‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ এর ঘাড়ে এবার দিল্লীতে চলতে থাকা বিক্ষোভের দায় চাপালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় December 27, 2019 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জী এবং জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার নিয়ে যত বেশি ব্যাখ্যা হচ্ছে, ততই বেশি পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব উঠে আসছে এবং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা। তিনটি বিষয় নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। শুধু বিরোধীরাই নয়, সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে এই বিভ্রান্তি দূর না করে কেন্দ্রীয় সরকার পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যেই সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে রাজধানী দিল্লি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাই নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রীতিমতো ভৎর্সনা করলেন আন্দোলনকারীদের। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাজধানী দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইন এর বিরোধী আন্দোলনে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, এবার তার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে কংগ্রেস এবং আন্দোলনকারীদের তীব্র ভর্ৎসনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,’দিল্লির ‘টুকরে-টুকরে’ গ্যাংয়ের একটা শিক্ষা হওয়া উচিত। দিল্লির মানুষই তাঁদের সেই শিক্ষা দেবেন।’ অন্যদিকে যেদিন থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়, সেদিন থেকেই গোটা দেশ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হয়েছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিবাদ। দেশজুড়ে পড়ুয়া থেকে বর্ষীয়ান নাগরিক, খেটে খাওয়া মজদুর থেকে রুপালি পর্দার তারকা প্রত্যেকে একসঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছে। বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রত্যেকে গলা মিলিয়েছেন একসাথে। তবে প্রতিবাদ আটকাতে পুলিশের ভূমিকা ছিল দেখার মতন। ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের ফলে গোটা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় 26 জন। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেও পড়ুয়ারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ, ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র বদলের চেষ্টা চলছে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে রাজধানী দিল্লিতে এখনো পর্যন্ত বিক্ষোভের রেশ রয়ে গেছে। সেই বিক্ষোভকে ধামাচাপা দিতে পুলিশকে রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - এদিন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের জন্য যে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দিল্লির হিংসায় বিরোধীদের উসকানি আছে। তারাই জনগণকে ভুলপথে চালিয়েছে। দিল্লির টুকরে-টুকরে গ্যাংয়ের একটা শিক্ষা হওয়া উচিত।’ এই ‘টুকরে-টুকরে ‘ শব্দটি ডানপন্থী শিবিরের প্রচলিত একটি ভাষা। বিরোধীদের আক্রমণ করতে তাঁরা ব্যবহার করেন এটি। তাঁদের শব্দকেই ধার করে এদিন বিরোধীদের নিশানা করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন,’সংসদে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল, সেইসময় কেউ কিছু বললেন না। সংসদ থেকে বেরিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাতে শুরু করে দিলেন।’ প্রসঙ্গত, রবিবার দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেখানে এসে তিনি কংগ্রেস ও শহুরে নকশালদের নিশানা করে অভিযোগ করেন ‘কংগ্রেস ও শহুরে নক্সালরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’ প্রায় একই কথা শোনা গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গলাতেও। তবে এত কিছু বলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে এখনো পর্যন্ত সারাদেশে বিক্ষোভের আগুনকে প্রসমিত করা সম্ভব হয়নি। বরং নিত্যদিন তা বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পুলিঙ্গ ক্রমশ আগ্নেয়গিরির আকার ধারণ করতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত দেশের জনসাধারণকে নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। না হলে জোর করে এই আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপাতত সমগ্র পরিস্থিতিটি নজর রেখেছে দেশের ওয়াকিবহাল মহল। আপনার মতামত জানান -