প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক তরজা, সংঘর্ষ, মারামারি, খুনোখুনি ক্রমশ বাড়ছে। হাতাহাতি-মারামারি, হত্যা, বোমাবাজি সম্প্রতি নিত্যদিনের বিষয় হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জর বিজেপি নেতা রবীন্দ্রনাথ মন্ডলকে খুনের অভিযোগ উঠে এলো তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হল বিজেপির জনৈক বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল উত্তেজনা ছড়াল হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টার থানার মঙ্গলচণ্ডী গ্রামে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রসঙ্গত কেন্দ্রের নয়া কৃষি বিলের পক্ষে ও রাজ্য সরকারের আম্ফান দুর্নীতির বিপক্ষে একটি পথসভা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। গত ১২ ই অক্টোবর বিজেপির প্রস্তাবিত এই পথসভা করার কথা ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ এলাকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি না মেলায় পথসভাটি বাতিল করে দেয়া হয়। তবে, এই সভার আয়োজন উপলক্ষে সেদিন হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ এলাকা সেজে উঠেছিল বিজেপির পতাকায়। এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ২৩৪ নম্বর বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল।

পরদিন ১৩ ই অক্টোবর তৃণমূলের বেশকিছু সদস্য বিজেপির পতাকা খুলে দিতে শুরু করে বলে বিজেপি অভিযোগ করেছে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের বেশ কিছু পতাকা ছিঁড়ে দেয় তৃণমূলের কিছু সদস্য। এরপর বিজেপি সদস্যরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় তৃণমূল সদস্যরা। এমনই অভিযোগ বিজেপির। এসময় তৃণমূলের বেশকিছু সদস্য লোহার রড, বাঁশ, ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রবল আক্রমণ চালায় বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল সহ বিজেপির অন্যান্য সদস্যদের উপর। তাদের অতর্কিত হামলায় আহত হন বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল সহ বিজেপির ৬ জন সদস্য।

যাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের অবস্থা ছিল গুরুতর। বাকিদের বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, অবস্থা গুরুতর দেখেই রবীন্দ্রনাথ বাবুকে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। সে কারণে তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। এখানে কিছুদিন ভর্তি থাকার পর গতকাল সোমবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই এলাকায় শোরগোল ছড়িয়ে পড়ে। প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিজেপি সদস্যরা। হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টার থানার মঙ্গলচণ্ডী গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনা স্থলে পৌঁছায় পুলিশ। হেমনগর কোস্টার থানার পুলিসের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের হত্যার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

মৃত বিজেপি নেতা রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের পরিবার ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এই ঘটনার জন্য স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। তবে, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি ওঠা এই অভিযোগকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।

প্রসঙ্গত রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি, পুলিশের নিরপেক্ষতা প্রভৃতি নিয়ে অনেক অভিযোগ তুলেছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, অসংখ্য বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ গত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ১২০ জনেরও বেশি বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আবার পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে তাদের আইনি হেনস্তা করছে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের যুব কর্মীদেরই বেশি করে হত্যা করার চেষ্টা চলছে। এভাবেই বিজেপি নেতা তথা বুথ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের হত্যার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সরব রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।