প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – মঙ্গলবার দিনভর তৃণমূলের দুই শিবিরের কটাক্ষ, প্রতি কটাক্ষের জেরে উত্তাল হয়ে রইল নন্দীগ্রাম সহ সারাবাংলা। শুভেন্দু অধিকারী যে দল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন তা তিনি যেমন নিজে বোঝাচ্ছেন, ঠিক সেভাবেই তৃণমূল শিবিরের নেতারাও বুঝিয়ে দিয়েছেন গতকাল। বেশ কিছুদিন ধরে শুভেন্দ্র অধিকারীর সঙ্গে দলের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, নন্দীগ্রাম দিবসে বাগযুদ্ধের পরে সেই সংঘাত কয়েক গুণ বেড়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূল শিবিরের সঙ্গে বেড়ে চলা দূরত্ব নিয়ে একের পর এক কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। সম্প্রতি তৃণমূল শিবিরকে কটাক্ষ করে রাজ্যের বিরোধী দলের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা তৃণমূল শিবিরকে পিসি ভাইপোর দল বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। যে নন্দীগ্রাম থেকে একসময় বাংলার রাজনীতির পালাবদল শুরু হয়েছিল, সেই নন্দীগ্রামে যেভাবে তৃণমূল শিবিরের তীব্র ফাটল প্রকট হল, তা যথেষ্ট অস্বস্তির মুখে দাঁড় করালো তৃণমূল কংগ্রেসকে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম থেকেই শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি বর্তমানে মনেপ্রাণে তৃণমূলের আর নেই। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম দিবসে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে যেমন একটি সভা করা হয়েছিল, ঠিক সেরকমই তৃণমূল শিবির থেকেও আলাদা সভা করা হয়েছিল। মূলত ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নামে সভা ডাকা হলেও তা আক্ষরিক অর্থে রূপ নিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর সভা। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে চলছে তীব্র চাপানউতোর।

সকালে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে একের পর এক শাসক দলকে কটাক্ষ করে বার্তা দিয়ে গেছেন, ঠিক পাল্টা বিকালে তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যের অন্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বার্তা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দাদার অনুগামীদের ব্যানার পোস্টারে নজর কাড়ছে রাজ্যবাসীর। শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক অরাজনৈতিক সমাবেশ করে যাচ্ছেন এবং এই অরাজনৈতিক সমাবেশে যেরকম জনসমাগম হচ্ছে, তা কিন্তু তৃণমূল শিবিরের কপালে ভাঁজ ফেলছে বলেই বিশ্বাস অনেকের।

অন্যদিকে তৃণমূলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের বামপন্থী দলনেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, তৃণমূল বর্তমানে লুটতরাজের দলে চলে গিয়েছে। দলের পুরোনো কর্মীরা এই মুহূর্তে আর দলে নেই। রাজ্যের সর্বত্র এই চিত্র ফুটে উঠছে। আপাতত তৃণমূল দল পিসি ভাইপোর দল হয়ে উঠেছে বলে কটাক্ষ করেন সুজন চক্রবর্তী। এরপরে সুজন চক্রবর্তী দাবি করেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ। তৃণমূল দল যে আর টিকবে না সে ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন এদিন সুজন চক্রবর্তী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেভাবে তৃণমূল শিবিরের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী দূরত্ব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে, তা কিন্তু আগামী দিনে তৃণমূলকে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করাতে পারে। যথারীতি তৃণমূলের ভাঙ্গনের সুযোগ নিতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত বিরোধী শিবিরগুলি। আর তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত একের পর এক বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষে। আপাতত এই পরিস্থিতিতে বাংলার রাজনীতিতে নতুন কোন চিত্রনাট্য লেখা হয় কিনা এখন সে দিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের।