এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্বে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিবর্তন নিয়ে তুলকালাম দলের মধ্যেই

দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্বে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিবর্তন নিয়ে তুলকালাম দলের মধ্যেই

লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবির পর জেলা সভাপতির পরিবর্তন হলে জেলায় প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আশঙ্কা করেছিলেন একাংশ। তবে এতদিন তা প্রকাশ্যে সেইভাবে দেখা না গেলেও সোমবার জলপাইগুড়ির সমাজপাড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ে জেলা সভাপতির সঙ্গে প্রবল বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা গেল দলেরই বিধায়কদের। মূলত বুথ কমিটির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই প্রকাশ্যে চলে আসল তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল।

সূত্রের খবর, এদিন দলীয় বিধায়ক ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই বৈঠকেই রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় অভিযোগ করেন, দলের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছেন সভাপতি কিষাণ কল্যাণী। অন্যদিকে ব্লক কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় ময়নাগুড়ির তৃনমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীকেও।

পাশাপাশি এদিন জেলা তৃণমূলের সভাপতির অস্বস্তিকে বাড়িয়ে দিয়ে মাল পুর এলাকায় ‘কিষাণ কল্যাণী গো ব্যাক’ পোস্টার পড়েছে। আর এই গোটা ঘটনাকে বিজেপি’র চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন কিষানবাবু। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এদিন দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “আমার দেওয়া ব্লক কমিটির তালিকা আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই বদল করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি। আমাদের মধ্যে এখন কোনও সমস্যা নেই। পরে প্রয়োজনে তিনি ব্লক কমিটিতে আরও লোক নিয়োগ করতে বলেছেন।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্ত দেব অধিকারী বলেন, “যারা বিজেপির হয়ে কাজ করছে তারাই ব্লক কমিটিতে আছে। দল পরিচালনায় সমস্যা হবে তাতে। দলের ঘরের খবর বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” তবে জেলার বিভিন্ন বিধানসভার তৃণমূলের বিধায়করা জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে কিছুটা ক্ষোভ উগড়ে দিলেও দলে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিষাণ কল্যানী।

এদিন তিনি বলেন, “দলের মধ্যে কোনও অনৈক্য নেই। সবার আমাকে ভালো লাগবে এমনটাও বিষয় না। দলের স্বচ্ছ, ঐক্যবদ্ধ সৎ কর্মী দরকার। স্বচ্ছতাই মূলধন করে আমরা এগোতে চাই। সেই লক্ষ্যেই এদিন বৈঠক করা হয়েছে। যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদেরই বুথ স্তরে সভাপতি, সহ সভাপতি করা হবে। সেই খসড়া তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হবে। আর মালবাজারে যারা আমার বিরুদ্ধে পোস্টার দিয়েছে, তারা দলের কেউ না। বিজেপি এই কাজগুলি করছে।” তবে তার বিরুদ্ধে পোস্টার পড়াকে কেন্দ্র করে কিষান কল্যাণী বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুললেও তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির।

এদিন এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সভাপতি দেবাশিষ চক্রবর্তী বলেন, “কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা রাজনীতি করি না। কারও বিরুদ্ধে পোস্টারও আমরা লাগাইনি। কিষাণবিরোধী তৃণমূলের গোষ্ঠীই ওই পোস্টার লাগিয়েছে।” প্রসঙ্গত, পুজোর আগেই বুথ স্তরের খসড়া কমিটি রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জানা গেছে, এই জেলায় ১৮৫৭ টি বুথে তিন সদস্যর কমিটি তৈরী করা হবে। দ্রুত সেই কাজ শুরুর জন্য বিধায়ক সহ নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়। আর সেই বৈঠকেই ব্লক কনভেনার সহ ব্লক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু সেই ব্লক কমিটি নিয়েই এবার ক্ষুব্ধ একাধিক তৃনমূল বিধায়ক। তাদের দাবি, দলীয় সংবিধান অনুয়ায়ী বিধানসভা এলাকার চেয়্যারমান বিধায়ক। বিধায়কই ব্লক কমিটি তৈরী করবেন। নিজের প্যাডে সেই কমিটির নামধাম লিখে জেলা সভাপতির হাতে জমাও দেন তাঁরা। কিন্তু এদিনের জেলা সভাপতির ঘোষণার সঙ্গে সেই তালিকার প্রচুর গরমিল ছিল। কোথাও তাঁদের পছন্দের ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে অন্য ব্যক্তির নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। কোথাও তৃণমূলের ছদ্মবেশে বিজেপি নেতারাও ব্লক কমিটির সদস্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিধায়করা।

আর এই ঘটনায় তুমুল বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হলে বিধায়কদের জবাবী ভাষণ দিতে উঠে বাধা পান জেলা সভাপতি কিষাণ কল্যানী। অভিযোগ, তাঁর ব্যক্তব্যের মধ্যে বাধা দিয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক বলে ওঠেন, দলের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছেন কিষাণবাবু। পরে অবশ্য তার সামাল দিয়ে কিষাণবাবু জানান, একাধিক নেতাদের বিরুদ্ধে কলকাতা থেকে ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁর কাছে। কিন্তু দলের ঐক্য যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি সহজে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সব মিলিয়ে এবার ব্লক ও বুথ কমিটি তৈরি নিয়ে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দলীয় বিধায়করা প্রমান করে দিলেন যে, এখনও জলপাইগুড়িতে গোষ্ঠী কোন্দল অটুট রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!