এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মুখ্যমন্ত্রীর আজকের বক্তব্যের পর শিক্ষক আন্দোলন আরও জোরদার ও ঐক্যবদ্ধ: উস্থি রাজ্য সভাপতি

মুখ্যমন্ত্রীর আজকের বক্তব্যের পর শিক্ষক আন্দোলন আরও জোরদার ও ঐক্যবদ্ধ: উস্থি রাজ্য সভাপতি


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া এক্সক্লুসিভ – সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে ঝড় তুলে দিয়েছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা UUPTWA। রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের দীর্ঘদিনের বকেয়া PRT স্কেলের ন্যায্য দাবি নিয়ে বিকাশ ভবনের অদূরে উন্নয়ন ভবনের সামনে গত ৯ দিন ধরে চলছে আমরণ অনশন কর্মসূচি। যে আন্দোলনের তীব্রতায় কেঁপে গেছে কার্যত গোটা রাজ্য। বিচিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজ, ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক – সকলেই পাশে দাঁড়িয়েছেন অনশনরত শিক্ষকদের।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথমে এই আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও, পরে এই আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মন্তব্য করতে বাধ্য হন। এমনকি গতকাল তিনি উস্থির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসতেও বাধ্য হন। যদিও, সেই বৈঠকের শেষে মেলে নি কোনো সমাধানসূত্র। আর তাই, এখনও অনশন চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এদিকে, আজ ধর্মতলায় ছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বার্ষিক শহীদ দিবসের কর্মসূচি।

সেখানে নিজের বক্তব্য রাখতে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে অস্থির শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে তীব্র শ্লেষে বেঁধেন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, হঠাৎ দেখছি কাজ নেই কর্ম্ম নেই বসে পড়ছে রাস্তায়। সবাই বলছে টাকা দাও, আর কেন্দ্রীয় হারে মাইনে দাও। আমি বলছি যারা কেন্দ্রীয় হারে পেতে চান, তাঁরা কেন্দ্রে চলে যান, দিল্লির চাকরি করুন, আমার কোনো আপত্তি নেই, খুশি হব! রাজ্যে করলে রাজ্যের মত, কেন্দ্রে করলে কেন্দ্রের মত। কেন্দ্রের একটা সিস্টেম আছে, রাজ্যের একটা সিস্টেম আছে।

এই প্রসঙ্গে আমরা উস্থির রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এই প্রসঙ্গে তিনি ও উস্থি সংগঠন কি ভাবছেন তা খোলাখুলি এক্সক্লুসিভলি তিনি জানালেন প্রিয় বন্ধু মিডিয়াকে। প্রশ্ন শুনেই প্রথমেই সন্দীপবাবু জানান, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত সম্পূর্ণ বিষয়টি সঠিকভাবে জানেন না। সঠিক তথ্য না জেনেই বোধহয় উনি এই মন্তব্য করেছেন। কেননা, প্রথমত, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, আমরা নাকি কেন্দ্রীয়হারে বেতন চেয়েছি। আমরা কিন্তু কেন্দ্রীয়হারে বেতন চাইনি।

সন্দীপবাবুর যুক্তি, কেন্দ্রে তো বর্তমানে সপ্তম বেতন কমিশন চলছে, আর আমাদের রাজ্যে পঞ্চম বেতন কমিশন। আমাদের দাবির মধ্যে কোথাও আমরা কেন্দ্রীয়হারে দেওয়ার কথা বলি নি। আমাদের যোগ্যতামান সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে NCTE ঠিক করে দিয়েছে। আমরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছি, সুতরাং সেই NCTE নর্ম মেনে, যেখানে ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়, আমরা আমাদের বেতন সেই নর্ম মেনে চেয়েছি। সুতরাং, কেন্দ্রীয়হারে বেতন চেয়ে আমাদের শিক্ষকদের এই আন্দোলন এই কথাটাই ভুল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সন্দীপবাবু আরও বলেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমাদের নাকি কাজ-কর্ম্ম নেই। এই কথাটিও সঠিক না, মানুষের যখন দেওয়ালে পিঠ থেকে যায় তখনই মানুষ রাস্তায় নামে। আমরাও তাই বাধ্য হয়েই এই আমরণ অনশন কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু, এখানে এতবড় আন্দোলন কর্মসূচি চলা সত্ত্বেও আমরা আমাদের পেশার প্রতি যথেষ্ট দায়বদ্ধ। আন্দোলনের জন্য একদিনের জন্যও কোনো স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ হয় নি, বন্ধ হয়নি মিডডে মিলের খাবার। শিক্ষকরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনশন মঞ্চে এসে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন। গতকাল রাত্রেও ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক এই ধর্ণা মঞ্চের এখানে ছিলেন। এখানকার দুটি লেন ভর্তি হয়ে গিয়েও বহু শিক্ষক বসার পর্যন্ত জায়গা পান নি।

সন্দীপবাবু জানান, রাজ্য সরকার হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। আমরা আমাদের দাবির কথা অভিভাবক ছাড়া আর কাছে জানাবো? আর আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাদপ্তরের কাছে দুরকম কথা শুনলাম। একবার শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, আমাদের দাবি নাকি অন্যায্য, আবার পরে উনি বলছেন, আমার কাছে টাকা থাকলে দিয়ে দিতাম! তাহলে কোন বিষয়টি ঠিক? আমাদের দাবি অন্যায্য হলে, শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয় বলতেন না টাকা থাকলে দিয়ে দিতাম! ওনার এই কথাতেই তো প্রমাণিত, যে আমাদের দাবি যথেষ্ট রকমের ন্যায্য।

রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা নিয়েও যে শিক্ষকরা যথেষ্ট সহমর্মী সেই প্রসঙ্গে সন্দীপবাবুর বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রীর কথা অনুযায়ীই আমাদের দাবি ন্যায্য হওয়া সত্ত্বেও, আমরা কিন্তু কোনো এরিয়ার চাই নি রাজ্য সরকারের কাছে। আমরা শুধু দাবি করেছি, নতুন পে-কমিশনে যাওয়ার আগে, শিক্ষকদের যেন ন্যায্য ‘ফিটমেন্টে’ ফেলা হয়, তারপর পে-কমিশন দেওয়া হয়। কিন্তু, দাবি ‘ন্যায্য’ হলেও যে মুখ্যমন্ত্রী তাতে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন, আজকে তাঁর বক্তব্যেই তো তা স্পষ্ট। এবার তাহলে কি করবেন শিক্ষকরা? কতদিন চলবে এই অনশন?

সন্দীপবাবুর স্পষ্ট উত্তর, আমরা বিশ্বাস করি সব কিছুর সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। ইতিমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ডাকার পরে, আমরা গতকাল ওনার সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। সুতরাং, আমাদের দাবির পক্ষে যে কোন সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমরা কিন্তু নামনীয়ই আছি। কিন্তু, রাজ্য সরকারকেও তো নমনীয়তা দেখাতে হবে। আমাদের অন্যতম দাবি, অন্যায়ভাবে বদলি করা ১৪ জন শিক্ষককে তাঁদের পূর্বতন কাজের জায়গায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের কতক্ষন লাগবে? এর সঙ্গে তো কোনো আর্থিক ব্যাপার জড়িয়ে নেই। ফলে, রাজ্য সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে তো এই দাবি মেনে নিয়েই অনশনকারীদের বার্তা দিতে পারে, যে আমরা পাশে আছি। বাকি দাবিও আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে, একটু সময় দাও।

সন্দীপবাবুর কথা অনুযায়ী, শিক্ষকরা এই মুহূর্তে জেদে ফুটছেন, তাঁরা এর শেষ দেখতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে আমরা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আন্দোলন আরও বেশি জোরদার। একজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর জায়গায় দুজন শিক্ষক আন্দোলনে বসবেন। কিন্তু কোনোমতেই পিছু হঠা চলবে না। আসলে আমরা অনশনে বসার আগেই জানতাম সরকার আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে, ফলে আমরা মানসিকভাবে আরও কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। যতদিন না সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটা সুষ্ঠু সমাধানের কথা জানাচ্ছেন আমাদের এই অনশন চলবে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!