “দিদি বলেছেন অভাব অভিযোগ জানাতে। ভেবেছিলাম বিধায়ক সেগুলো শুনতেই আসছেন। কিন্তু নিয়ম রক্ষার জন্য উনি ঘুরে চলে গেলেন। এমন লোক দেখানোর কর্মসূচির মানে কি! আমরা তাহলে আমাদের অভাব, অভিযোগের কথা কাকে জানাব!” এদিকে বিধায়কের সাধারণ মানুষের তরফ থেকে আসা অভিযোগের কথা না শুনে চলে যাওয়ার ঘটনাকে কিছুটা হলেও ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে উদ্যোগী তৃণমূল।

এদিন এই প্রসঙ্গে বারাসাতের উপপ্রধান তথা বারাসাত শহর তৃণমূলের সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকাগুলিতে আগে ধানি জমি ছিল। পরে বসতি হয়েছে। তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি সমাধান চলছে। মানুষ কিছু বলতে চেয়েছিলেন। রবিবার থেকে শহর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় গিয়ে অভাব অভিযোগ শুনে যতটা সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করবেন।”

কিন্তু বিধায়ক এলাকায় আসলেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাদের অভাব, অভিযোগের কথা শুনলে কি তার খুব ক্ষতি হত! কেন তিনি এইভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো তৃণমূলের জনসংযোগ প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে তার কাছে অভাব অভিযোগ জানালেও তা এড়িয়ে চলে গেলেন! তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!