এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > উত্তরবঙ্গ এখনও বিজেপির গড় নাকি জমি ফিরে পেয়েছে তৃণমূল – প্রমাণ হয়ে যাবে কয়েক মাসের মধ্যেই?

উত্তরবঙ্গ এখনও বিজেপির গড় নাকি জমি ফিরে পেয়েছে তৃণমূল – প্রমাণ হয়ে যাবে কয়েক মাসের মধ্যেই?

 

লক্ষ্য 2021 সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু উত্তরবঙ্গে যেখানে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে কার্যত মুছে সাফ হয়ে গেছে তৃণমূল কংগ্রেস, আর সম্পূর্ণ উত্তরবঙ্গে রীতিমতো চাষ হয়েছে পদ্মফুলের, সেইখানে কিন্তু আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কে বেশি শক্তিশালী! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জবাবটা পাওয়া যাবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভা নির্বাচনেই।

কারণ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, আগামী 2020 সালের মাঝামাঝিতে হতে পারে পৌরসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার, ডালখোলা ও বালুরঘাট পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গের এই 3 পৌরসভায় বর্তমানে প্রশাসক বসিয়ে কাজকর্ম চালানো হচ্ছে।

অপরদিকে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, তুফানগঞ্জ, জলপাইগুড়ি, মাল, ইসলামপুর, কালিয়াগঞ্জ, গঙ্গারামপুর, ইংলিশবাজার, পুরাতন মালদা ইত্যাদি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে 2020 সালে। কাজেই সেই সমস্ত পৌরসভাগুলিতেও নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। আর 2021 সালের আগেই এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ মিলবে রাজনৈতিকভাবে কে কতটা শক্তিশালী!

একদিকে যেমন তৃণমূল কংগ্রেস আর ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে শক্তি পরীক্ষণ হয়ে যাবে, অন্যদিকে তেমনই উত্তরবঙ্গ জুড়ে বাম কংগ্রেসের অস্তিত্ব আছে কিনা, তারও প্রমাণ মিলবে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে লড়াই আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটিতে ভারতীয় জনতা পার্টি যুক্ত হলেও, সদ্যসমাপ্ত কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচন যেখানে 57 হাজার ভোটে লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এগিয়ে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি, সেখানে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কামব্যাক করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

যার কারণে উত্তরবঙ্গ তৃণমূল ফিরে পাচ্ছে, এই রকম জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। আবার সাতটি আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির জয়যুক্ত হলেও, মালদহে একটি আসনে কিন্তু জয়যুক্ত হয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস। কাজেই তাদের পক্ষেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উত্তরবঙ্গের পৌরসভা নির্বাচন। উত্তরবঙ্গ জুড়ে জামানত জব্দ হলেও, বরাবরই শিলিগুড়ি লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান রাজ্যে যেখানে কার্যত রক্তক্ষরণ হতে হতে রক্ত শূন্য হয়ে পড়েছে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির, সেখানে উত্তরবঙ্গের রাজধানী বলে খ্যাত শিলিগুড়ি পৌরসভায় কিন্তু নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বামফ্রন্ট।

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সিপিএমের তরফ থেকে সেইখানে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। কাজেই অন্ততপক্ষে আগামী দিনে পৌরসভার নির্বাচন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কাছেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এককভাবে লড়াইয়ের জায়গায় যে কংগ্রেস নেই, তা ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তাদের নেতৃত্বের বক্তব্যের মাধ্যমে। তাই আগামী পৌরসভা নির্বাচনে তারা যৌথভাবে লড়াই করবে, তা বলাই বাহুল্য। তবে পৌরসভায় জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী রয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিন এই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এনআরসি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে মানুষের অধিকার হননের চেষ্টা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বিধানসভা নির্বাচনের মতো আগামী পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপিকে উপযুক্ত জবাব দেবে আমজনতা।” পাশাপাশি পৌরসভার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান রবীন্দ্রনাথবাবু।

কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির সাংগঠনিক শক্তি লোকসভা নির্বাচনের পরে অনেকটাই খর্ব হয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। কারণ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ জুড়ে অভূতপূর্ব জয়ের পরেও সংগঠন নিয়ে তাদেরকে বেশি কার্যকর থাকতে দেখা যায়নি। যার জেরে উত্তরবঙ্গের চা বাগান থেকে শুরু করে অন্যান্য জায়গার শ্রমিক এবং গণসংগঠনগুলি ক্রমশ হাতছাড়া হয়ে গেছে গেরুয়া শিবিরের।

শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে যে সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ সদস্য ও পৌরসভার সদস্যরা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছিল, তারাও ধীরে ধীরে নিজেদের ঘরে অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে এসেছে। এমতাবস্থায় পদ্মফুল শিবিরের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ আগামী পৌরসভা নির্বাচন। গোদের উপর বিষফোঁড়া এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।

ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে শুরু করে গ্রামবাংলা পর্যন্ত প্রচার অভিযান শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে তৃণমূলের তুলনায় ভারতীয় জনতা পার্টির সংশোধিত নাগরিক আইনের স্বপক্ষে প্রচার যে যথেষ্ট পরিমাণ ধীরে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে গতকাল কলকাতা শহরের বিজেপির মিছিলে জনসমুদ্র আছড়ে পড়ার পরে বর্তমানে কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

কিছু কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় জনতা পার্টি বাড়ি বাড়ি প্রচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সুফল সম্পর্কে মানুষকে বোঝাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মোর্চাকে তারা সামনের সারিতে এনেছে। এদিন এই প্রসঙ্গে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলী হোসেন বলেন, “তৃণমূল নেত্রী পৌর ভোট করবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গে পুরভোট নিয়ে আমরা প্রস্তুত। প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হয়েছে।”

পাশাপাশি নাগরিক আইন নিয়ে অপপ্রচার করে তৃণমূল কংগ্রেস কিছু করতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সংখ্যালঘু সেলের ওই নেতা। তবে পুরভোটের প্রস্তুতির দিক থেকে অবশ্য পিছিয়ে নেই কংগ্রেস এবং বামপন্থীরাও। এনআরসি এবং নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় যৌথ মিছিল করতে দেখা গেছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসকে।

সবকিছু মিলিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলি যে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগামী পৌরসভা নির্বাচনকে সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছে, তাই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই সেমিফাইনালে শেষ পর্যন্ত কে জয়যুক্ত হবে! সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মিলবে ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর। তবে তার আগে এখন সমগ্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নজর থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!