এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ত্রিপুরাতে কেন্দ্রীয় হারে পাই-পয়সা মিটে গেল সরকারি কর্মীদের, বাংলায় ক্ষোভ আকাশ ছুঁল

ত্রিপুরাতে কেন্দ্রীয় হারে পাই-পয়সা মিটে গেল সরকারি কর্মীদের, বাংলায় ক্ষোভ আকাশ ছুঁল

প্রতিবেশী রাজ্যে ত্রিপুরাতে দীর্ঘ আড়াই দশকের বাম জমানার অবসান ঘটাতে গেরুয়া শিবিরের বড় অস্ত্র ছিল সেই রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ। বাংলার মতোই ত্রিপুরাতেও কেন্দ্রীয়হারে বেতন ও ডিএ না পেয়ে ক্রমশ হতাশা বাড়ছিল সেই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের। যদিও, নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে তৎকালীন ত্রিপুরা সরকার ঘোষণা করে বাড়তি বেতন। কিন্তু তাতেও অখুশি ছিলেন সেই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা।

কেননা, মানিক সরকারের নেতৃত্ত্বাধীন ত্রিপুরা সরকার যে নতুন বেতনক্রম চালু করেছিলেন তাতে করে তাঁদের তৎকালীন বেতন ২.২৫ গুন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, একেবারে কেন্দ্রীয়হারে বেতনক্রম পেতে হলে তা তাঁদের তৎকালীন বেতনের ২.৫৭ গুন হওয়া দরকার ছিল। আর গেরুয়া শিবির সেই ক্ষোভের জায়গাটাই আঁচ করে স্পষ্ট ঘোষণা করে দেয় – রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের কোন পাই-পয়সারও পার্থক্য থাকবে না।

গেরুয়া শিবিরের সেই ঘোষণার উপর আস্থা রেখেছিলেন ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা। ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের গণনার সময় ইভিএম খোলার আগে পোস্টাল ব্যালট গণনা করতে গিয়ে দেখা যায় – সরকারি কর্মচারী দু-হাত উপুড় করে সমর্থন জানিয়েছেন গেরুয়া শিবিরকে। আর তাই, ইতিহাস গড়ে ত্রিপুরার কুর্শি দখল করেই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব তাঁর প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেন – নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়া প্রতিশ্রুতিমত তিনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে বেতন দিতে চান।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

আর তাই, সেই লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করে দেন। সেই কমিটি সময়ের আগেই নিজেদের রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে জমা দেয়। আর এরপরেই কঠিন কাজটি ছিল বিজেপি-সরকারের কাছে, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন – তা জোগাড় করা। আর বাঙালিদের হৃদয়ের উৎসব দুর্গাপুজোর দেবীপক্ষ শুরু হতেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন যে কেন্দ্রীয়হারের বেতনের সঙ্গে কোন পার্থক্য না রাখতে এবার থেকে ত্রিপুরা সরকার সরকারি কর্মীদের বেতন ওই ২.৫৭ গুন হারেই বৃদ্ধি করবে।

ত্রিপুরা সরকারের এই ঘোষণার ফলে একজন গ্রূপ-সি কর্মীর ‘এন্ট্রি লেভেল পে ম্যাট্রিক্স’ দাঁড়াল মাসিক ১৮,০০০ টাকা, অন্যদিকে একজন গ্রূপ-ডি কর্মীর ‘এন্ট্রি লেভেল পে ম্যাট্রিক্স’ দাঁড়াল মাসিক ১৬,০০০ টাকা। তার থেকেও বড় কথা, এই ঘোষণার ফলে একজন পেনশনভোগীর ন্যূনতম মাসিক বেতন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৮,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১,০৭,৪৫০ টাকা। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই দুর্গাপুজোর আগেই এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত খুশির হাওয়া ত্রিপুরার রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে।

অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাজ্যে যখন খুশির হাওয়া তখন বাংলার সরকারি কর্মচারীদের রীতিমত মুখভার। কেননা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের রায়ে ‘নৈতিক জয়’ হিসাবে শুধু পাওয়া গেছে – ডিএ দয়ার দান না, সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য। কিন্তু সেই ডিএর হার কি হবে বা বছরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মত দুবার করে তা পাওয়া যাবে কিনা সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যালে (স্যাট) করা মামলায়। অন্যদিকে, অভিরূপ সরকারের নেতৃত্ত্বাধীন বেতন কমিশনের সময়সীমা শুধুই দীর্ঘায়িত হয়েছে গত তিন বছর ধরে। ফলে, শুধুই বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস বাংলার রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে।

এই প্রসঙ্গে, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য বকেয়া ডিএ ও কেন্দ্রীয়হারে বেতন পাওয়া নিয়ে স্যাটে আইনি লড়াই করা ও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল জানান, বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা যে কেন্দ্রীয়হারে বেতন কাঠামো, মহার্ঘভাতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হন তা আরও একবার প্রমাণিত হল ত্রিপুরায়। তাই পশ্চিমবঙ্গের সরকারী কর্মচারীবন্ধুদের আহবান করছি যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে ন্যায্য দাবীদাওয়া আদায়ের জন্য বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলুন।

দেবাশিসবাবু আরো জানান, সেই আন্দোলন থেকে একটাই বার্তা নবান্নে যাক – হয় রাজ্য সরকারী কর্মচারী সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট উপভোক্তাদের কেন্দ্রীয় হারে বেতন কাঠামো ১ লা জানুয়ারী, ২০১৬ থেকে চালু কর, কেন্দ্রের ঘোষণার দিন থেকে কেন্দ্রের হারে বকেয়াসহ মহার্ঘভাতা প্রদান কর – নয়ত নবান্ন থেকে বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুত থাক। বিজেপির নৈতিক সমর্থনপুষ্ট সরকারী কর্মচারী পরিষদ কর্মচারী আন্দোলনে রাস্তায় আছে, কোর্টেও আছে – উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। আমরা নিশ্চিত আগামীদিনে বিজেপি-নেতৃত্ত্ব আমাদের আন্দোলনকে আরো মদত দেবেন এবং ত্রিপুরার মত এ রাজ্যেও কর্মচারীদের ভরসা যোগাবেন।

দেবাশিসবাবু ত্রিপুরার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ত্রিপুরার পোস্টাল ব্যালট খুলতেই বোঝা গিয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের প্রতিফলন ব্যালটে ঘটে গেছে। আর এই রাজ্যে তো, বর্তমান রাজ্য সরকারের বঞ্চনা প্রতিপদে ঘটে চলেছে এবং কেউ তার প্রতিবাদে সামান্য মুখ খুললেই চলছে ‘বদলি-সন্ত্রাস’। তাই, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্যে বিজেপি-সরকারের এই ঘোষণার পরে – আগামী লোকসভা নির্বাচনে সরকারী কর্মচারীবন্ধুরা, মাননীয় শিক্ষককূল, শিক্ষাকর্মীবন্ধুরা, পেনশন প্রাপ্ত অগ্রজেরা ও তাঁদের পরিবার-পরিজন বিজেপিকে নিরাশ করবেন না এ কথা হলপ করে বলতে পারি । সবমিলিয়ে দুই বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যে – পুজোর আগে দুই ভিন্ন চিত্র, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!