আদালতের রায়ে ‘যুবরাজ-গড়ে’ ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ জেতা ৯৩% আসনের হিসেব বদলাবে? বিশেষ খবর রাজ্য May 8, 2018 কলকাতার অদূরে এক সাংসদ এলাকা ডায়মন্ড-হারবার, যেখানকার সাংসদ বর্তমানে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অঘোষিত দুনম্বর নেতা তথা ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা এক নামি সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তৃণমূলের তরফে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার (যে জেলার অন্তর্গত এই ডায়মন্ড-হারবার) ভোট ম্যানেজার তথা রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীর মতে, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ডায়মন্ড হারবারে আমাদের সংগঠনটা এতই শক্তিশালী হয়েছে, যে বিরোধীরা মাথাই তুলতে পারেন না। সংগঠন এবং উন্নয়ন, এর সামনে দাঁড়াতে পারছেন না বিরোধীরা। কেউ তো আর জেনেশুনে হারার জন্য ভোটে দাঁড়ান না। তাই বিরোধীরা প্রার্থী দেননি। আর বিরোধীরা এই প্রার্থী না দিতে পারায় যুবরাজের-গড়ে পঞ্চায়েতের চিত্রটা ঠিক কেমন দাঁড়িয়েছে একনজরে দেখে নেওয়া যাক। জেলা পরিষদ – মোটা আসন – ২০ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় – ২০ পঞ্চায়েত সমিতি – মোট আসন – ২০৮ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় – ১৯৭ গ্রাম পঞ্চায়েত – মোট আসন – ১,০৮১ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় – ১,০০৬ মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা – ৭২ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় – ৬৮ অর্থাৎ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে ডায়মন্ড-হারবার লোকসভা কেন্দ্রে মোট ১,৩০৯ টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেস জিতে গেছে ১,২২৩ টি আসন, শতাংশের বিচারে যা ৯৩.৪৩%, ফলে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। ওই সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে, শুভাশিসবাবু যে বলেছেন বিরোধী নেই – তার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী তথ্য সহকারে দেখিয়ে দিয়েছেন গত ২০১৪ লোকসভা বা ২০১৬ বিধানসভাতে প্রাপ্ত সম্মিলিত বিরোধীদের ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে বেশি। যদিও শুভাশিসবাবু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, সম্মিলিত বিরোধী ভোট বলে আবার কিছু হয় নাকি? এর পরিপ্রেক্ষিতে শমীকবাবুর অভিযোগ, বিরোধী দলের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দওয়া আটকাতে প্রার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে! দেখেছেন কখনও এমন দৃশ্য! আমাদের সাড়ে তিনশো থেকে চারশো প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দিয়েছে। সাত থেকে দশ জনকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে হইচই করা যায়। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারে তো খোদ পিসি-ভাইপোর ব্যাপার। কাউকে হইচই করতে দেওয়াই হয়নি। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, মনোনয়ন জমা নেওয়া যখন চলছিল, তখন আলিপুরের প্রশাসনিক ভবনের অবস্থাটা কেমন ছিল, সে আর কারও জানতে বাকি নেই। প্রশাসনিক কর্তাদের চেম্বার দুষ্কৃতীদের দখলে চলে গিয়েছিল। সাংবাদিকদের মারধর করা হয়েছিল, বিবস্ত্র করে দেওয়া হয়েছিল, মহিলা সাংবাদিককে অপহরণ করা হয়েছিল। আর তাই ওই সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, শাসকদল যতই দাবি করুক বিরোধীরা হারার ভয়ে প্রার্থী দেয় নি, বিরোধীদের দাবি কিন্তু অন্য। আর আজ কলকাতা হাইকোর্ট ই-মনোনয়ন নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল বিজেপির তরফেও তাদের তরফে জমা পড়া ই-মনোনয়নের মান্যতা দেওয়ার জেনে মামলা হতে চলেছে। ফলে সবমিলিয়ে, যুবরাজের-গড়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ জেতা ৯৩% এর বেশি আসনের চিত্রটা বদলায় কিনা সেদিকেই এখন তাকিয়ে আপামর জনসাধারণ। যদিও এই খবরের সত্যতা বা সূত্র সম্পর্কে ওই সংবাদপত্রে কিছু লেখা নেই, প্রিয়বন্ধু বাংলার তরফেও এই খবরের সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয় নি। এই প্রবন্ধ সম্পূর্ণরূপে ওই সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে করা, কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বা কোনো ব্যক্তি বা দলের সম্মানহানির উদ্দেশ্যে রচিত নয়। আপনার মতামত জানান -