এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > নদীয়া-২৪ পরগনা > তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব এসে পড়ল প্রকাশ্য মঞ্চে! কাদা ছোড়াছুড়িতে অস্বস্তি দলে

তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব এসে পড়ল প্রকাশ্য মঞ্চে! কাদা ছোড়াছুড়িতে অস্বস্তি দলে

জয় এল। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমল না। দলীয় স্তরে একতা না থাকলে তার ফল যে কি ভয়ংকর হতে পারে, তা লোকসভা নির্বাচনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সম্প্রতি রাজ্যের বিধানসভা উপনির্বাচনে ঐকবদ্ধ হয়ে গোটা তৃণমূল পরিবার লড়াই করে জয় আনতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে মূল টার্গেট ছিল বিজেপি নেতারা। করিমপুর, খড়গপুর এবং কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের হারিয়ে নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করেছে ঘাসফুল শিবির।

কিন্তু জয় পেয়েও কি কোনো লাভ হল! জয়ের আনন্দে যখন সমস্ত জেলায় তৃণমূলের তরফে বিজয় উৎসব থেকে বিজেপিকে কটাক্ষ করা হচ্ছে, ঠিক তখনই উল্টো ছবি দেখা গেল নদীয়ার শান্তিপুরে। বস্তুত, এই শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের সঙ্গে শান্তিপুর পৌরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজয় দের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যেই দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব কমাতে জেলা নেতৃত্ব থেকে রাজ্য নেতৃত্বকে ময়দানে নামতে হয়েছে।

মুখে তারা দুইজনে ঐক্যবদ্ধ বললেও তলায় তলায় যে তাদের মধ্যে শত্রুতার বীজ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা তৃণমূলের বিধানসভা উপনির্বাচনের বিজয় উৎসব থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল। সূত্রের খবর, তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ের জন্য শান্তিপুরে শুক্রবার একটি দলীয় সভা ডাকা হয়েছিল। আর আশ্চর্যজনকভাবে ডাকঘর বাসস্ট্যান্ডের এই সভায় শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং তার অনুগামীদের রোষানলে ছিলেন শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে।

নিজেদের জয়ের ব্যাপারে সেলিব্রেশন তো দূরঅস্ত, উল্টে নিজেদের দলের চেয়ারম্যানকে যেভাবে কটাক্ষ করলেন বিধায়ক এবং তার অনুগামীরা, তাতে রীতিমত হতবাক গোটা রাজনৈতিক মহল। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় বিধায়কের আক্রমণাত্মক মন্তব্য রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে শান্তিপুরে। সূত্রের খবর, এদিন শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান অজয় দের নাম না করে এই সভা থেকে বক্তব্য রাখতে উঠে তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য তীব্র আক্রমন শানান।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তিনি বলেন, “আমি পূজো করছি বলে আমি বিজেপি হয়ে গেলাম‌। যাকে মারতে হবে তার নামের উপর পদ্মফুল লাগিয়ে নাও। যাতে বলতে পারে, ও বিজেপি, তাই আমি মারছি। তাহলে আগে কেন মারতেন! তখন তো আমি তৃণমূলে ছিলাম। তখন বলতেন, ও কংগ্রেস, তাই মারছি। তৃণমূল হওয়ার পর বলত কে প্রকৃত তৃণমূল, তার সার্টিফিকেট ওরা দেবেন। এখানে ব্যক্তিস্বার্থের বিষয় চলছে। আর কিছু নয়। কোনো দপ্তর থেকে সার্টিফিকেট দিতে কেউ যদি কাটমানি চায়, তাহলে কিসের জন্য এই নির্বাচন! আর কিসের জন্য আমরা ভোট দিয়ে একজন এরকম তৈরি করে দেব?”

তবে শুধু অরিন্দমবাবু নয়, এদিনের এই মঞ্চ থেকে অজয় দের নাম করে তাকে হুঁশিয়ারি দেন অরিন্দম ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের কুমারেশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের আমলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি আমাকে দাঁড়াতে বললেও আমি অজয় দেকে বিধায়কের টিকিট দেয়ার জন্য বলি। সেই সময় আব্দুল সালাম কারিকর অজয় দেকে সরিয়ে নিজে দাঁড়াবে বলে দরখাস্ত করেছিলেন। মারামারি যারা করছেন, তাদের জানা দরকার, শান্তিপুরের বুকে যত ক্রিমিনাল আছে, সব কুমারেশের হাতে তৈরি।”

একইভাবে এই সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূলের আরেক নেতা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন কোনো কাউন্সিলার আছেন, যিনি অজয় দের সঙ্গে থাকেন, অথচ টাকা নেন না! 2020 তে আপনাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে পৌরসভার মাথায় তেরঙ্গা উড়বে।” আর বিজয় উৎসবের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের পৌরসভার চেয়ারম্যানকে তৃণমূল বিধায়ক এবং তার অনুগামীদের এহেন কটাক্ষ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন তৈরি হয়েছে প্রবল চাঞ্চল্য। একাংশ বলছেন, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে একতা ফেরানোর চেষ্টা করছেন, সেখানে কিছুটা সাফল্য পেয়ে তৃণমূল নেতারা আবারো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মশগুল হলেন!

ফলে কীভাবে এই সমস্ত নেতাদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2021 এর বৈতরণী পার হবেন! তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। কেন অরিন্দমবাবু বনাম অজয়বাবুর এই দ্বন্দ্ব রুখতে পারছে না তৃণমূল কংগ্রেস! বিজয় উৎসবের বিরোধীদলকে কটাক্ষ করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের দলের চেয়ারম্যানকে দলীয় বিধায়কের এহেন আক্রমণ কি সত্যিই যুক্তিযুক্ত! এতে কি ভেতরকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে না! সাধারণ মানুষের মধ্যে কি তৃণমূলের সম্পর্কে আরও বেশি করে বীতশ্রদ্ধ ভাব জন্মাচ্ছে না?

এদিন এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শংকর সিং বলেন, “আমাদের দলে যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন, তারা সকলেই গ্রহণযোগ্য। ছোটখাটো ঘটনা ঘটে থাকতেই পারে। আগামী নির্বাচনে আমরা সকলেই সংঘবদ্ধভাবে লড়াই করব।” কিন্তু শঙ্করবাবু হয়তো বা ভুলে গেছেন, বর্তমানের ওপর নির্ভর করেই ভবিষ্যৎ তৈরি হয়। তাই দলীয় নেতৃত্ব যদি বর্তমানে এই দুই নেতাকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে বিরত না রাখতে পারে, তাহলে ভবিষ্যৎ যে তৃণমূলের পক্ষে খুব একটা সুখকর হবে না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!