তৃণমূল, পিকে, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল, দল এখন তিনভাগ – কিভাবে সামাল দেবেন নেত্রী? ২০২১ এর আগে চরছে পারদ! তৃণমূল রাজনীতি রাজ্য November 19, 2020 প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – হাতে গোনা কয়েকটা মাস। তারপরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুধু প্রশাসনের প্রধান নন, তিনি তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসেরও সুপ্রিমো। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা দখল করতে গেলে তার দলকে সাফল্য পেতে হবে। আর এখানেই তৈরি হয়েছে প্রধান সমস্যা বিজেপির মোকাবিলা করতে গিয়ে এখন তৃণমূল কংগ্রেস কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্যে রয়েছে তৃণমূল, প্রশান্ত কিশোর এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। কিন্তু কেন এই তিনভাগে বিভক্ত হল তৃণমূল কংগ্রেস? একাংশের মতে, তৃণমূলের সবথেকে বড় সমস্যার কারণ তাদের গোষ্ঠী কোন্দল। যেদিন থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে, প্রায় সেদিন থেকেই বিভিন্ন জায়গায় তাদের গোষ্ঠী কোন্দল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বারবার দলের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। তাই সেই গোষ্ঠী কোন্দলকে মোকাবিলা করা যখন সম্ভব হচ্ছে না তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে, তখন আগামী দিনে বিজেপির মত দিনকে দিন শক্তি বাড়ায় একটি রাজনৈতিক দলের মোকাবিলা কীভাবে করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। আর এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর নিয়ে একাংশ বলছেন যে, তৃণমূল এখন তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে তৃণমূলের এই বিভক্ত হওয়ার রূপকে কার্যত দমিয়ে দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই কাজ করতে তৃণমূল নেত্রী কতটা সক্ষম হবেন, এখন সেটাই প্রধান প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এখানে তৃণমূল কংগ্রেস বলতে বোঝানো হয়েছে যারা তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। অর্থাৎ যারা দল বলতে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছেন। এক্ষেত্রে এই তৃণমূল কংগ্রেস নামক ভাগে প্রধান সমস্যা এখানকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে মানা হলেও, যেভাবে দিনকে দিন বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠী কোন্দল বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শাসকদলে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভাগ হিসেবে দেখানো হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরকে। গত লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা করা হয় প্রশান্ত কিশোরকে। আর প্রশান্ত কিশোর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় কিভাবে সংগঠন সাজাতে হবে, তার ব্যাপারে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিতে শুরু করেন। আর সেই মত করেই বিভিন্ন জেলায় সংগঠন সাজানো হয়। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত সিদ্ধান্ত নিলেও, গত লোকসভা নির্বাচনের পরবর্তী সময়কাল থেকে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পুরোভাগে আড়াল থেকে কাজ করে চলেছেন এই প্রশান্ত কিশোর বলে দাবি একাংশের। যার ফলে গোটা রাজ্যজুড়ে প্রশান্ত কিশোর নিজের মত করে টিম তৈরি করে নিচ্ছেন বলে তৃণমূলের একাংশ অভিযোগ করতে শুরু করেছে। আর সবথেকে বেশি শাসকদলের কাছে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা, তারা হল বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। মূলত প্রশান্ত কিশোর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় সংগঠনে রদবদল করেছেন। যার ফলে পুরোনো নেতাকর্মীরা অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর যারা প্রশান্ত কিশোরের এই টিমের সুপারিশের কারণে বিভিন্ন জায়গায় পদ থেকে সরে গিয়েছেন, এবার তারাই বিক্ষুব্ধদের তালিকায় নাম লেখাতে শুরু করেছেন। অর্থাৎ দলের নানা সিদ্ধান্ত এবং প্রশান্ত কিশোরের দলে এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলতে দেখা যাচ্ছে। যা রীতিমত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাবাতে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবিরকে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ইতিমধ্যেই কোচবিহারের মিহির গোস্বামী থেকে শুরু করে ব্যারাকপুরের শীলভদ্র দত্তের মত বিধায়ক কর্পোরেট সংস্থাকে দিয়ে কখনও সাফল্য পাওয়া যায় না বলে না করে সেই প্রশান্ত কিশোরের টিমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। স্বভাবতই বিজেপিকে আটকানোর জন্য গত লোকসভা নির্বাচন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশান্ত কিশোরের উপর ভরসা করলেও, এখন সেই প্রশান্ত কিশোর এবং তার টিম যে কার্যত গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছ তৃণমূলের কাছে, তা নিশ্চিত বিশেষজ্ঞদের কাছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এই গোষ্ঠী কোন্দল এবং দলের অসন্তোষকে সামাল দিতে না পারে, তাহলে তা তাদের কাছে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা বিগত বাম আমলে সিপিএমের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই যথেষ্ট ছিলেন। তার আন্দোলন, লড়াই তৃণমূল কর্মীদের কাছে ছিল বাড়তি অনুপ্রেরণা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থানের পর যেভাবে বাইরে থেকে প্রশান্ত কিশোরকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। অনেকেই আড়ালে-আবডালে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। সেক্ষেত্রে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বা চাপে ফেলতে কেন তাকে প্রশান্ত কিশোরের সাহায্য নিতে হচ্ছে! স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন যখন বর্তমানে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন সকলেই চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার সমস্ত সিদ্ধান্ত নিন। প্রশান্ত কিশোরকে সরিয়ে রেখে দলনেত্রী যদি দলের নেতা কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানায়, তাহলে সকলেই একজোট হয়ে পথে নামবে। তবে যত দিন যাচ্ছে, ততই এগিয়ে এসেছে বিধানসভা নির্বাচন। ক্রমশ প্রভাব বাড়াচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশ বলছেন, দ্রুত এই ব্যাপারে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে হয়, তাহলে পুরনো থেকে নতুন সকলকে একসাথে নিয়ে সমন্বয় সাধন করে পথ চলার আহ্বান জানাতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মান ভাঙানোর জন্য কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। আপনার মতামত জানান -