এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারির কড়া জবাব ফিরিয়ে দিলো অনশনকারী শিক্ষক সংগঠন উস্থি, চাপ বাড়ছে সরকারের

শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারির কড়া জবাব ফিরিয়ে দিলো অনশনকারী শিক্ষক সংগঠন উস্থি, চাপ বাড়ছে সরকারের


মহাত্মা গান্ধীর এবছর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী, যা নিয়ে সাজো সাজো রব রাজ্য থেকে কেন্দ্র সর্বত্র। আর সেই গান্ধীজির অমর বাণী ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গের’ থেকেই বোধহয় অনুপ্রাণিত হয়েই বোধহয় এবার রাজ্য সরকারের ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকরা। কেননা, তাঁদের দাবি বস্তুত ‘পিআরটি লেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ – হ্যাঁ, সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেও নিজেদের ন্যায্য পাওনা না পেয়ে এবার আমরণ অনশনের পথ বেছে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা।

আর এই আন্দোলন নিয়ে কি রাজ্য সরকার এবার রীতিমত চাপে পরে গেল? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেননা, রাজ্য সরকার বারবার দাবি করে এই সরকার মা-মাটি-মানুষের সরকার অর্থাৎ অত্যন্ত মানবিক সরকার। কিন্তু, নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে সহমর্মিতা দেখানোর বদলে, পানীয় জল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনে হাজার হাজার শিক্ষিকা থাকলেও নেই কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা! যেটি ছিল, সেটিও নাকি এখন আর ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না!

তবে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এইভাবে তো আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না! শিক্ষকদের এই আন্দোলন এখন বস্তুত গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যত বাধা আসবে, এই আন্দোলন তত বেশি দানা বাঁধবে। নিজেদের হকের পাওনা পেতে – অনেক আবেদন-নিবেদন-আলোচনা হয়েছে! কিছুতেই যখন কোনো কাজ হয় নি, তখনই শুরু হয়েছে এই মরণপণ লড়াই। সুতরাং, সেই লড়াইয়ের পথ যে সহজ হবে না, তাতো জানা ছিলই, তা জেনেই তো এই লড়াইয়ে নামা। ইতিমধ্যেই অনশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা, কিন্তু তবুও লড়াই চলছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর এরপরেই রাজ্য সরকারের উপর চাপ যে কি পর্যায়ে গেছে তা শিক্ষামন্ত্রীর আক্রমণাত্মক সাংবাদিক বৈঠকই প্রমান দিচ্ছে। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির কোনো উত্তর বোধহয় তাঁর কাছে নেই, আর তাই চাপের খেলা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো সাংবাদিক বৈঠক তাঁকে করতে হয়েছে বলেও গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনশনের তৃতীয় দিনে এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গতকাল বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, আমি আপনাদের খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁরা (শিক্ষকরা) বসে আছেন (অনশন করছেন) তাঁরা অকারণে বসে আছেন ৷ আপনাদের (সাংবাদিকদের) দিকে তাকিয়ে আছে, যাতে আপনারা কতটা খবর করবেন। প্রাইমারি টিচারদের গ্রেড পে নিয়ে যে একটা একটা অসন্তোষ আছে, সেটা সমাধান করব ৷

তিনি আরও বলেন, ২১ শে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের পরে এই মাসেই কোনও একদিন নজরুল মঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষকদের ডেকে তাঁদের বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনার টেবিলে না বসে, ওঁরা মনে করছেন রাস্তায় বসলেই সরকার চাপে পরে যাবে! ওঁদের মনে হচ্ছে যে, একটু দিচ্ছি আরও একটু যদি সরকারকে টাইট দেওয়া যায়! স্কুল কামাই করে যাঁরা আন্দোলনে বসছেন, তাঁদের কিন্তু এর জন্য যদি কোনো ছুটি না থাকে, তাহলে কোন ছুটি অ্যাডজাস্ট হবে না ৷ যাঁরা ছাত্রদেরকে না পড়িয়ে দিনের পর দিন নানা ধরনের আন্দোলন করছেন, স্কুল কামাই করেছেন, তাঁদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি, ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে কাজে ফিরুন।

শিক্ষামন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির কড়া জবাব দিলেন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ।এদিন সংগঠনের তরফ থেকে বলা হয় শিক্ষামন্ত্রী এইভাবে যত তাদের অবজ্ঞা করবেন তাঁদের আন্দোলনে যোগদানকারীর সংখ্যা তত বাড়বে। সরকার ভুল করছে।উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোর কমিটির সদস্য চন্দন চট্টোপাধ্য়ায় এই বিষয়ে বলেন, “অনশন যেমন চলছিল তেমনই চলছে । 18 জন অনশন মঞ্চে রয়েছেন । অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে ।এভাবে আমাদের আন্দোলনকে দমানো যাবে না । উনি বিবৃতি দেওয়ার পরই আমাদের আন্দোলনে শিক্ষক সংখ্যা বেড়ে গেছে । উনি যত এই ধরনের আজেবাজে মন্তব্য করবেন, তত আন্দোলনকারীর সংখ্যা বাড়বে । উনি বেশি বেশি বেতন কাটবেন । এর থেকে বেশি কিছু তো হতে পারে না । এমনিতেই কম বেতন পাচ্ছি, কেটে নেবেন আরও ।”

এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তিনি কোনও উস্থি বা কুস্তি জানেন না । তিনি সব প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গেই একটি বৈঠক করবেন । কারও সঙ্গে আলাদা করে বসবেন না । এই বিষয়ে উস্থির বক্তব্য, “পুলিশের থেকে অসমর্থিত সূত্রে আমাদের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে বসতে বলা হয়েছিল । কিন্তু আমরা শিক্ষামন্ত্রীর থেকে নিচু স্তরের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নই । আমরা কোনও রুদ্ধদ্বার বৈঠকও চাইছি না । রুদ্ধদ্বার বৈঠক হতে পারে যদি অবিলম্বে 14 জনের ট্রান্সফার অর্ডার বাতিল করা হয় । তাহলে আমরা বুঝব সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে । সেটা না করে শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন এবং ভুল করছেন । আমাদেরকে এখনও পর্যন্ত বৈঠকের কথা কিছু জানায়নি । যদি জানায় তাহলে চিন্তাভাবনা করব ।”এর ফলে শিক্ষমন্ত্রীর হুশিয়ারিতে যে ভয় পেয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হাটছেন না তা স্পষ্ট করে দিলেন উস্থি সংগঠন।

এদিকে রাজনৈতিকমহলের মতে, এর ফলে চাপ বাড়লো তৃণমূল সরকারের। কেননা একে লোকসভা ভোটে ফল খারাপ হয়েছে তৃণমূলের, ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে আর এর মাঝেই রাজ্যের শিক্ষককূলের এহেন আন্দোলন চাপ বাড়ালো সরকারের। যদিও সরকার ধমক হুঁশিয়ারি দিয়ে এখানেই আন্দোলনকে থামাতে চেয়েছিলেন কিন্তু সংগঠনের তরফ থেকে পাল্টা হুশিয়ারিতে সেটা যে পুরোপুরি ফ্লপ হলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিকে জোর করে আন্দোলন ভাঙতে গেলে ভোট ব্যাংকে প্রভাব পড়বে ফলে সব মিলিয়ে সরকারের কাছে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এখন কি পদক্ষেপ নেয় সরকার তার অপেক্ষায় শিক্ষককুল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!