এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম > বিরোধীরা তো বটেই এবার করোনা মোকাবিলায় “ব্যর্থতা” নিয়ে তৃণমূলকে চেপে ধরছেন দলীয় নেতারাই!

বিরোধীরা তো বটেই এবার করোনা মোকাবিলায় “ব্যর্থতা” নিয়ে তৃণমূলকে চেপে ধরছেন দলীয় নেতারাই!


করোনা ভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে প্রথম থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, বিরোধীদের পক্ষ থেকে এই কটাক্ষের জবাব শাসক দল ঐক্যবদ্ধ ভাবেই দেবে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে যখন বিরোধীরা শাসক দলকে কটাক্ষ করছে, ঠিক তখনই শাসক দলের অন্দরে দেখা গেল অনৈক্যের সুর। যেখানে তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভাকে সঠিক ভাবে করোনা মোকাবিলা না করার জন্য বিধলেন তৃণমূল নেতারাই।

যার ফলে এখন শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদহ জেলায়। বস্তুত, পরিযায়ী শ্রমিকরা ফেরার পর থেকেই এই মালদহ জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই পৌরসভার প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নীহার রঞ্জন ঘোষ এবং দুলাল সরকারকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। আর এই পরিস্থিতিতে ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর কটাক্ষের মুখে পড়লেন ইংরেজবাজার পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন ঘোষ এবং বাবলা সরকার।

আর দলের হেভিওয়েট নেতার বক্তব্যে এভাবে নীহারবাবু এবং বাবলাবাবু আক্রমণের শিকার হওয়ায় জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, এদিন একটি সাংবাদিক বৈঠক করে পৌরসভার বিরুদ্ধে সরব হন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, “জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিদিন গোষ্ঠী সংক্রমনের মতো মারাত্মক পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলা করা দরকার।”

তাঁর ক্ষোভ, “একসময় সব দলের সব কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে মালদহ শহরের বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলাম। অথচ বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ সময়মত কাউন্সিলরদের ডেকে তাদের পরামর্শ নেওয়ার তোয়াক্কা করলেন না। পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে অনেক সুসংগঠিতভাবে করোনার মোকাবিলা করা যেত।” অর্থাৎ কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর কথাতেই স্পষ্ট যে, তিনি পুর কর্তৃপক্ষ বলতে গিয়ে বর্তমান প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন ঘোষ এবং বাবলা সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, এই নীহার রঞ্জন ঘোষের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। আর এবার করোনা মোকাবিলায় যখন বিরোধীরা পৌরসভার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, ঠিক তখনই তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা হয়ে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী পরোক্ষে নিহার রঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে শুধু কৃষ্ণেন্দুবাবুই নয়, এদিন পৌরসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলের আর এক কাউন্সিলর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি।

এদিন তিনি বলেন, “বিরোধী দল তো দূরের কথা, তৃণমূল কাউন্সিলরদেরকেও পরামর্শ দিতে ডাকেনি বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার চারটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিসেবা ওই কেন্দ্র থেকে আদৌ কি দেওয়া হচ্ছে! একদিকে মানুষ করোনার সঙ্গে লড়ছে, অন্যদিকে পৌরসভার এক কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার রৌপ্যজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। দায়িত্বশীল ভূমিকা বর্তমান কর্তৃপক্ষ পালন করছেন কিনা, তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন।”

এদিকে দলের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন মন্ত্রী এভাবে তাদেরকে কটাক্ষ করায় এখন কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছেন সেই নীহার রঞ্জন ঘোষ এবং বাবলা সরকার। এদিন এই প্রসঙ্গে বাবলা সরকার বলেন, “কারও কারও কাছে আঙ্গুল ফল টক। তাই ভিত্তিহীন সমালোচনা করে গায়ের ঝাল মেটাতে চাইছেন। দমকলকে দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্যানিটাইজ করার কাজ চলছে। আমি নিজে রবিবার নিজের এলাকা স্যানিটাইজ করিয়েছি। তারা নিজেরাই পৌরসভা থেকে নিজের এলাকার জন্য ত্রাণ নিয়ে গিয়েছেন। অথচ পরামর্শ দেননি। এখন অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন যে কেন বৈঠক ডাকা হল না।”

এদিকে এই ব্যাপারে কাউন্সিলর নন্দকুমার তিওয়ারির তোলা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, “নন্দু তিওয়ারিকে পৌরসভায় বৈঠকে আমন্ত্রণের চিঠি পাঠাতে গিয়ে ফিরে এসেছেন আমাদের কর্মীরা। তিনি বলেছেন, পরে নেবেন। এই মানসিকতা থাকলে হাজার বৈঠক করেও কিছু হবে না।” তবে যে যাই বলুন না কেন, রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, বিরোধীরা তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভার কাজকে বর্তমান সময়ে কটাক্ষ করবে, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

কিন্তু যেভাবে মালদহে করোনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রশাসক পদে বসা দুই তৃণমূল নেতাকে কটাক্ষ করলেন সেখানকারই প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী এবং বেশকিছু কাউন্সিলার, তাতে সমস্যা যে বাড়ছে, তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ফলে এখন বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা অপেক্ষা তৃণমূলকে আগে নিজেদের ঘর বেশি করে সামলানো উচিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এখন গোটা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তার দিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!