এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > “বোকা বানিয়ে” তৃণমূলের বিলাসবহুল পার্টি অফিস! ক্ষুব্ধ আদিবাসী সমাজ ঝুলিয়ে দিল তালা

“বোকা বানিয়ে” তৃণমূলের বিলাসবহুল পার্টি অফিস! ক্ষুব্ধ আদিবাসী সমাজ ঝুলিয়ে দিল তালা

মানুষের মাথায় কোপ মেরে ভোটে জেতা নেতা-মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে সেই মানুষের সমস্ত সম্পত্তি হরণ করার চেষ্টা করেন বলে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ উঠতে দেখা যেত।এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তার “দুই বিঘা জমি” কবিতায় সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সমাজের নিচু স্তরের মানুষরা কিভাবে শোষণের শিকার হতেন, তার কথা উল্লেখ করে দিয়েছিলেন।

যেখানে একটি লাইনে তিনি লিখেছিলেন, “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি..” আর বহুদিন আগে কবিগুরুর লেখা এই কবিতা যেন আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বর্তমানে সমাজের শীর্ষস্তর বলতে আমরা আর কোন রাজারাজরাকে বুঝি না, কিন্তু রাজনীতিবিদদের বুঝি। আর এবার সেই রাজনীতিবিদের দ্বারাই প্রতারিত হলেন সাধারন মানুষ।

জানা যায়, জমিতে পাম্প হাউস, পরিবারের একজনের চাকরি, আর সমপরিমাণ আবাদি জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক আদিবাসী পরিবারের হাতে থাকা প্রায় 8 কাঠা খাসজমি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।চন্দ্রকোনা শ্রীনগর চৌকানের মূল সড়কের ধারে এই 8 কাঠা সরকারি খাস জমিতে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজয় সোরেনের পরিবার চাষাবাদ করত।

রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা ভেবেছিলেন, হয়ত বা সত্যিই নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবেন। আর তাই তো নিজেদের জমি দিয়ে দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি পালন তো হয়ইনি, উল্টে তাদের জমিতে তৃণমূলের দুই তলা বিশিষ্ট কার্যালয় গড়ে উঠেছে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেই আদিবাসী সমাজ।

সূত্রের খবর, গত শনিবার রাতে আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের নেতারা তৃণমূলের ওই কার্যালয়ে গিয়ে তাদের সংগঠনের হলুদ-সবুজ পতাকা লাগিয়ে সেই কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিন এই প্রসঙ্গে সেই আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন মুর্মু বলেন, “আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমিতে পার্টি অফিস হবে, আর পরিবারটি বঞ্চিত হবে, এটা মানা যায় না। আমরা বিষয়টি জেনে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে নিষ্পত্তি করার আর্জি জানাই। কিন্তু কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”

অন্যদিকে এই ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভের সুর শোনা গেছে সেই জমির মালিক বিজয় সোরেনের গলাতেও। এদিন তিনি বলেন, “এই জমি চাষ করেই আমার সংসার চলত। এখন অন্যের জমি চাষ করি।” কিন্তু কেন এইভাবে একজন সাধারন মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তার জমি নিজেদের হস্তগত করে নিয়ে সেখানে পার্টি অফিস বানিয়ে ফেলল তৃণমূল!

এদিন এই প্রসঙ্গে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সদস্য শঙ্কর চৌধুরী বলেন, “বিজয় সোরেনদের দুকাঠা জমি দেওয়া হয়েছে। বাড়িও দেওয়া হবে। আর চাকরির বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হবে।” অন্যদিকে এই ঘটনায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে উদ্যোগী হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি।

এদিন তিনি বলেন, “একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। আলোচনা করে দলের স্থানীয় নেতাদের সমস্যা মিটিয়ে নিতে বলা হয়েছে।” তবে যে যাই বলুন না কেন, তৃণমূল নেতারা এখন বড় বড় সাফাই গাইলেও কেন ভুল করার আগেই তাদের এই ব্যাপারে হুশ ছিল না! তা নিয়ে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!