এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া > ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেলেন না সাংসদ

ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেলেন না সাংসদ

বিশ্ব আদিবাসী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে আদিবাসী উৎসব। আর পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মূল প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঝাড়গ্রামে এবারে পালিত হয় রাজ্যস্তরের সরকারি আদিবাসী উদযাপন উৎসব। কিন্তু এই উৎসবের মধ্যে সব কিছুর মাঝেও চোখে পড়ল রাজনৈতিক অসৌজন্যতা।

আদিবাসী অনুষ্ঠানে ডাকই পেলেন না সাংসদ। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান মঞ্চে হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী থেকে জেলা তৃণমূল সভাপতি বীরবাহা সোরেন সহ শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা মিলল না সদ্যনির্বাচিত বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের।

অথচ এদিন বিকেলে যখন ঝাড়গাম স্টেডিয়ামে আদিবাসী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান চলছে, ওই সময় শহরের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে উপস্থিত হতে দেখা যায় সাংসদকে।বস্তুত, এই মঞ্চে এদিন বেসরকারি আদিবাসী সংগঠনের উদ্যোগে একটি বই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

এদিনের এই বেসরকারি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঝাড়গ্রাম রবীন্দ্রপার্কে জাহের থানে গাছের চারা রোপন করা হয়। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ঝাড়গ্রামের সাংসদ জানান, সংবাদপত্রে প্রকাশিত রাজ্য সরকার দ্বারা আয়োজিত বিশ্ব আদিবাসী উদযাপন উৎসবের কথা জেনেছি।আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাজ্য সরকারের তরফে। তবে আমি জনগণের প্রতিনিধি। তাই আমার কর্তব্য অনুষ্ঠানে যাওয়া। আমি যেতেই পারি।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু মুখে বললেও অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা মেলেনি সাংসদ মহাশয়ের। এই বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এক সরকারি আধিকারিককে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কারা নিমন্ত্রিত থাকবেন, না থাকবেন, সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং নামের তালিকা আসে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।

এদিনের বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন উৎসবের যে আমন্ত্রণপত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে গৌরবময় উপস্থিতিতে হিসাবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস, জেলার বিভিন্ন বিধায়ক, জেলা তৃণমূল সভাপতি বীরবাহা সোরেন, এমনকি তার স্বামী আদিবাসী নেতা রবি টুডুর নামও ছিল আমন্ত্রিতদের তালিকায়।

কিন্তু উক্ত তালিকায়’ চোখে পড়ে সবরকম মন্তব্য থেকে এড়িয়ে যান ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি। তবে কুনারবাবু বলেন, “ভেবেছিলাম সরকারি অনুষ্ঠানে যাব। কিন্তু বইমেলায় আটকে যাওয়ার কারণে আর যাওয়া হয়ে উঠল না।” তবে সাংসদ অনিমন্ত্রিত থাকার বিষয় বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় স্থানীয় আদিবাসী মহলে।

এই বিষয়ে দিল্লির সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রবীণ সাঁওতালি সাহিত্যিক সারি ধরম হাসদা বলেন, “সাংসদ মানুষের জনপ্রতিনিধি। সরকার অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো একটা শিষ্টাচার। এক্ষেত্রে রাজনীতি করা উচিত নয়।” সাঁওতালি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে গতবার ঝাড়গ্রাম আদিবাসী দিবসে সরকারি অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায় সেই আদিবাসী চলচ্চিত্র শিল্পীকেও।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ডের পক্ষ থেকে প্রার্থীও ছিলেন বীরবাহা হাঁসদা। এদিন তিনি বলেন, তিনি নিজেও নিমন্তন্ন পাননি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে। কিন্তু সাংসদকে না ডাকাটা চূড়ান্ত অসৌজন্যের পরিচয় সরকারি অনুষ্ঠানে এই ধরনের রাজনীতি কাম্য নয়।

কিন্তু আদিবাসী দিবস উদযাপনের রাজ্য স্তরের এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় আদিবাসী সাংসদকে না দেখে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে শাসক দলকে। কারণ সাংসদ যে দল থেকেই নির্বাচিত হোক না কেন তাকে নির্বাচিত করেছে মানুষ, এই সত্য এড়িয়ে যাওয়াটা রাজনৈতিক ভাবে চিহ্নিত করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

গতকালের এই অনুষ্ঠানে পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিকেল 4টে নাগাদ উপস্থিত হন। কিন্তু উপস্থিত হতে দেখা যায়নি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার কথা ঝাড়গ্রাম বিধানসভার বিধায়ক সুকুমার হাসদাও।

অনুষ্ঠানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বীরবাহা সোরেন উপস্থিত থাকলেও তার স্বামী রবিন টুডু উপস্থিত ছিলেন না। এদিন পরিবহনমন্ত্রীর পাশে বসতে দেখা যায় তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে। এদিন উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বীরবাহা সোরেনকে সমাজসেবী বলে পরিচয় দেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতি উপস্থিত থাকলেও সাংসদ উপস্থিত না থাকাটা যথেষ্ট অস্বস্তির বলে মনে করছেন অনেকে।

যদিও সূত্রের খবর, অনাহুতর মতই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ কুনারবাবু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তা হয়ে উঠল না। এই ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের বাঁধাধরা আবাহন বিসর্জনের ছক সাধারণ জনমানসে কি প্রভাব ফেলে, তা নিয়েই জোর আলোচনা রাজ্য জুড়ে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!